parbattanews

শহীদ কন্যাকে লেখা ব্রাদারহুড নেতা বেলতাগির চিঠি

944778_627101210654722_171960343_n

আমার প্রিয় মা, সম্মানিত শিক্ষক আসমা আল-বেলতাগি!

আমি তোমাকে বিদায় বলবো না। আমি বলবো- শিগগিরই আমাদের দেখা হবে…

মা আমার, স্বৈরতন্ত্র আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে তুমি বেঁচে ছিলে তোমার শির উঁচু করে এবং তুমি ভালোবাসতে মুক্ত জীবন। নতুন উচ্চতায় জাতি গঠন এবং জাতিকে সভ্যজগতে স্থান করে দিতে তুমি ছিলে এক নীরব বিপ্লবী।

সমবয়সী আর কয়েকটা ছেলে-মেয়ের মতো, তোমার চাওয়া-পাওয়া ছিলো না। তোমার চাওয়া-পাওয়া সবসময়ই ছিল ভিন্ন। ক্লাসে প্রথম স্থানটা সবসময় তোমারই ছিল।

আমার এ ছোট্ট জীবনে তোমার মূল্যবান সাহচর্য আমি খুব বেশি পাইনি। বিশেষ করে আমার সময় তোমার সাহচর্য পাওয়ার সুযোগ আমাকে দেয়নি। তোমার সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয় রাবা আল আদাবিয়া স্কয়ারে। তুমি আমাকে বলেছিলে ‘বাবা, আমাদের সঙ্গে থাকলেও তোমাকে সব সময় ব্যস্তই দেখি।’

জবাবে আমি বলেছিলাম ‘এ ছোট্ট জীবনটা মনে হয় আমাদের দেখা-সাক্ষাতের জন্য বা কিছু স্নেহের মুহূর্ত কাটানোর জন্য খুব কম। তাই আল্লাহর কাছে দোয়া করি জান্নাতে যেন আমাদের দেখা হয়, যেখানে সময় হবে অফুরন্ত।’

তোমার শাহাদাতের দুদিন আগের ঘটনা। স্বপ্নে দেখি- তুমি ধবধবে সাদা বিয়ের পোশাক পরে আছো। সফেদ পোশাকে তোমাকে খুব সুন্দর লাগছিল। তুমি যখন আমার পাশে বসলে আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘আজ কি তোমার বিয়ের রাত?’ তুমি হেসে জবাব দিলে ‘ না বাবা, এটা সন্ধ্যা নয়; এখন দুপুর।’

আমাকে যখন বলা হলো- বুধবার বিকেলে রাবা স্কয়ারে তুমি শাহাদাতবরণ করেছো, ‘আমি বুঝলাম- কেন সেদিন তুমি বলেছিলে- এটা তো সন্ধ্যা নয়, দুপুর। এখন আমার দৃঢ় বিশ্বাস আল্লাহর দরবারে তুমি শহীদ হিসেবে কবুল হয়েছো। আমরা যে সত্যের পথে আছি আর আমাদের শত্রুতারা যে মিথ্যায় নিমজ্জিত তুমি আমার এই বিশ্বাসকে আরো শক্ত করেছো।’

আমি তোমার জানাজায় শরিক হতে পারিনি সে এক অব্যক্ত কষ্ট ও কান্না। আমি তোমার মুখ শেষবারের মতো জানাজা শেষে দেখতে পাইনি, কপালে শেষ চুমু দেয়ার সুযোগ আমি পাইনি। তোমার জানাজার নেতৃত্ব দেয়ার সম্মান আমার হয়নি।

আমি আল্লাহ নামে শপথ করছি- হে প্রিয়তম (আল্লাহ) আমি আমার জীবন এবং অন্যায় কারা জীবন নিয়ে শঙ্কিত নই। কিন্তু বিপ্লবের জন্য এবং এর উদ্দেশ্য সাধনে আমি তোমার (মেয়ে আসমা) বার্তা বহন করতে চাই, যা তুমি আত্মোৎসর্গ করার মধ্যদিয়ে রেখে গেছো।

স্বৈরতন্ত্র প্রতিরোধে উঁচু শির নিয়ে তুমি ঊর্ধ্বোলোকে চলে গেছো। স্বৈরাচারের বুলেট তোমার বক্ষকে বিদ্ধ করেছে, যে আত্মা অত্যন্ত দৃঢ় এবং পূন্যময়। আমি আত্মবিশ্বাসী যে, তুমি তোমার স্রষ্টার প্রতি সৎ এবং আমাদের মধ্য থেকে তিনি তোমাকে সম্মানিত করতে শাহাদাতের জন্য মনোনীত করেছেন।

সবশেষে বলবো- প্রিয় মা, আমার সম্মানিত শিক্ষক,
আমি তোমাকে চিরবিদায় দেবো না। তবে বিদায়; জান্নাতে প্রিয় নবীর (সা.) সঙ্গে আমাদের দেখা হবে এবং তার সান্নিধ্যে আমাদের পরস্পরের সাক্ষত হবে আর প্রিয়জনের সাহচর্য লাভ সত্য হয়ে আসবে।

[মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক শাখা ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির মহাসচিব মোহাম্মাদ আল-বেলতাগি। কায়রোর রাবা স্কয়ারে সেনা অভ্যুত্থান বিরোধী অবস্থান কর্মসূচিতে নিরাপত্তা বাহিনীর রক্তাক্ত অভিযানে মারা যান তার ১৭ বছর বয়সী মেয়ে আসমা আল-বেলতাগি। সেনা অভ্যুত্থান বিরোধী একই কর্মসূচিতে ছিলেন বাবা-মেয়ে। গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক বৈধতা রক্ষার এই আন্দোলনে সেনাদের গুলিতে মারা যান মেয়ে। প্রিয় মেয়েকে লেখা আবেগঘন এ চিঠি।-সূত্র- ইন্টারনেট]

Exit mobile version