সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি’ মানছে না কেউ

লকডাউন শিথিলে মানিকছড়ি’র কাঁচা বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার বেসামাল ভীড়

fec-image

করোনা’র প্রভাবে দীর্ঘ দু’মাস মানুষজন গৃহবন্দি থাকায় সরকারি বিধি-নিষেধে হাঁট-বাজারে জনসমাগমে ভীড় তেমন ছিল না। সম্প্রতি লকডাউন শিথিল হওয়ায় মানিকছড়ির ঐতিহ্যবাহী কাঁচাবাজার তিনটহরীতে পাইকার ও বিক্রেতার পদচারণা বেড়েছে বহুগুনে। ফলে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি চরমভাবে লঙ্গিত হচ্ছে। জনপদে বাড়ছে করোনা’র ঝুঁকি!

ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা-জরিমানা করেও গণজমায়েত বা বেসামাল ভীড় ঠেকানো যাচ্ছে না।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মানিকছড়ির সর্বত্রই এবার শাক-সবজি, মৌসুমি ফল-ফরাদির ভাল ফলন হয়েছে। পুরো উপজেলার প্রান্তিক কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য সহজে ও ন্যায্যমূল্যে বাজারজাত করতে প্রতিনিয়ত জমায়েত হন উপজেলা তথা জেলার ঐতিহ্যবাহী তিনটহরী কাচাঁ বাজারে। সমতলের পাইকার ও খুচরা ক্রেতারা পণ্যপরিবহন সুবিধা জেনে এ জনপদের মালামাল কিনতে উপচেপড়া ভীড় জমায় এখানে।

করোনা’ প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকার গত দু’মাস দেশে লকডাউন ঘোষণা ফলে মানুষজন গৃহবন্দি থাকায় হাঁট-বাজারে লোকসমাগম কম থাকলেও চলতি জুন মাসে লকডাউন শিথিল করায় আবারও সর্বত্র জনসমাগম বেড়েছে। মানিকছড়ি তথা জেলার এই প্রসিদ্ধ কাঁচা-বাজারে এখন পূর্বের ন্যায় প্রতিদিন সকালে অন্তত গড়ে ১২/১৫ হাজার ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় মূখর।

শাক-সবজি ও মৌসুমি ফলের শোডাউনে ক্রেতা-বিক্রেতার ভীড়ে ‘করোনা’ ঝুঁকি বাড়ছে এখানে। ফলে বৈশ্বিক মহামারি‘করোনা’র প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বাধ্যবাধকতার বালাই নেই এখানে! পদে পদে লঙ্ঘন হচ্ছে নিয়ম-নীতি।

বুধবার (৩ জুন) সকাল সাড়ে ৮-৯টায় পর্যন্ত বাজারে অবস্থানকালে দেখা গেছে, ক্রেতা-বিক্রেতার জনস্রোত ও গণজোয়ার! চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকা জুড়ে হাজার হাজার বিক্রেতা তাদের উৎপাদিত ফল-ফলাদি, শাক-সবজি, তরু-তরকারী নিয়ে বাজারে পসরা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর সমতল থেকে আগত পাইকাররা মালামাল ক্রয়ে দিক-বেদিক ছুঁটাছুঁটি করছে। যেখানে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি’র বালাই নেই! এতে ‘করোনা’ সংক্রমণের সম্ভাবণা জাগিয়ে তুলছে জনমনে!

এই ‘করোনাভাইরাস বিস্তারকালে এ বাজারে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণে ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট একাধিকবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে।

এছাড়া প্রতিদিন বাজার চলাকালে পুলিশ মোতায়েন করে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় চেষ্টা করা হচ্ছে। এতেও সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি’র বালাই মানছে না কেউই!

এ প্রসঙ্গে তিনটহরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মো. আতিউল ইসলাম বলেন, বৈশ্বিক মহামারি ‘করোনাভাইরাস’ প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই।

কিন্তু খাগড়াছড়ি জেলা তথা মানিকছড়ি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এই বাজারে প্রতিনিয়ত যে হারে ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম হয়। তাতে এই মূহূর্ত্বে ‘করোনা’র প্রচুর ঝুঁকি রয়েছে ! তাই দ্রুত এই বাজারটি অন্যত্র সরানোর উদ্যোগ নেওয়া জরুরী। প্রয়োজনে আমার স্কুল মাঠ ব্যবহার করা যেতে পারে। বাজার সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম সরকার বলেন, বাজারে অনেক জায়গা খালি আছে।

কিন্তু উন্নয়ন না থাকায় সেই জায়গাগুলো পরিত্যক্ত। ফলে সেখানে ক্রেতা না বসে সবাই সড়কে বসতে চায়। যার কারণে গণজমায়েত/বেসামাল ভীড় সৃষ্টি হয়। প্রতিদিন ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় চেষ্টা করেও সফল হতে পারছি না। মানুষের মাঝে সচেতনতার অভাবই এর জন্য দায়ী।

এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তামান্না মাহমুদ বলেন, জনপদে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় নিয়মিত মোবাইল কোর্টে সাজা ও জরিমানার পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টির কাজ চলছে। প্রতিনিয়ত বাজারের জনসমাগম ঠেকাতে বাজারটি অস্থায়ীভাবে অন্যত্র সরানোর বিষয়ে বাজার কমিটিকে নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস, মানিকছড়ি, লকডাউন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন