parbattanews

লামায় বন্য হাতির তাণ্ডবে জুমচাষ ও বসতবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি

বান্দরবানের লামা উপজেলার রুপসীপাড়া ইউনিয়নের টিয়ারঝিরি বিস্তৃর্ণ এলাকায় একপাল বন্য হাতির তাণ্ডবে উঠতি আমন ও আউস ধানের ক্ষেত, পাহাড়ের জুম চাষ, ফলের বাগান এবং ২টি বসতবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

টিয়ারঝিরি মার্মা পাড়ার কারবারী উথোয়াইচিং মার্মা জানিয়েছেন, গত তিনরাতে ১২টি বন্য হাতি ধারাবাহিকভাবে তাণ্ডব চালিয়ে প্রায় ৫১ কানি ক্ষেতের ধান ও জুম চাষের ক্ষতি করেছে। ওই এলাকার গ্রামবাসী রাতভর আগুন জ্বালিয়ে ও ঢাকঢোল পিটিয়ে ওই হাতির দল তাড়িয়েছে।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃর্ণ ধানের ক্ষেত, পাহাড়ের জুম চাষ, কলা বাগান, বাশেঁর ঝাড়, বসতবাড়ি ও খামার ঘর দুমড়ে মুছড়ে দিয়েছে বন্য হাতির পাল। প্রত্যেক্ষদর্শীর সাথে কথা বলে জানা যায়, বন্য হাতির পালে ১২টি হাতি ছিল। তিনরাত ধরে চলমান তাণ্ডবে বেশ কিছু ফসলের জমির আইল ভেঙ্গে ফেলেছে। হাতির পালের তাণ্ডবে টিয়ারঝিরি এলাকায় ১৪টি মার্মা, ত্রিপুরা ও বাঙ্গালী পরিবারের ক্ষেত, বাগান ও বসতবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা সবাই টিয়ারঝিরি এলাকার বাসিন্দা।

পরিদর্শন কালে দেখা যায়, উথোয়াইচিং মার্মার (কারবারী) ৭ কানি জমির ধান, ১৫টি কলা গাছ, উক্যচিং মার্মানীর ৫ কানি জুমের ধান ও ফসল, মংক্র অং মার্মার ৪ কানি ধানের ক্ষেত, মংচিং থোয়াই মার্মার ৩ কানি ধানের ক্ষেত, মং থোয়াই নু মার্মার ৩ কানি ধানের ক্ষেত, সুইচাচিং মার্মার ২ কানি ধানের ক্ষেত, মংচিং হ্লা মার্মার ২ কানি ধানের ক্ষেত ও শতাধিক ফলনশীল কলা গাছ, সাথিরাম ত্রিপুরার ৩ কানি জুমের চাষ ও ২ কানি ধানের ক্ষেত, এচাচিং মার্মার ৪ কানি ধানের ক্ষেত ও ১৫টি বাঁশ ঝাড়, প্রুহ্লামং মার্মার ৭ কানি জুম চাষ ও ১টি খামার ঘর (জিনিসপত্র সহ), উইক্রাঅং মার্মার ৪ কানি জমির ধান ও ৫০টি কলা গাছ, শফি আলমের বসতবাড়ি ও ৩ বস্তা ধান, রোকেয়া বেগমের ২ কানি ধানের ক্ষেত এবং মো. সোলাইমানের ৩ কানি ধানের ক্ষেত নষ্ট করেছে বন্য হাতির পালটি। হাতির পালটি এখনো ওই এলাকার আশপাশে অবস্থান করছে বলে জানায়, টিয়ারঝিরি মার্মা পাড়ার বাসিন্দা উক্যচিং মার্মানী, মংচিংহ্লা মার্মা ও সাথিরাম ত্রিপুরা।

জুমের ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের সামনে দাঁড়িয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে উক্যচিং মার্মানী বলেন, আমরা খুবই গরীব। স্বামী-স্ত্রী মিলে এবছর পাহাড়ে ৫ কানি জুম চাষ করেছি। আর ১০/১৫ দিন পরে জুমের ধান উঠার কথা রয়েছে। অন্যান্য ফসল (মারফা, মরিচ, সীম, সিনার, কলা) উঠা শুরু হয়েছে। এসময় হঠাৎ করে বন্যহাতির পাল এসে আমাদের জুমের ক্ষেত একেবারে নষ্ট করে ফেরেছে। একমাত্র আয়ের মাধ্যম নষ্ট হয়ে গেছে। পুরো বছর কিভাবে চলব ? সংসার ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ কোথায় থেকে দেব। এইভাবে ফসলের মাঠ ও বাগানের ক্ষতি বর্ণনা দিচ্ছিলেন ক্ষতিগ্রস্ত সকলে।

রুপসীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ছাচিং প্রু মার্মা বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত সবাই আমার কাছে আসলে আমি বিষয়টি লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে অবহিত করি। তিনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে তার কার্যালয়ে দেখা করতে বলেছেন।

লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এসএম কায়ছার বলেন, বন্য হাতির কর্তৃক জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি হলে আমরা বন বিভাগের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়। বিষয়টি আমাকে ইউপি চেয়ারম্যান ও গণমাধ্যম কর্মীরা অবহিত করেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা হবে।

Exit mobile version