Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

লামায় পাহাড় ধসে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৬, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি (আপডেট)

Bandarban pic-2, 1.8

স্টাফ রিপোর্টার:
টানা ১০দিনের ভারি বর্ষণে বান্দরবানের লামায় পাহাড় ধসের ঘটনায় শিশু’সহ ৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত অবস্থায় মাটির চাঁপা থেকে ২ জনসহ চরজনকে জীবিত উদ্ধার করে লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

শনিবার মধ্যরাতে হাসপাতাল পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা জানায়, জেলার লামা পৌর এলাকার হাসপাতাল পাড়ায় শনিবার রাত দেড়টার দিকে বিকট শব্দে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। টানা ১১ ঘণ্টা উদ্ধার অভিযান চালিয়ে শিশু’সহ ৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

নিহতরা হলেন, সাগর আহম্মেদ পুতু (১৪) সাজ্জাদ হোসেন (৪), আমেনা বেগম (২৬), রোজিনা আক্তার (২৫)।

ফায়ার সার্ভিসকর্মী ও স্থানীয়রা প্রথমে শনিবার সকালে এই চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় বশির (৫০) ফাতেমা বেগমের (১১) লাশ উদ্ধার করে।

আশঙ্কাজন অবস্থায় মাটির চাঁপা থেকে আরাফাত (১৮) এবং দেলু মিয়া (৭০) সহ চারজনকে জনকে জীবিত উদ্ধার করে লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। উদ্ধার তৎপরতা চালিয়েছে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের ২টি ইউনিট, পুলিশ ও স্থানীয়রা।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, লামা উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইনু অং চৌধুরী, লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) খালেদ মাহমুদ, পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য কাজি মজিবর রহমান, লক্ষিপদ দাশ, জহিরুল ইসলামসহ সেনা, প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্মারা।

জেলা পরিষদের সদস্য জহিরুল ইসলাম জানান, অবিরাম বর্ষণে শনিবার মধ্যরাতেই বিকট শব্দে পাহাড় ধসে চার পরিবারের শিশু’সহ ১০ জন মাটি চাপা পড়ে। ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী এবং স্থানীয়রা উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেয়। ৬ জনের লাশ উদ্ধার করে।

সদর থানার পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম জানান, পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়া ৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা বলেন, পাহাড় ধসের ঘটনায় টানা ফায়ার সার্ভিসের দু-টি ইউনিট ১১ ঘণ্টা উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে। মাটির নিচে আর কোন লোকজন নাই তা নিশ্চিত করে অভিযান সমাপ্ত করা হয়েছে।

লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) খালেদ মাহমুদ জানান, একই পরিবারের মা-ছেলেসহ ৬ মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের প্রত্যেকজন’কে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে। এবং ঝুঁকিপূর্ণ ঐএলাকা থেকে জনগণকে সরে যেতে বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বান্দরবান জেলা সদরে পাহাড় ধসে ২০০৬ সালে ৩ জন, ২০০৯ সালে লামা উপজেলায় শিশু’সহ ১০ জন, ২০১০ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ৫ জন, ২০১১ সালে রোয়াংছড়ি উপজেলায় ২ জন, ২০১২ সালে লামা উপজেলায় ২৮ জন, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১০ জন এবং চলতি বছর ২৬ জুন দু’সহদরসহ ৮জনের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে উজানে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে বান্দরবান জেলায় প্রায় আট হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ১০ দিনের টানা বর্ষণে বিভিন্ন স্থানে শতাধিত পাহাড় ধস হয়েছে। বান্দরবান কেরেনির হাট প্রধান সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হলেও লামা, নাইক্ষংছড়ি, রোয়াংছড়ি ও থানছি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে বান্দরবানের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নতুন নতুন নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ৩য় বারের মত বন্যা হয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়ছে জেলার আট হাজার হাজার পরিবার। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে বেশী বিপদে পড়েছে নিন্ম আয়ের জনসাধারণ।

বান্দরবান সেনা রিজিয়ন এলাকার পাশে বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় বান্দরবান-রাঙ্গামাটি প্রধান সড়কে যোগাযোগ বিছিন্ন রয়েছে। এবং রোয়াংছড়ি-বান্দরবান সড়কের রানীরচর বেইলি ব্রীজ ডুবে যাওয়ায় ২য় দিনেরমত সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া নাইক্ষংছড়ি, লামা, রুমা, আলীকদম ও থানছি উপজেলার প্রধান সড়কে পাহাড় ধস ও বন্যার পানিতে প্রধান সড়ক ডুবে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

বান্দরবানের প্রধান বাসস্টেশন পৌর এলাকার আর্মিপাড়া, মেম্বারপাড়া, শেরেবাংলা নগর, ইসলামপুর, বালাঘাটা, বাসস্টেশনসহ আশপাশের এলাকা এবং লামা পৌর এলাকা ও নাইক্ষংছড়ি সদরের বাস টার্মিনাল, উপজেলা কমপ্লেক্স, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, থানা ভবন, বাজার, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ আশপাশের এলাকা তৃতীয় দিনেও পাঁচ/সাত ফুট পানির নিচে রয়েছে।

এদিকে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যা দুর্গতদের জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে খোলা হয়েছে একটি কন্ট্রোল রুম। পাহাড় ধসে বনজ, ফলজ ও কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বীজতলা ডুবে যাওয়ায় আমন ধান চাষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বান্দরবানের জন্য ৮০ মেট্রিক টন খাদ্য শষ্য বিতরণ করা হয়েছে। আরো ১২৫ মে:টন খাদ্য শষ্য এবং ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলায় ছয় হাজার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার চিহ্নিত করা হয়েছে। দুর্গতদের তালিকা তৈরী করে প্রয়োজনীয় আরো ত্রাণ সরবরাহ করা হবে।

পৌর মেয়র মোহাম্মদ জাবেদ রেজা জানান, বন্যা এবং পাহাড় ধসে বান্দরবান পৌর এলাকায় প্রায় ২হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মৃত্তিকা ও পানি সংরক্ষণ কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহাবুবুল ইসলাম জানিয়েছেন, পাহাড় কাটা, অতিরিক্ত পাথর উত্তোলন ও অপরিকল্পিত জুম চাষাবাদ বন্ধ করা না গেলে পরিবেশ মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে। ভারি বর্ষণে ব্যাপক পাহাড় ধসে আরো প্রাণহানির ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।

সূত্র জানায়, গত ২৬ জুলাই থেকে বান্দরবানের ৭টি উপজেলায় বিভিন্ন পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসরত লোকজনদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বারবার নির্দেশ ও মাইকিং করেছিল জেলা প্রশাসন ও পৌর কতৃপক্ষ। কিন্তু তারপরও অনেকে এই নির্দেশ মানছেন না।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন