‘শিক্ষার বাতিঘর বলা হয় পাঠাগারকে’

fec-image

“বই পড়ি আলোকিত সমাজ গড়ি” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা উপজেলার বৃহত্তর গোমতি এলাকায় পহর লাইব্রেরি (পাঠাগার) এর শুভ উদ্বোধন, কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (১০মে) বৃহত্তম গোমতি ইয়নিয়নের ত্রিপুরা ছাত্রাবাসের প্রাঙ্গণে এ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সংবর্ধনা দেয়া হয়। এতে ২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের এবং ২০২২ সেশনে বৃহত্তর গোমতি এলাকা থেকে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্সপ্রাপ্তদের মাঝে বই এবং সম্মাননা স্বারক হিসেবে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

আলোচনা সভায় পহর লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক ধন কিশোর ত্রিপুরা’র সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন লাইব্রেরির সাংগঠনিক সম্পাদক অক্ষয় ত্রিপুরা। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে গোলাম মোহাম্মদ বাতেন বলেন, একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি সব ধরনের পাঠকের জ্ঞানতৃষ্ণা নিবারণ করে থাকে, মানুষের নৈতিক চরিত্র গঠনে অবদান রাখে। বই ছাড়া প্রকৃত মনুষ্যত্ব লাভ ও অধিক জ্ঞান অর্জন করা যায় না। তাই লাইব্রেরির মাধ্যমেই একটি জাতি উন্নত, শিক্ষিত ও সংস্কৃতিবান হিসেবে গড়ে ওঠে। শিক্ষার বাতিঘর বলা হয় পাঠাগারকে। জাতীয় জীবনে তাই পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিসীম। বৃহত্তর গোমতি এলাকার পাঠক, বই প্রেমিকদের জন্য “পহর লাইব্রেরি” একটি আধুনিক মনের হসপিটালের ভূমিকা রাখবে বলে উল্লেখ করেন। বক্তব্যের পরিশেষে পহর লাইব্রেরির পাশে সবসময় পাশে থাকবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক বলেন, লাইব্রেরি মূলত ৩ প্রকার। যেমন: ব্যক্তিগত লাইব্রেরি, পারিবারিক লাইব্রেরি এবং সাধারণ বা সার্বজনীন লাইব্রেরি। বেঁচে থাকার জন্য মানুষের যেমন খাবার দরকার, তেমনি জীবনকে গতিময় করার জন্য দরকার জ্ঞান। কারণ জ্ঞান হলো মনের খোরাক বা খাবার। জ্ঞানের আঁধার হলো বই আর বইয়ের আবাসস্থল হলো পাঠাগার।

মাটিরাঙা উপজেলার সহকারী ভূমি কমিশনার আফরোজা হাবিব শাপলা বলেন, সচেতন মানুষ মাত্রই পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। পৃথিবীর যতো মহান মনীষী আছেন তাদের সবাই জীবনের একটা বড় সময় পাঠাগারে কাটিয়েছেন। সাহিত্য-শিল্প, বিজ্ঞান, সংস্কৃতিসহ সব ধরণের জ্ঞানের আঁধার হতে পারে একটি পাঠাগার। পাঠাগার একটি জাতির বিকাশ ও উন্নতির মেরুদন্ড। বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা ছাড়া সমাজ ও জাতীয় চেতনার জাগ্রত হয় না। আর তাই পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। পৃথিবীর বহুদেশ পাঠকের চাহিদা পূরণের জন্য গড়ে তুলেছে অগণিত পাঠাগার। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত কোনো জাতি পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি। শিক্ষার বাতিঘর বলা হয় পাঠাগারকে। পাঠাগার ছাড়া কোনো সমাজ বা রাষ্ট্র তার নাগরিককে পরিপূর্ণ শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে পারে না। পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা সমাজ, জাতি ও দেশের অগ্রগতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সমাজকর্মী ও নারী উদ্যোক্তা শাপলা দেবী ত্রিপুরা বলেন, পাঠাগার হলো মানবসভ্যতার শ্রেষ্ঠ সম্পদ। আর সেই সম্পদের যথোপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে তার প্রকৃত উপকার ভোগ করা যায়। জীবনে পরিপূর্ণতার জন্য জ্ঞানের বিকল্প আর কিছুই হতে পারে না। কাজেই ভালোভাবে পড়ালেখা করে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। পাঠাগার জ্ঞানের তৃষ্ণা নিবারণ করার একটি উত্তম পন্থা। একটি সমাজের রূপরেখা বদলে দিতে পারে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার। মনকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পাঠাগারের অবদান অনস্বীকার্য। তাই এ গোমতি এলাকায় পাঠাগার গড়ে তোলা জরুরি ছিলো। এখন আমরা একটি পাঠাগার পেয়েছি। আমরা খুব শীঘ্রই লাভ করতে পারি এক সমৃদ্ধ জ্ঞানী জাতি। জ্ঞানার্জনের অন্যতম পথ হবে এই পাঠাগার। তিনি সবসময় এই বৃহত্তর গোমতী এলাকার পহর পাঠাগারের উন্নয়নের জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এ সময় পহর লাইব্রেরির সভাপতি লিমন ত্রিপুরা’র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) গোলাম মোহাম্মদ বাতেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাটিরাঙা উপজেলার সহকারী ভূমি কমিশনার আফরোজা হাবিব শাপলা, খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ত্রিনা চাকমা, বিশিষ্ট সমাজ সেবিকা ও নারী উদ্যোক্তা শাপলা দেবী ত্রিপুরা, গোমতি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. তোফাজ্জল হোসেন, বেলছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রহমত উল্লাহ, গোমতি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. ফারুক হোসেন লিটন, গোমতি বি. কে উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক সুনীতি রঞ্জন ত্রিপুরা প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন