parbattanews

শিক্ষা বঞ্চিত সোনাদিয়া দ্বীপের শিশু!

দেশের একেবারে শেষপ্রান্তে অবস্থিত গভীর সমুদ্র বন্দরের জন্য প্রস্তাবিত এলাকা সোনাদিয়া। এটি কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার বিচ্ছিন্ন এক উপ-দ্বীপ।

এ এলাকার মানুষগুলোও যেন সবসময় সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বহু প্রতিকূলতার মাঝে বেঁচে আছে সোনাদিয়া দ্বীপের মানুষ, শিক্ষা থেকে বঞ্চিত শিশুরা। দ্বীপাঞ্চল সোনদিয়ায় চারটি গ্রাম থাকলেও এর মধ্যে তিনটি গ্রামে নেই কোন আশ্রয় কেন্দ্র। একটি গ্রামে আশ্রয় কেন্দ্র থাকলেও সেটিও রয়েছে চরম ঝুকিঁপূর্ণ অবস্থায়।

এদিকে বাংলাদেশ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বেজা) উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য সোনাদিয়া পুরো দ্বীপটি একোয়ার করার কারনে নতুন করে কোন স্কুল স্থাপনা করতে দিচ্ছে না ফলে শিক্ষার আলো টুকু হারিয়ে যাচ্ছে দ্বীপের শিশুদের।

পুরো সোনাদিয়ার কোথাও খোজেঁ পাওয়া যাবে না একজন ডাক্তার, নেই কোন ফার্মেসীও।

প্রাথমিক চিকিৎসার নুন্যতম ব্যবস্থাটুকুও নেই এখানে। মোট কথা, হাজার সমস্যা নিয়েই বেঁচে আছে সোনাদিয়ার চরের মানুষ। সোনদিয়ার পর আর কোন এলাকা নেই, শুধু সাগর আর সাগর। বেঁচে থাকার তাগিদে অনেকেই বসতি গড়ে তুলেছেন দ্বীপাঞ্চল সোনাদিয়ায়। যতই দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে এ এলাকার জনবসতি। কিন্তু এসব মানুষের নিরাপত্তার জন্য নেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা।

জানা যায়, প্রতি বছরের এপ্রিল মে, জুন ও অক্টোবরে সাগরে সৃষ্টি হয় নিম্নচাপ। এ নিম্নচাপের প্রভাবে বেড়ে যায় ঘুর্ণিঝড় কিংবা জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রকৃতিক দূর্যোগ। প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে মহেশখালী উপজেলার ঝুকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে আশ্রয় কেন্দ্র থাকলেও দূর্গম এলাকা সোনাদিয়ার একটি গ্রাম ছাড়া আর কোথাও নির্মিত হয়নি কোন আশ্রয় কেন্দ্র। সোনাদিয়ার পশ্চিমপাড়া,মাঝেরপাড়া ও বদরখালীয়াপাড়া কোন আশ্রয় কেন্দ্র নেই। পূর্বপাড়ায় একটি আশ্রয় কেন্দ্র থাকলেও তা ব্যবহার অউপযোগী নয়। এ অবস্থায় চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে প্রায় ৮ হাজার মানুষ। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে প্রতিটি দিনই তাদের বেচেঁ থাকতে হয় দূর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে । সত্তরের ভয়াল গোর্গি আর ঘূর্ণিঝড় আইলা ও সিডরে উপকূলের জনপদ লন্ডভন্ড হয়ে যায়। এসব ঝড়ের কবলে নিহত হন হাজার হাজার মানুষ।

এছাড়াও রেশমি, বিজলী, মহাসেনসহ বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়েও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল এলাকায় । উপকূলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে একের পর এক প্রাঁণহানির ঘটনা ঘটলেও সোনাদিয়া এখনও রয়ে গেছে অরক্ষিত।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আকাশে মেঘ দেখলেই ভয় আমাদের বুক কাপে। উপকূল দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রতিটি ঝড়ই যেন একেকটি মৃত্যুবার্তা।

