লামা হায়দারনাশী দাখিল মাদ্রাসায় ভালো ফলাফলে রেকর্ড: এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষক-কর্মচারীদের মানবেতর জীবন যাপন

unnamed

লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি:
বান্দরবানের লামা উপজেলার হায়দারনাশী মোহাম্মদীয় সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসা প্রতিবারের ন্যায় এবারো ভালো ফলাফলের রেকর্ড করেছে । সদ্য ঘোষিত দাখিল পরীক্ষার ফলাফলে অত্র মাদ্রাসা থেকে শতভাগ পাসসহ ১৩ জন ছাত্র-ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। বিগত বছর গুলোতে অব্যাহত ভাবে ভালো ফলাফলের রেকর্ড গড়লেও প্রতিষ্ঠার ১৮ বছর পরেও মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিওভুক্ত না হওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

সূত্র জানায়, লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে যুগোপযোগী ইসলমী ও আধুনিক শিক্ষার বিস্তারের লক্ষ্যে এলাকার শিক্ষানুরাগী ও দানশীল ব্যক্তিদের উদ্যোগে ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় হায়দারনাশী মোহাম্মদীয় সুন্নীয়া দাখিল মাদ্রাসা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে একটি দক্ষ পরিচালনা পরিষদের নেতৃত্বে মাদ্রাসায় কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ বিনা বেতনে কঠোর পরিশ্রম ও নিয়মানুবর্তিতার মধ্য দিয়ে মাদ্রাসায় পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। শিক্ষকদের এ পরিশ্রমের ফল লাভ করছে এলাকার ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকগণ।

বর্তমানে ৬৯৮ জন ছাত্র-ছাত্রী অত্র মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত আছে। ইতিমধ্যে মাদ্রাসাটি বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড হতে একাডেমিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। চলতি বছরসহ বিগত বছর গুলোতে ইবতেদায়ী ৫ম শ্রেণীর সমাপনি পরীক্ষা, জেডিসি ও দাখিল পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের রেকর্ড অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে।

গত ২০১৩ সালে ইবতেদায়ী সমাপনী পরিক্ষায় ৬৩ জন ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করে সকলেই উত্তীর্ণ হয়। ৯ জন বৃত্তি লাভ করে। একই বছর জেডিসি পরীক্ষায় ৫৬ জন ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করে শত ভাগ পাস করে। তার মধ্যে ১৯ জন ছাত্র-ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। দাখিল পরীক্ষায় ৩৯ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে দু’টি জিপিএ-৫ সহ ৩৮ জন ছাত্র-ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়।

২০১৪ সালে ইবতেদায়ী পরীক্ষায় ৯৮ জন ছাত্র-ছাত্রী অংশ গ্রহণ করে ৯০ জন উত্তীর্ণ হয়। এ বছর জেডিসি পরীক্ষায় ৪৭ জন ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করে ৫ জন জিপিএ-৫ সহ ৪৬ জন উত্তীর্ণ হয়। দাখিল পরীক্ষায় ৪২ জন ছাত্র-ছাত্রী অংশ গ্রহন করে ৪ জন জিপিএ-৫ সহ ৪০ জন উত্তীর্ণ হয়।

চলতি ২০১৫ সালের দাখিল পরীক্ষায় অত্র মাদ্রাসা থেকে ৪৫ জন ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করে ১৩ জন জিপিএ-৫ সহ ৪৫ জনই উত্তীর্ণ হয়। গত ২০১৩-২০১৪ সালে মাদ্রাসাটি ভালো ফলাফল অর্জনের ধারাবাহিকতা অব্যাত রাখায় জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

অব্যাহতভাবে বান্দরবান জেলার মধ্যে ভালো ফলাফলের রেকর্ড গড়লেও মাদ্রাসায় কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। প্রতিষ্ঠার ১৮ বছর পার হলেও মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্তির আওতায় না আসায় কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দুর্ভোগের অন্ত নেই। ছাত্র-ছাত্রীদের বেতনের টাকায় শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ নাম মাত্র বেতন-ভাতা পেলেও দ্রব্য মূল্যের এ আগুন ঝরা বাজারে পরিবার পরিজন নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।

হায়দারনাশী মোহাম্মদীয়া সুন্নীয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট মাওলানা মোহাম্মদ হোছাইন জানান, গত ২০১৪ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সেকায়েপ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাদ্রাসাটি সনদ ও এক লক্ষ টাকার পুরুস্কার লাভ করে। তিনি জানান, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তক সাড়ে সাতান্ন লক্ষ টাকা ব্যয়ে মাদ্রাসার একটি একাডেমিক ভবন নির্মিত হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি গত বছরের ১৭মে একাডেমীক ভবন নির্মাণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

মাদ্রাসা সুপার বলেন, এলাকায় স্বল্প আয়ের মানুষের বসবাস বেশি। অনেক অভিবাককের পক্ষে নিয়মিত ছাত্র-ছাত্রীর বেতন পরিশোধ সম্ভব হয়না। ছাত্র-ছাত্রীদের বেতন এবং আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের অনুদান দিয়ে মাদ্রাসার ১৫ জন শিক্ষক-কর্মচারীদের নামমাত্র বেতন-ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। যা দিয়ে বর্তমান সময়ে একটি পরিবার কোন ভাবেই চলতে পারেনা।

তিনি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে থাকার পরেও তারা নিয়মিত কঠোর পরিশ্রম করে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। যার ফলে অব্যাহত ভাবে ভালো ফলাফল অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে। হায়দারনাশী মোহাম্মদীয়া সুন্নীয়া দাখিল মাদ্রাসার ভালো ফলাফলের রেকর্ড অব্যাহত রাখার স্বার্থে এবং মাদ্রাসায় কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তকরণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপিসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ গুলোর আন্তরিক হস্থক্ষেপ কামনা করছেন মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্টসহ শিক্ষক-কর্মচারীগণ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন