parbattanews

লামায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট

লামা প্রতিনিধি:

প্রায় ৮০ ঘন্টা বন্যার পানিতে ডুবে থাকা লামার বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতির দিকে। তবে বন্যার পানি নেমে যেতে না যেতেই খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। নিচু এলাকা গুলোতে ঘরবাড়ি এখনও পানিতে ডুবে আছে। ঘুর্ণিঝর মোরা’র আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া লামার ক্ষত না শুকাতে আকস্মিক বন্যায় খুবই কষ্টে পড়েছে লামা সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা।

রোববার থেকে তিন দিনের ভারী বর্ষণে পাহাড় ধ্বসে বান্দরবানের লামায় অর্ধশত বাড়ি-ঘর মাটির নিচে চাপা পড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে কেউ হতাহত হয়নি। পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ডুবে যায় লামা পৌর এলাকাসহ লামা ৭টি ইউনিয়ন। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নেয় পাশ্ববর্তী বিভিন্ন স্কুল ও মাদ্রাসায়। পাহাড় ধ্বস ও বন্যার পানিতে রাস্তা-ঘাট ডুবে যাওয়ায় লামা-চকরিয়া ও আলীকদম-চকরিয়া সড়কের যান চলাচল বন্ধ থাকে দু’দিন।

প্রবল বর্ষণের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে লামা পৌর এলাকার নয়াপাড়া, বাসস্ট্যান্ড, টিএন্ডটি পাড়া, বাজারপাড়া, লামা বাজার, চেয়ারম্যান পাড়ার একাংশ, ছোট নুনারবিলপাড়া, বড় নুনারবিলপাড়া, লাইনঝিরি, ফকিরপাড়া, হাজ্বীপাড়া, কলিঙ্গাবিলপাড়া, উপজেলা পরিষদের আবাসিক কোয়ার্টার সমূহ, থানা এলাকা, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা বাজার, হারগাজা, বগাইছড়ি, বনপুর ও লামা সদর ইউনিয়নের মেরাখোলা, অংহ্লাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

এছাড়া লামা উপজেলা সদরের সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বর্তমানে পানির নিচে ডুবে আছে। চেয়ারম্যানপাড়া, নয়াপাড়, রূপসীপাড়া, লাইনঝিরি, ফাঁসিয়াখালী ও ফাইতংয়ে পাহাড় ধ্বসে প্রায় অর্ধশত মাটি চাপা পড়েছে। আগ থেকে নিরাপদে সরে যাওয়ায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

বন্যাকবলিত সাধারণ লোকজনের সাথে আলাপ কালে আক্ষেপ করে বলেন, ‘ঘরে খাবার নেই। নেই বিশুদ্ধ পানি। বন্যার পানি প্রবেশ করায় নেই ঘরে বসবাসেরও পরিবেশ। বাড়ি প্লাবিত হওয়ায় নেই গবাদিপশুর বাসস্থানও। ফলে কাটছে দুর্বিষহ জীবন। আবার তার উপর নৌকায় করে ত্রাণ বিতরণের নামে এসে ফটোসেশন। বাড়িঘরে এসে শুধু সবাই ছবি উঠায় সাহায্য দেবে বলে। আর তাদের দেখা পাওয়া যায় না। নেতারা শুধু বলছেন কেউ না খেয়ে মরবে না। কিন্তু তারা কীভাবে জানবে কার ঘরে চাল আছে কি না? তারাতো শুধু ছবি উঠায়।

লামা বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাপান বড়ুয়া জানান, রমজানের আগে মোরা’র তাণ্ডব পথে বসিয়ে যায় লামার ব্যবসায়ীদেরকে। উপজেলার বিদ্যুত ব্যবস্থা ও যোগযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় পুরো রমজানে আর কোনো বিকিকিনি হয়নি। বিকিকিনি হবেই বা কিভাবে! সাধারণ মানুষ বিধস্ত বাড়ি ঘর মেরামত করবে না ঈদের কেনা কাটা করবে। সেই ক্ষতস্থানে প্রলেপ দেওয়ার আগেই আবারবন্যা ও পাহাড় ধ্বস। ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত।

জাপান বড়ুয়া বলেন, বন্যার পানিতে মালামাল ভিজে ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়েছে। ফিরে দাঁড়ানো খুব কঠিন হয়ে যাবে। অনেক ব্যবসায়ীর দোকানের মালামাল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন বলেও তিনি জানান।

লামা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল সূত্রে জানায়, লামা পৌরসভা ও উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে প্রায় ২ হাজার রিংওয়েল বন্যার পানিতে ডুবে ছিল। এতে এসব রিংওয়েলে প্রবেশ করা বন্যার পানি অপসারণ না করা পর্যন্ত পানি পান ও ব্যবহার করা যাবে না।

লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শফিউর রহমান মজুমদার বলেন, বন্যার পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে ডায়েরিয়া দেখা দেওয়ার সম্ভবনা রয়েছে এ জন্য পানি পান ও পানি ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া চর্মরোগ, এলার্জি, জন্ডিসসহ পানি বাহিত বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কষ্ট করে হলেও বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করে পান করার পরামর্শ দেন ডা. মফিউর রহমান মজুমদার।

লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খিন ওয়ান নু জানান, বন্যার পাশাপাশি পাহাড় ধ্বসের অনেক খবর পাওয়া গেছে। তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেওয়া লোকজনকে সাধ্যমত শুকনা খাবার চিড়া, মুড়ি, বিস্কুট ও খাবার পানি সরবরাহ করা হয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক।

খিন ওয়ান নু বলেন, কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে এখনও নিরুপন করা হয়নি। তবে বন্যা ও ঢলে অভ্যন্তরিন সকল সড়ক নষ্ট হয়েছে।

Exit mobile version