parbattanews

লামা ও আলীকদমে ২ হাজার তামাক চুল্লি গিলে খাচ্ছে ৩২ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানী কাঠ

তামাক চুল্লি

লামা প্রতিনিধি:

বান্দরবানের লামা, আলীকদম এবং পার্শ্ববর্তী বমু বিলছড়ি এলাকার ২ হাজার তামাক চুল্লি চলতি মৌসুমে গিলে খাচ্ছে ৩২ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানী কাঠ। তামাক প্রক্রিয়া জাত করণের কাজে এ বিপুল পরিমাণ জ্বালানী কাঠ (লাকড়ী) পুড়িয়ে নি:শেষ করা হচ্ছে। স্থানীয় সংরক্ষিত এবং অশ্রেণিভূক্ত বনাঞ্চলের মূল্যবান বৃক্ষ নিধন এবং কৃষকের বাড়ির আঙিনার মূল্যবান বনজ ও ফলদ গাছ নিধন করে পোড়ানো হচ্ছে এই কাঠ। স্থানীয়দের মতে এ সকল জ্বালানী কাঠের স্থানীয় মূল্য আনুমানিক প্রায় ৭ কোটি টাকা।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে লামা, আলীকদম এবং পার্শ্ববর্তী বমু বিলছড়ি এলাকার প্রায় ১০ হাজার একর ফসলী জমিতে ক্ষতিকর তামাক চাষ করা হয়েছে। এই সকল তামাক প্রক্রিয়াজাত করণের কাজে ইতিমধ্যে নির্মিত হয়েছে প্রায় ২ হাজার তামাক চুল্লি। তামাক কোম্পানি গুলো তামাক চাষের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চাষীদেরকে বীজ, সার, কীটনাশক, পাওয়ার পাম্প ও প্রয়োজনীয় অর্থসহ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করলেও তামাক প্রক্রিয়াজাত করণের জন্য তামাক চুল্লির জ্বালানী সরবরাহ করে না। ফলে চাষীদেরকে তামাক চুল্লির জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ করতে লামা, আলীকদম এবং পার্শ্ববর্তী বমু বিলছড়ি এলাকার সরকারের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে।

কয়েকজন চাষীর সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটি তামাক চুল্লিতে প্রায় ৪শ’ মণ লাকড়ির প্রয়োজন পড়ে। সে হিসাবে লামা, আলীকদম এবং বমু বিলছড়ি এলাকার ২ হাজার তামাক চুল্লিতে চলতি মৌসুমে প্রায় ৮ লক্ষ মণ জ্বালানী কাঠ পোড়ানোর মহোৎসব ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। প্রতিমণ জ্বালানী কাঠ ৮০ টাকা হিসাবে যার স্থানীয় বাজার মুল্য ৬ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা।

অপরদিকে, প্রতিটি তামাক চুল্লি নির্মাণে ৩০ টি বড় মাপের খুঁটির প্রয়োজন হয়। সেই হিসাবে ২ হাজার তামাক চুল্লিতে ৬০ হাজার খুঁটির প্রয়োজন। স্থানীয় বাজারে প্রতিটি খুঁটির সর্বনির্ম ৫০ টাকা মূল্য হিসাবে মোট মূল্য দাঁড়ায় ৩০ লক্ষ টাকা। এছাড়া চুল্লি নির্মাণে বিপুল পরিমাণ বাঁশেরও প্রয়োজন হয়। সেই হিসাবে চলতি মৌসুমে লামা, আলীকদম এবং পার্শ্ববর্তী বমু বিলছড়ি এলাকার তামাক প্রক্রিয়া জাত করনের কাজে প্রায় ৭ কোটি টাকার বনজ সম্পদ ধ্বংসের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

তামাক প্রক্রিয়াজাত করণের কাজে স্থানীয় বনাঞ্চল ধ্বংস করে জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ করার পাশাপশি কৃষকের বাড়ির আঙিনার মূল্যবান বনজ গাছের পাশাপশি আম ও কাঁঠাল গাছ গুলোও তামাক চুল্লির খোরাক হয়ে আগুনে পুড়ে নি:শেষ হচ্ছে।

এ বিষয়ে লামা বনবিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা জানান, তামাক চুল্লি ধ্বংসে একাধিক অভিযান পরিচালনা করা  হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত আছে। তামাক চুল্লি গুলোতে যাতে করে জ্বালানী কাঠ পোড়াতে না পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তামাক কোম্পানি গুলোর স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, কৃষকেরা বনজ সম্পদ ধংস করে লাকড়ী কিংবা জ্বালানী কাঠের জোগাড় করেনা। তারা পাহাড়ী ঢলের পানিতে ভেসে আসা লাকড়ী সংগ্রহ করে তা তামাক চুল্লিতে ব্যবহার করে।

অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তামাক কোম্পানি গুলোর প্রত্যক্ষ ইন্ধনে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার বনজ সম্পদ ধবংস হচ্ছে। প্রশাসনের শিথীল নজরদারীর কারনে এলাকার বনাঞ্চল ধংস করে নীরবে তামাক চুল্লি গুলোতে জ্বলছে মূল্যবান বনজ সম্পদ। তামাক প্রক্রিয়া জাত করণের কাজে কাঠের বিকল্প জ্বালানীর ব্যবস্থা করা হলে এতদাঞ্চলের বিপুল পরিমাণ বনজ সম্পদ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে বলে সচেতন মহলের ধারণা।

Exit mobile version