parbattanews

শিক্ষা দিবস উপলক্ষে মহালছড়িতে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সমাবেশ

Mahalchari PCP news 17-09-2013

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

১৭ ই সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবস উপলক্ষে মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার নিশ্চয়তা, জীবনের নিরাপত্তা বিধান এর দাবীতে  মঙ্গলবার দুপুর বারটায় পাহড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) এর উদ্যোগে মহালছড়ি সিএন্ডবি মাঠে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ মহালছড়ি উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি তনয় চাকমা’র সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ইউপিডিএফের মহালছড়ি উপজেলা সমন্বয়ক অলকেশ চাকমা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের মহালছড়ি উপজেলা সভাপতি পলাশ চাকমা ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ মহালছড়ি কলেজ শাখার সভাপতি মেনন চাকমা। সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিনীত চাকমা। সমাবেশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েকশ’ ছাত্র/ছাত্রী অংশ গ্রহণ করেন।

উক্ত সমাবেশে বক্তারা বলেন, শুধুমাত্র শিক্ষার অধিকারের দাবিতে নয়, আওয়াজ তুলতে হচ্ছে জীবনের নিরাপত্তার জন্যও। গেল ৩ আগস্ট তাইন্দ্যং-এ অপহরণের নাটক সাজিয়ে পাহাড়ি বসতিতে পুনর্বাসিত বাঙ্গালীদের হামলা এবং তারপর ঐ গুজবের সাথে তাল মিলিয়ে রাঙামাটিতে সন্তু লারমা চক্রের তথাকথিত মানববন্ধনের ঘটনা আমাদেরকে হতবাক ও ক্ষুব্ধ করেছে। এ ধরনের কর্মকান্ডকেই দালালি বা দেশদ্রোহী বলা হয়ে থাকে। ’৭১ সালে রাজাকাররাও এ ধরনের ঘৃণ্য ভূমিকা পালন করায় এখনও নিন্দা ও ধিক্কার কুড়াচ্ছে, যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত হয়ে কারাগারে ফাঁসির অপেক্ষায় দিন গুনছে। সে দিন দূরে নয়, যেদিন পার্বত্য চট্টগ্রামের তেজোদীপ্ত ছাত্র-যুব সমাজ জেগে উঠবে, পাহাড়ি দালাল-রাজাকারদের শায়েস্তা করবে বলে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন।

বক্তারা সরকারের দোষারোপ করে বলেন, আমরা অধিকারহারা জাতি, প্রতি পদে পদে লাঞ্ছিত, উপেক্ষিত। সরকার আমাদের জাতি হিসেবেও স্বীকার করে না, আইন বানিয়ে বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে সবচেয়ে বৈষম্যের শিকার হচ্ছি আমরা। সচেতন ছাত্র হিসেবে আমরা আর মুখ বুঁজে অন্যায়, অবিচার, বৈষম্য, হত্যাকান্ড, ভূমি বেদখল মেনে নিতে পারি না। অত্যাচারী পাকিস্থানী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ব বাংলার ছাত্র সমাজে যে তেজ ও সাহসিকতার সাথে প্রতিবাদে রাজপথে বেরিয়ে এসেছিল, আত্মবলিদান দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। এটাই অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। ঠিক তেমনি বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)’কেও জাতির সামনে অনুরূপ নজির প্রতিষ্ঠা করার আহবান জানান।

সম্প্রতি মাটিরাঙ্গা উপজেলায় ঘটে যাওয়া ঘটনা প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বক্তারা আরো বলেন, তাইন্দ্যং হামলার কারণে বহু শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন বিঘ্নিত হয়েছে, গৃহহারা আশ্রয়হীন অবস্থায় বৃষ্টিতে ভিজে মারা গেছে এক শিশু। পার্বত্য চট্টগ্রামে এভাবে যুগ যুগ ধরে চলছে আমাদের ওপর বর্বোরচিত হত্যাকান্ড ও নির্যাতন। আমাদের জীবনই যখন হুমকির সম্মুখীন, সেখানে কিভাবে আমরা পড়ালেখায় মন বসাতে পারি ? যেখানে আমাদের স্বজাতির ভাই-বোন আক্রান্ত, বাবা-মা’রা বাস্তুভিটা থেকে বিতাড়িত, আমাদের বংশ পরম্পরার জায়গা-জমি পুনর্বাসিত বাঙ্গালীরা কর্তৃক জবরদখল হয়ে যাচ্ছে, সে অবস্থায় আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো? স্বজনের কান্না আর্তচিৎকার শুনে আমরা তো গরু ভেড়ার পালের মত নির্বিকার থাকতে পারবো না।

উল্লেখ্য, ১৭ই সেপ্টেম্বর এ দেশের ছাত্র সমাজের জন্য একটি স্মরণীয় দিন। ১৯৬২ সালের এই দিনে তৎকালীন পূর্ব বাংলার অকুতোভয় ছাত্র সমাজ পাকিস্থানি শাসকগোষ্ঠীর চাপিয়ে দেয়া বিতর্কিত শরীফ শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে প্রতিবাদ করেছিল। অন্যায়ের বিরুদ্ধে  রুখে দাঁড়াতে গিয়ে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিল সাহসী ছাত্রদের রক্তে। শহীদ হয়েছিলেন মোস্তফা, বাবুল ও ওয়াজিউল্যাহসহ অনেকে।

Exit mobile version