parbattanews

শিলং জুয়ায় আসক্ত গুইমারার আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা, প্রশাসন নিরব

গুইমারা প্রতিনিধি:

গুইমারার সকল পাড়ায় সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়েছে শিলংতীর জুয়া নামক ভয়াবহ এক ব্যধি। ভয়াবহ এই জুয়ার মাধ্যমে গুইমারায় শুধু সামাজিক অবক্ষয় নয়, প্রথমে বেকার বা আড্ডাবাজ তরুণ-যুবকদের টার্গেট করে ভারতের শিলং হতে পরিচালিত ডিজিটাল জুয়া “শিলং তীর” খেলাটি পরিচালিত হয়ে আসছিলো।

কিন্তু বর্তমানে স্কুলগামী ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রী থেকে উপজাতী পরিবারের নারীদের আসক্ত করা হচ্চে এই জুয়ায়।

গুইমারার সকল স্তরকে ম্যানেজ করে মাসোহারা দিয়ে একটি চক্র অনায়াসে চালিয়ে যাচ্ছে এই জুয়াটি। পাড়ায় পাড়ায় স্থানীয় এজেন্টের মাধ্যমে গুইমারার সকল পাড়াকে রিমোট সিস্টেমে দাবড়িয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রধান এজেন্ট এক সময়ের ভারতীয় নাগরিক খন্দ মার্মা। ভারত থেকে এসে এক সময়ে মোটর সাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করলেও এখন সে হঠাৎ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ এই শিলং জুয়ার মাধ্যমে।

বিষয়টি গুইমারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন সভা-সেমিনারে আলোচনার ঝড় উঠলেও প্রধান এজেন্ট খন্দ মার্মাকে কখনো আটক বা প্রতিরোধের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

গুইমারার সুশীল সমাজ বলছেন, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মাসিক মাসোহারা দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে শিলং তীর নামক জুয়াটি। এর মূল হোতা খন্দ মার্মা। প্রশাসনের নিরবতায় এই মহামারি গুইমারায় বর্তমানে এমন রুপ ধারণ করেছে যে, স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীসহ উপজাতীয় পরিবারের নারীরা পর্যন্ত আসক্ত হয়ে পড়েছে। আর মূল হোতা খন্দ মার্মাকে নিজেদের হীন স্বার্থের জন্য সহযোগিতা করছে কতিপয় ব্যক্তি। তাদের এই সহযোগিতায় দিনে দিনে আসক্ত হচ্ছে গুইমারার যুব সমাজসহ নারীরাও।

সমাজের সর্বস্ব লুটে নিয়ে ধীরে ধীরে নিঃস্ব করে দিচ্ছে সীলং নামক মহামারি এই জুয়া খেলাটি।

জানা যায়, এ জুয়া খেলাটি চালিয়ে ইতিমধ্যে খন্দ মার্মা সাধারণ মোটর সাইকেল চালক থেকে নামকরা বিত্তশালী হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে সর্বশান্ত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।

সভা-সেমিনারে অনেকে এ নিয়ে বক্তব্য দিলেও প্রশাসনের কিছু ব্যক্তির অর্থনৈতিক যোগাযোগ রয়েছে তার সাথে। যার ফলে আইনগত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়না এমনটিই বলেছেন স্থানীয় অনেকে।

বর্তমানে এর প্রভাব পড়েছে সর্বত্র। শিলং তীর’ জুয়ার আসর মূলত একটি কৌশলগত জুয়া এবং দেশের সাধারণ মানুষের টাকা হাতিয়ে নেওয়া ভারতীয় দুষ্ট চক্রের একটি বিরাট ফাঁদ। এ জুয়ার আসর থেকে সাধারণ মানুষ যাতে মুখ ফিরিয়ে না নেন, সে জন্য প্রতিদিনই কয়েকজনকে জুয়ার বাজিতে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

এসব জুয়ার আসরে রিকশাচালক, দিনমজুর, শিক্ষার্থী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে জুয়ার নেশায় মত্ত বড় ব্যবসায়ীরাও টাকা ঢালছেন। হাতে গোণা কয়েকজন জুয়ার আসর থেকে হাসিমুখে ফিরলেও সিংহভাগই ফিরেন নিঃস্ব হয়ে।

শিলং নামক ১ থেকে ৯৯ পর্যন্ত সংখ্যাভিত্তিক এই জুয়া এখন মহামারি রূপে ছড়িয়ে পড়েছে গুইমারা উপজেলার সর্বত্র। গত প্রায় ৬ মাস ধরে প্রায় ১৫টি স্পটে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়ঙ্কর এই ‘শিলং তীর’ নামক জুয়ার আসর।

শুরুতে কৌশলী জুয়াড়িরা সাধারণ মানুষের আগ্রহ বাড়াতে লোভনীয় অফার দেয়। এতে রিকশাচালক, দিনমজুর শ্রেণীর মানুষদের ভিড় বাড়ে জুয়ার আসরে। ১০ টাকায় ৮০০ টাকা, ২০ টাকায় ১৬০০ টাকা, তথা প্রতি টাকার বদলে ৮০ গুণ লাভ পেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে মানুষ।

গুইমারাতেই অন্তত ১৫টি এজেন্ট পয়েন্ট রয়েছে শিলং’র। এর মধ্যে যৌথখামার, আমতলী পাড়া, বটতলী, হাজীপাড়া দেওয়ান পাড়া, হাতিমুড়া, রামছুবাজার ডাক্তারটিলার নিচে, নতুন পাড়া, বুধংপাড়া বরইতলী উল্লেখযোগ্য এজেন্ট পয়েন্ট। এর প্রতিটি স্থানে স্থানীয় একজন করে লোক দিয়ে খেলাটি চালিয়ে যাচ্ছেন খন্দ।

এসব স্থানীয় এজেন্টরা ১ হাজার টাকার জুয়া বাজির কমিশন হিসেবে মূল কোম্পানীর কাছ থেকে পান ৬০ টাকা। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত এসব এজেন্টের মাধ্যমে কাটা জুয়ার টাকা ও নাম্বার সাড়ে ৩টার মধ্যেই পৌঁছে দিতে হবে প্রধান এজেন্ট ভারত হতে আসা গুইমারা যৌথখামার এলাকায় বসবাসকারী খন্দ মার্মার কাছে।

একটি নির্দিষ্ট সূত্র মতে, শুধুমাত্র গুইমারা উপজেলাতেই শিলং-এর দৈনিক খেলা হত আগে ২-৩লক্ষ টাকা, বর্তমানে ৬-৭ লক্ষ টাকার খেলা হচ্ছে দৈনিক। আর আনুষাঙ্গিক ব্যয় প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা। বাকি টাকা এজেন্টদের মুনাফা।

শিলংয়ের সাথে মিলিয়ে সপ্তাহে রবিবার ছাড়া বাকি ছয়দিনই এ জুয়ার আসর বসে। এছাড়া ভারতের রাষ্ট্রীয় ছুটির দিনে এ জুয়ার আসর বন্ধ থাকে। প্রতিদিন বিকাল ৫টায় জুয়ার ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার জুয়ার এ আসর দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও বরাবরই নিরব থাকছে স্থানিয় পুলিশ প্রশাসন।

এই জুয়ার প্রধান এজেন্ট খন্দ মার্মার নিকট জানার জন্য গেলে তিনি উপস্থিত কোন কথা না বলে চলে যান। পরবর্তীতে স্থানীয় দোকানে বসে বলেন, সবাইকে ম্যানেজ করেই চালাচ্ছেন তিনি। কোন প্রশাসন এটি বন্ধ করবেন না। তার এমন মন্তব্যে হতাশ গুইমারারবাসী।

এ বিষয়ে গুইমারা সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, শিলং তো শুধু জুয়া নয়, এটি একটি মানি লন্ডারিং। আমাদের দেশের টাকা বাইরে পাচার হচ্ছে। এত আলোচনার পরও কেন শিলং নামক ব্যাধিটি গুইমারা থেকে বন্ধ করা হচ্ছেনা।

তিনি আরও বলেন, এ জুয়াটিতে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও আসক্ত করা হচ্ছে। যার ফলে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে। দ্রুততম সময়ে এটি বন্ধ না হলে গুইমারা উপজেলায় এর প্রভাব আরও বৃহৎ আকার ধারণ করবে। তাই এ বিষয়ে প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা কামনা করছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, আমরা এদের ধরার চেষ্টা করছি ধরতে পারলেই আইনগত ব্যবস্থা নিবো।

Exit mobile version