parbattanews

শনিবার উপকুলে আঘাত হানাতে পারে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের কাছে বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। ঘুর্ণিঝড়টি সর্বশেষ কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। গতিমুখ পরিবর্তন না হলে ঘুর্ণিঝড়টি শনিবার সকাল নাগাদ কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম উপকূলের উপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক।

তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়ার আকারে ৮৮কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। এই কারণে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৪নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উত্তর বঙ্গোসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে। যাতে তারা স্বল্প সময়ের নির্দেশে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে। সেই সাথে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে ঘুর্ণিঝড় পূর্ব প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫ টায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন।

তিনি বলেন, ‘দুর্যোগ পূর্ব ও দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। ইতোমধ্যে সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসেবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুক্র ও শনিবার ছুটির দিন হলেও এই ব্যপারে কর্মকর্তাদের সতর্ক নজর রাখতে হবে। বিপদ সংকেত এলে মানুষের নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রচারণা চালানো, আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খোলা রাখা ও যে কোন উপায়ে সেখানে দ্রুত শুকনো খাবার পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়াও ঘূণিঝড় পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা জরুরী।’

সভায় জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ঘুর্ণিঝড়ের সময় দুর্গত মানুষের নিরাপদ অবস্থানের জন্য জেলার ৫১৬ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এই মুহুর্তে দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ১৬২ মেট্রিক টন শুকনো খাবার ও নগদ ২ লাখ ২৩ হাজার টাকা মজুদ রয়েছে।’

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা: পু চ নু বলেন, ‘ঘুর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্যোগ কবলিত এলাকায় তারা সার্বক্ষনিক চিকিৎসা সেবা দেবেন। সদর হাসপাতালেও দুর্গত মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে।’

জেলা ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির উপ-পরিচালক হাফিজ আহমদ বলেন, ‘ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির অধিনে জেলার ৭ উপজেলার (রামু ব্যতিত) ৪৮ টি ইউনিয়নে ৪১৪টি ইউনিট কাজ করবে। প্রত্যেক ইউনিটে ১৫ জন করে মোট ৬ হাজার ২১০ জন স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। ঘুর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়ার পর সেই বার্তা তাদের কাছে পৌঁছানো হয়েছে এবং তাদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।’

কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কক্সবাজার পৌর এলাকার সকল আশ্রয়কেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আগেভাগেই প্রস্তুত রাখতে হবে। তাৎক্ষনিক উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে রাখতে হবে। এছাড়াও উপকূলের লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে আনার বিশেষ নজর দেওয়া দরকার।’

সভায় অন্যান্যের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি কক্সবাজার ইউনিটের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক জাহেদ সরওয়ার সোহেল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আনোয়ারুল নাসের, কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন ইনচার্জ আব্দুল মজিদসহ সংশ্লিষ্ঠরা উপস্থিত ছিলেন।

Exit mobile version