Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

লটকন বদলে দিতে পারে পাহাড়ের অর্থনীতি

21.06.2016_Lotkon NEWS Pic (6)

সিনিয়র রিপোর্টার:

এক সময় পাহাড়ের ঢালুতে আর খালের পাড়ে বনজ ফল লটকন চোখে পড়লেও সময়ে ব্যবধানে পাহাড়ের বিভিন্ন জনপদে দিনের পর দিন ব্যাপক হারে চাহিদা বাড়ছে টক-মিষ্টি‘র ফল লটকন। সময়ের সাথে পাঁল্লা দিয়ে স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে দেশের সমতলের বিভিন্ন জেলায় লটকন‘র ব্যাপক চাহিদা তৈরী হয়েছে।

তবে পাহাড়ে আম লিচু বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদে এগিয়ে থাকলেও পিছিয়ে আছে লটকন। আম লিচু চাষে পরিচর্চাসহ মোটা অঙ্কের পুজি লাগলেও লটকন ফলে কোন পুঁজি বা পরিচর্চার প্রয়োজন হয় না। ফলে কম পরিশ্রম আর পুঁজিতে অধিক আয়ের সুযোগ করে দিতে পারে লটকন ফল।

স্থানীয় বাঙালীরা লটকন নামে চিনলেও চাকমা ভাষায় পচিমগুল, মারমা ভাষায় ক্যানাইজুসি, ত্রিপুরা ভাষায় খুচমাই নামে পরিচিত সুমিষ্ট লটকন। ইংরেজীতে বার্মি গ্রাফ নামে পরিচিত লটকনের বৈজ্ঞানিক নাম বিকউরিয়া রেমিফলরা

জুন মাসের মাঝামাঝি পরিপক্কতা লাভ করতে শুরু করে লটকন। একই সময়ে বাজারেও আসতে শুরু করে ফলটি। এটি নিয়মিত ফলদানকারী উচ্চ ফলনশীল কৃষি পণ্য। গাছের গোড়া থেকে শুরু করে প্রতিটি ডালে থোকায় থোকায় ঝুলতে দেখা যায় লটকন ফল। টক মিষ্টির লটকন ছোট বড় সকলের কাছেই প্রিয়।

পার্বত্য খাগড়াছড়ির প্রতিটি জনপদেই অপরিকল্পিত ভাবে কমবেশী লটকনের উৎপাদন হচ্ছে। লটকন চাষের জন্য পার্বত্য অঞ্চলের মাটি অনেক বেশী উপযোগী বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। তাদের মতে থোকা থোকা সোনালি রংয়ের এ ফল খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি দেখতেও সুন্দর।

স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পার্বত্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা, রামগড়, দীঘিনালা, গুইমারা ও পানছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলায় অপরিকল্পিত ভাবে স্বল্প পরিসরে ব্যক্তি উদ্যোগে লটকনের চাষাবাদ হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে লটকনের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। বর্তমানে এটি স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সম্প্রতি খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির আঙিনা আর পাহাড়ের ঢালুতে গাছে গাছে ঝুলছে লটকনের সোনালী রঙয়ের থোকা। মাটিরাঙ্গার নবীনগর গ্রামের মো. চান মিয়া‘র বাড়ির পাশেই পাহাড়ের ঢালুতে মাঝারি আকারের প্রায় অর্ধশতাধিক লটকন গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছে লটকনের ব্যাপক ফলন হয়েছে। বিগত বছরের তুলনায় এ বছর লটকনের ফলন কম হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন ফলন কম হলেও বিনা প্ররিশ্রমে তা খুব কম নয়। তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, ইতিমধ্যে স্থানীয় পাইকাররা লটকন ফল কিনতে আসতে শুরু করেছেন। দাম দরও জানতে চাইছেন। এক একটি গাছের লটকন তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবেন বলেও জানান তিনি।

কথা হয় দুর্গম পাহাড়ী পাড়া তৈাকাতাং থেকে মাটিরাঙ্গা বাজারে লটকন ফল বিক্রি করতে আসা অনিল বিকাশ ত্রিপুরার সাথে। তার বাড়ির আশে পাশে অন্তত: ৩০টি গাছে লটকন ফল ধরেছে দাবি করে বলেন, এবছর লটকন ফল বিক্রি তেকে তিনি লাখ টাকা আয় করবেন। স্থানীয় বাজার মুল্যেও সন্তুষ্ট লটকন চাষী অনিল বিকাশ ত্রিপুরা।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তরুন ভট্টাচার্য জানান, পার্বত্য খাগড়াছড়ির প্রায় সকল উপজেলাতেই ব্যাক্তি উদ্যোগে কম-বেশী লটকন চাষ হচ্ছে। লটকনের ফলনও ভালো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অধিক পরিমাণে গাছপালা ও ছায়া থাকায় পাহাড়ী এলাকার মাটি লটকন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। কম পুজি ও কম পরিশ্রমে বেশি লাভবান হওয়ায় কৃষকরা লটকন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে বলেও মনে করেন তিনি।

সরকারিভাবে লটকন ফলকে পরিচিত করার দাবি জানিয়ে স্থানীয় চাষীরা বলেন, এখনও আমাদের দেশের অনেক জেলায় এ ফলটির সঙ্গে মানুষের পরিচয় হয়নি। সরকারি উদ্যোগে দেশ বিদেশে টক মিষ্টি‘র সুস্বাদু এই ফলটির গুণাগুণ তুলে ধরে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা করলে হয়তো বিশ্ব বাজারে নিজের জায়গা করে নিবে লটকন ফল। আর বিদেশে রপ্তানি করে মোটা অঙ্কের রাজস্ব আয় করা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে ঘুরে দাঁড়াতে পারে পাহাড়ী এ জনপদের অর্থনীতির চাকা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন