parbattanews

‘শিলং তীর’ জুয়ার থাবা থেকে গুইমারাকে মুক্ত করার দাবি 

গুইমারা প্রতিনিধি:

গুইমারায় ভয়াবহ জুয়ার মাধ্যমে সামাজিক অবক্ষয়ের আরেকটি নাম শিলং তীর’জুয়া। সর্বস্ব লুটে নিয়ে ধিরে ধিরে নিঃস্ব করে দেয়া একটি মহামারি খেলা এই জুয়া। সম্প্রতি পুরো গুইমারায় ছড়িয়ে পড়েছে শীলং নামক ব্যধিটি। বেকার বা আড্ডাবাজ তরুন যুবকদের টার্গেট করে ভারতের শিলং হতে পরিচালিত ডিজিটাল জুয়া “শিলং তীর” খেলাটি পরিচালিত হচ্ছে।

গুইমারার পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দাফটের সঙ্গে খেলাটি চালিয়ে যাচ্ছে ভারত থেকে আসা প্রধান এজেন্ট যৌথখামার এলাকায় বসবাসকারী খন্দ মার্মা।

জানাযায়,এ জুয়া খেলাটি চালিয়ে ইতিমধ্যে সে সাধারণ মোটর সাইকেল ভাড়াটি থেকে নামকরা বিত্তসালী হয়ে উঠেছে। যদিও হাজার হাজার মানুষ সর্বশান্ত হয়েছে। সভা সেমিনারে অনেকে বক্তব্য দিলেও প্রশাসনের কিছু ব্যক্তির অর্থনৈতিক যোগাযোগ রয়েছে তার সাথে। যার ফলে আইনগত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়না এমনটি দাবি অনেকের।

বর্তমানে এর প্রভাব পড়েছে সর্বত্র যার ফল হিসেবে ইতিমধ্যে দিনে দুপুরে গুইমারা বাজারে বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটে গেছে। অতি সমপ্রতি উপজেলার সর্বত্র এর প্রভাব পড়বে বলে সচেতনমহলের ধারনা।

শিলং তীর’ জুয়ার আসর, মূলত এটি একটি কৌশলগত জুয়া এবং দেশের সাধারণ মানুষের টাকা হাতিয়ে নেওয়া ভারতীয় দুষ্ট চক্রের একটি বিরাট ফাঁদ। এ জুয়ার আসর থেকে সাধারণ মানুষ যাতে মুখ ফিরিয়ে না নেন, সেজন্য প্রতিদিনই কয়েকজনকে জুয়ার বাজিতে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এসব জুয়ার আসরে রিকশাচালক, দিনমজুর, শিক্ষার্থী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে জুয়ার নেশায় মত্ত বড় ব্যবসায়ীরাও টাকা ঢালছেন। হাতেগোণা কয়েকজন জুয়ার আসর থেকে হাসিমুখে ফিরলেও সিংহভাগই ফিরেন নিস্ব হয়ে।

শিলং নামক ১ থেকে ৯৯ পর্যন্ত সংখ্যাভিত্তিক এই জুয়া এখন মহামারি রূপে ছড়িয়ে পড়েছে গুইমারা উপজেলার সর্বত্র। গত প্রায় ৬ মাস ধরে প্রায় ১৫টি স্পটে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়ঙ্কর এই ‘শিলং তীর’ নামক জুয়ার আসর।

শুরুতে কৌশলী জুয়াড়িরা সাধারণ মানুষের আগ্রহ বাড়াতে লোভনীয় ভাবে অফার দেয় জুয়ায় টাকা। এতে রিকশাচালক, দিনমজুর শ্রেণির মানুষদের ভিড় বাড়ে জুয়ার আসরে। ১০ টাকায় ৮০০ টাকা, ২০ টাকায় ১৬০০ টাকা তথা প্রতি টাকার বদলে ৮০ গুণ লাভ পেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে মানুষ।

ভাবছেন কিভাবে সম্ভব? গুইমারাতেই অন্তত ১৫টি এজেন্ট পয়েন্ট রয়েছে শিলং’র। এর মধ্যে  যৌথখামার, আমতলী পাড়া, বটতলী, হাজীপাড়া দেওয়ান পাড়া, হাতিমুড়া, রামছুবাজার ডাক্তারটিলার নিছে, নতুন পাড়া বরইতলী, উল্লেখযোগ্য এজেন্ট পয়েন্ট।

এসব স্থানীয় এজেন্টরা ১ হাজার টাকার জুয়া বাজির কমিশন হিসেবে মুল কোম্পানীর কাছ থেকে পান ৬০টাকা। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত এসব এজেন্টের মাধ্যমে কাটা জুয়ার টাকা ও নাম্বার সাড়ে তিনটার মধ্যই পৌঁছে দিতে হবে প্রধান এজেন্টে ভারত হতে আসা গুইমারা যৌথখামার এলাকায় বসবাসকারী খন্দ মার্মার কাছে।

একটি নির্দিষ্ট সূত্রমতে, শুধুমাত্র গুইমারা  উপজেলাতেই শিলংএর দৈনিক খেলা হয় ২-৩লক্ষ টাকা ড্র আর আনুষাঙ্গিক ব্যায় প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা। বাকি টাকা এজেন্টদের মুনাফা।

শিলংয়ের সাথে মিলিয়ে সপ্তাহে রবিবার ছাড়া বাকি ছয়দিনই এ জুয়ার আসর বসে। এছাড়া ভারতের রাষ্ট্রীয় ছুটির দিনে এ জুয়ার আসর বন্ধ থাকে। প্রতিদিন বিকাল ৫টায় জুয়ার ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার জুয়ার আসর দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও বরাবরই নিরব থাকছে স্থানিয় পুলিশ প্রশাসন।

প্রধান এজেন্ট খন্দ মার্মার নিকট জানার জন্য মোবাইল ফোনে বার বার কল দিয়ে ফোন বন্ধ থাকায় এবং বাড়িতে না থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এবিষয়ে গুইমারা সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, শীলং তো শুধু জুয়া নয় এটি একটি মানি লন্ডারিং। আমাদের দেশের টাকা বাইরে পাচার হচ্ছে। এত আলোচনার পরও কেন শীলং নামক ব্যাধিটি গুইমারা থেকে বন্ধ করা হচ্ছেনা।

তিনি আরও বলেন,এ জুয়াটিতে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও আসক্ত করা হচ্ছে। যার ফলে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে। দ্রুততম সময়ে এটি বন্ধ না হলে গুইমারা উপজেলায় এর প্রভাব আরও বৃহৎ আকার ধারন করবে। তাই এবিষয়ে প্রশাসনের নিস্বার্থ কার্যকর ভূমিকা কামনা করছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, আমরা এদের ধরার চেষ্টা করছি ধরতে পারলেই আইনগত ব্যবস্থা নিবো।

Exit mobile version