parbattanews

লক্ষ্মীছড়িতে স্বামীসহ ৩জন মিলে ধর্ষণ: সামাজিক মিমাংসায় স্বামীর ঘরে ফিরল গৃহবধূ

Followup-Logo2
মোবারক হোসেন, লক্ষ্মীছড়ি:
খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় স্বামীসহ আরো ২ বন্ধু মিলে এক গৃহবধূ ধর্ষিত হওয়ার ঘটনা অবশেষে সামাজিকভাইে মিমাংসা হয়েছে বলে একাধীক সূত্রে জানা গেছে। এই নিয়ে বিভিন্ন অনলাইন ও স্থানীয় অন্যান্য পত্রিকায় সংবাদ প্রচারিত হয়। গত মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) মহিষকাটা এলাকায় দ্বিতীয় দফা শালিসী বৈঠকে এ মিমাংসা হয়।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বাদী-বিবাদী কারো আর নতুন করে বক্তব্য গ্রহণ না করে অভিযুক্ত স্বামী মোমিন উদ্দিন তার স্ত্রীকে ঘরে তুলে নেয়ার সিদ্ধান্তে সকল অভিযোগের অবসান ঘটে, সেই সাথে শালিসী বৈঠকের উপস্থিত বিচারকরা এ নিয়ে আর বাড়াবাড়ি না করার অনুরোধ জানান।

এদিকে বৈঠক শুরুর দিকে স্বামী মোমিন উদ্দিনকে ৩লাখ টাকার নতুন করে কাবিন নামা লেখা, স্ত্রীর নামে ৩ একর জমি লিখে দেয়া, দ্বিতীয় অভিযুক্ত বন্ধু আব্দুল কুদ্দুসকে ৮০হাজার টাকা এবং সবশেষ অভিযুক্ত মো: ফারুক হোসেনকে ২০হাজার টাকা জরিমানা করার কথা হলেও পরে সামান্য বিতর্ক সৃষ্টি হলে বিচারকরা অনেকেই শালিসী বৈঠক ত্যাগ করে। পরে মোমিন উদ্দিনের মা-বাবার ৫০টাকা ননজুডিশিয়াল স্টাম্প লিখে অঙ্গিকারের ভিত্তিতে স্বামীর ঘরে তুলে দেয়া হয়।

এ বিষয়ে শালিসী বৈঠকে উপস্থিত থাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: বিল্লাল হোসেন ব্যাপারী এ প্রতিনিধিকে জানান, আমরা আসলে কারো বিচার করতে বসিনি মানবতাটাকে প্রাধান্য দিয়েছি। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক যাতে নষ্ট না হয় সেটির প্রতি জোর দিতে গিয়েই এমনটি করা হয়েছে। কারো প্রতি অন্যায় করা হয়েছে বলে আমি মনে করিনা, এটি ষড়যন্ত্র বলেই তার অভিমত।

৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো: শাহজাহান শেখ বলেন, কিছু সময়ের জন্য আমি বিচারে ছিলাম। যা করলে সবার জন্য ভাল হয় সেই সিদ্ধান্তটিই নেয়া হয়েছে। কয়েকটি অনলাইন ও দৈনিক পত্রিকার সংবাদকর্মী ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা বৈঠকে উপস্থিত থাকলেও তারা ছিলেন অনেকটা অসহায়।

লক্ষ্মীছড়ি থানার অফিসার্স ইনচার্জ মো: মিজানুর রহমান বলেন, এসব ঘটনা সামাজিকভাবে মিমাংসার কোন সুযোগ নেই। তবে থানায় এ ব্যাপারে লিখিত কোন অভিযোগ আসে নাই বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, গত ২৬ এপ্রিল মহিষকাটা এলাকার মো: শাহজাহান বিশ্বাসের ছেলে মো: মমিন উদ্দিন স্ত্রী নাজনিন(ছদ্দ নাম) চট্টগ্রাম থেকে জরুরি ভিত্তিতে বাড়িতে আসার জন্য মোবাইলে খবর দিয়ে আনার পর সমুড় পাড়া ভান্ডার শরীফ খামার বাড়ি নির্জন এলাকায় গভীর রাতে জোরপূর্বক পেয়ারা বাগানে নিয়ে মুখ বেঁধে পালাক্রমে প্রথমে স্বামী মমিন উদ্দিন, পরে নাজেম জমাদ্দার’র ছেলে আব্দুল কুদ্দুস(২৮) ও সব শেষে আস্তফা মোল্লার ছেলে মো: ফারুক হোসেন(২২) পালাক্রমে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ ওঠে। পরে ওই রাতেই বাড়ি না এনে মুমূর্ষু অবস্থায় ফটিকছড়ি একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়।

কিছুটা সুস্থ হয়ে মাহিষকাটা এলাকায় আসলে এ ঘটনা ফাঁস হয় যায় এবং ১৫ মে সন্ধ্যায় একটি গ্রাম্য শালিস বসলেও বিচারে মোমিন উদ্দিন অনুপস্থিত থাকায় কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। ওই বেঠকে ফারুক হোসেন পুরো ঘটনা উল্লেখ করে স্বীকারোক্তিমূলক লিখিত বক্তব্য দিয়েছিল উপস্থিত সকলের কাছে। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। শুরু থেকেই বিষয়টি এক ধরণের ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলে। এ নিয়ে অবশ্য সারা বছর যে সকল নারী সংগঠন সভা সেমিনারে নারী নির্যাতন ও হয়রানীর বক্তব্য দিয়ে থাকেন এ ক্ষেত্রে অনেকটা নিরবতা পালন করতে দেখা গেছে।

লক্ষ্মীছড়িতে স্বামীসহ ৩ জন মিলে ধর্ষণ

Exit mobile version