parbattanews

লক্ষীছড়ির দুর্গম পাহড়ের আয়ের উৎসে ঝাঁড়ুফুল

খাগড়াছড়ি জেলার অনুন্নত উপজেলা লক্ষীছড়ির প্রত্যন্ত ও অনুন্নত জনপদে থাকা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মানুষের নির্ধারিত আয়-রোজগারের ব্যবস্থা নেই। তাঁরা মৌসুমী ও জুম চাষের ফসল এবং প্রাকৃতিক সম্পদ গাছ, বাঁশ, বুনো ফুল বা ঝাঁড়ুফুল বাজারজাতে উপার্জিত আয়ে পরিবারের ভরণপোষণের মূল উৎস। শীতের এই সময়ে হাট-বাজারে শুধু ঝাঁড়ুফুল বিক্রি করে অনেকে সংসারে সুখ খুঁজছেন। অনুন্নত জনপদের বাজারে প্রতি আঁটি ঝাঁড়ুফুল  ৫’শ টাকা এক হাজার টাকায় বিক্রি।

বার্মাছড়ি মুখপাড়া, বৈদ্যপাড়া, বেতছড়ির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী উমাপ্রু মারমা, উক্রই মারমা ও আনুমং মারমা, অনিল চাকমাসহ অনেকে গত মঙ্গলবার ঝাঁড়ুফুলের আঁটি নিয়ে বার্মাছড়ি বাজারে আসেন। মাঝারী ও বড় আঁটি গড়ে ৫০০-১০০০ টাকায় বিক্রি করেন। যা উপজেলা সদরে বিক্রি দ্বিগুন। বিশেষ করে রাঙ্গামাটির কাউখালি ও মানিকছড়ি থেকে পাইকারেরা এই দুর্গম জনপদে এসে জুমের কাঁচা শাকসবজি, ফলমূল ও বুনো ফুল বা ঝাঁড়ুফুল কিনে নেন।

এ সময় উক্রই মারমা বলেন, আমরা জঙ্গল থেকে এই ঝাঁড়ুফুল কুঁড়িয়ে এনে বাজারে বিক্রি করি। এখানকার বনে-জঙ্গলে অনেক ফুল পাওয়া যায়। প্রতিদিন ছেলে- মেয়ে নিয়ে ফুল সংগ্রহ করি। প্রতি মৌসুমে ১৫/২০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করতে পারি। অনিল চাকমা বলেন, শুধু আমরা কেন এখানকার বেশির ভাগ মানুষ জুম চাষ, বনের গাছ-পালার লাকড়ি, ফুল, কলা বিক্রিতেই জীবন চলে। জমি কম থাকায় সবাই জুম ও বন নির্ভর আয় খোঁজার চেষ্টা করেন।

এ সময় সাবেক জনপ্রতিনিধি নীলবর্ণ চাকমা ও সমাজসেবক ধীমান চাকমা (ছন্দ নাম) বলেন, এখানকার বেশিরভাগ মানুষ দরিদ্র সীমার নীচে বসবাস। তাঁদের নির্দিষ্ট আয় বলতে নেই। জুম চাষ আয়ের প্রধান উৎস। ফলে শীত মৌসুমে বনের এসব ঝাঁড়ুফুল বিক্রিতে প্রচুর টাকা আয় হয়। অনেকের বাৎসরিক আয়ের বড় একটা অংশ এই ঝাঁড়ুফুল বিক্রি থেকে আসে। গহীন জঙ্গল ও পাহাড়ের চুড়াবেয়ে আসা ছড়া বা খালের পাড় থেকে এই ঝাঁড়ুফুল কেটে আঁটি বেঁধে বাজারে এনে বিক্রি করেন। প্রতি রোববার উপজেলা সদরে সাপ্তাহিক হাটে এই ঝাঁড়ুফুলের কদর বেশি। কিন্তু এই দুর্গম জনপদ থেকে গড়ে ১৫ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে বাজারে পণ্য নেওয়া খুব কষ্টকর। তবুও পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্নে অসাধ্য সাধন করতে হয় অনেকের ।

প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারে (সরকারী উপকারভোগী ব্যতিত) বেঁচে থাকার স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে উঠছেন অনুন্নত এলাকার মানুষজন। এদিকে গত রোববার উপজেলা সদর লক্ষীছড়ি বাজারে অন্তত অর্ধশত ঝাঁড়ুফুল বিক্রেতাকে ফুল বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে এ বাজারে ফুলের চাহিদ বেশি।

বাজার থেকে পারিবারিক প্রয়োজনে ফুল ক্রেতা ডা. দ্বিপন কর্মকার বলেন, পাহড়ের এই ঝাঁড়ুফুল সমতলে চাহিদা বেশি। গৃহ পরিস্কার পরিছন্নের পাশাপাশি নতুন ভবনে রং কাজে এই ঝাঁড়ুফুল ব্যবহারে সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয় বিধায় এর চাহিদার ঘাটতি হচ্ছে না। কিন্তু প্রতিনিয়ত বন- জঙ্গল যেভাবে কাটা হচ্ছে,তাতে এই ঝাঁড়ুফুল দিন দিন হারিয়ে যাওয়ার পণ্যে পরিনত হওয়ার আশংকা রয়েছে।

লক্ষীছড়ি বনবিভাগের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জার মো. আবদুল গফুর চৌধুরী বলেন,পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠা এই ঝাঁড়ুফুল মানুষের নিত্যপ্রয়োজনী ঘরোয়া পণ্য হিসেবে স্বীকতি পেয়েছে। বনবিভাগ সব সময় এই ঝাঁড়ুফুল গাছ রক্ষার জন্য মানুষজনকে পরামর্শ প্রদান করেন।

Exit mobile version