এদিকে সোনাদিয়ার চার গ্রামের মধ্যে কেবল একটি গ্রামে রয়েছে একটি রেজি: প্রাথমিক বিদ্যালয়। পূর্বপাড়ায় স্কুল থাকলেও অন্য তিন গ্রামের ছোট ছোট কোমলমতি ছেলেমেয়েরা পায় না শিক্ষার ছোঁয়া।

ঐ স্কুলেও গুটি কয়েক শিক্ষার্থীরাও পঞ্চম শ্রেণীর মধ্যেই লেখাপড়ার ঘন্ডি শেষ।

এ ব্যাপারে স্থানীয় কয়েকজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা বলেন, যেখানে আমাদের জীবনেরই কোন নিরাপত্তা নেই, সেখানে ছেলেমেয়দের পড়ালেখা করানো তো আকাশ-কুসুম স্বপ্ন। সোনদিয়ার পুরো চরে কোথাও খুজেঁ পাওয়া যাবে না কোন এমবিবিএস ডাক্তার। এমনকি নেই এলএমএফ পর্যন্ত। চার গ্রামের কোথাও নেই একটি ফার্মেসীও। চরাঞ্চলের কারও যদি অসুখ হয় তাদের ছুটতে হয় সোনাদিয়ায় অবস্থিত ছোট চায়ের দোকানে। যেখানে কয়েকটি সাধারণ রোগের ওষুধ থাকে। ডাক্তার কিংবা এলএমএফ না থাকায় অনুমানের ওপরই ওষুধ সেবন করেন এখানকার মানুষরা। সোনদিয়া এমন এক দূর্গম এলাকা যেখানে নূন্যতম প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাটুকু পর্যন্ত নেই। এখানে কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ইঞ্জিন বোটে করে নিয়ে যেত হয় কক্সবাজার। জোয়ার থাকলে তো ভালোয় ভালোয় রোগী পার করা যায়, কিন্তু ভাটা হলেই বিপদ। তখন রোগীর অভিভাবকদের কষ্টের অন্ত থাকে না। সোনাদিয়াকে আগে ডাকা হতো ‘স্বর্ণদ্বীপ’ বলে। শুটকির জন্য বিখ্যাত ছিল সোনাদিয়ার চর। এ এলাকার থেকে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার শুঁটকি চলে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে কমে গেছে শুটকি রফতানি।

আগের মত মাছ পাওয়া না যাওয়ায় শুটঁকি তৈরি করা যাচ্ছে না বলে জানান স্থানীয়রা।

সোনাদিয়া চরের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই নাজুক পায়ে হেঁটে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাওয়া গেলেও বয়স্ক, রোগী ও অতি জরুরী কাজে নৌকা বা ইঞ্জিনচালিত ট্রলার দিয়ে পাড়ি দিতে হয়। অনেক সময়ে উত্তাল নদীতে ঝুকিঁ নিয়েই তাদের চলাচল করতে হয়। অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত সোনাদিয়া। না পাওয়ার সেই যন্ত্রনায় ক্ষুব্দ এখানকার মানুষ।

সোনাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোকতার আহমেদ জানান, সোনাদিযার যে স্কুলটি আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ফলে প্রতি বছর এটি দূর্যোগকালিন ব্যবহার করা হয় । যার কারণে স্কুলটি র্দীঘদিন সংস্কার না করার ফলে ছাদ দিন দিন খসে পড়ে যাচ্ছে ইতিমধ্যে বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিস ও জেলা শিক্ষা অফিসকে অবহিত করা হয়েছে। এখানে নতুন করে কোন স্থাপনা করে না দিলে এই এলাকার শিশুদের শিক্ষা চরম ঝুঁকিতে পড়বে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন খোকন জানান, সোনাদিয়া দ্বীপের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ দ্রত উন্নত করা হবে সেই লক্ষে কাজ করছি আমরা, সড়ক যোগাযোগ হয়ে গেলে এই দ্বীপের শিক্ষা ব্যবস্থা আরও উন্নতি হবে এবং যোগাযোগ ক্ষেত্রে আরও প্রসার ঘটবে।

Exit mobile version