শ্রেণী কক্ষে ফিরেছে ২নং বাঘাইছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

বিশেষ প্রতিবেদন

পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট :

অবশেষে নিজেদের স্কুলে ফিরেছে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার ২নং বাঘাইছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। একটি বিশেষ মহলের বাঁধা ও হুমকির মুখে গত চার মাসেরও বেশী সময় ধরে শিক্ষা বঞ্চিত ছিল কোমলমতি এসব শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ সময় অনুপুস্থিতির পর নিজেরাই নিজেদের সন্তানের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে স্কুলে পাঠানো শুরু করে শিক্ষার্থীদের। নিজেদের প্রিয় স্কুল আঙ্গিনায় ফিরতে পেরে নিজেরাও খুশি এসব কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা।

সম্প্রতি ২নং বাঘাইছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে কলরবে ভরে আছে স্কুল আঙ্গিনা। যেন নতুন প্রাণের সঞ্চারিত হচ্ছে বাবুছড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কোথাও কোন কষ্টের চিহ্ন নেই। বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হারও আগের চেয়ে অনেক ভালো। প্রতিদিনই শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোন ধরনের আতঙ্ক বা ভয়ের চাপ লক্ষ্য করা যায়নি।

এবিষয়ে ৫১, বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন-বিজিবি‘র বাবুছড়া জোন অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো: কামাল আহমেদ পার্বত্যনিউজ-কে বলেন, জোনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাতায়াতের জন্য একাধিক রাস্তা করে দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা ও বিনোদনের জন্য উপকরণ দেয়া হয়েছে। সারাদেশের শিক্ষার্থীদের মতো তারাও একদিন দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজেদের তৈরী করবে এটা আমরা চাই। বিজিবি সে লক্ষকে সামনে রেখেই দুর্গম এ জনপদে কাজ করে যাচ্ছে।

কথা হলে ২নং বাঘাইছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অচিন্ত বিকাশ চাকমা পার্বত্যনিউজ-কে বলেন, ১০ জুন সংগঠিত ঘটনার পর থেকে ছাত্র/ছাত্রীরা স্কুলে আসছিলনা। ছাত্র/ছাত্রীদের স্কুলে না আসার পেছনে কোন মহলের চাপ ছিল কিনা- এমন প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়েই তিনি বলেন, দীর্ঘদিন না আসার কারনে ছাত্র-ছাত্রীদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা আসায় স্কুলের পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। পাঠদানও চলছে। তার ভাষ্যমতে, বিদ্যালয়ের তিন জন শিক্ষক-শিক্ষিকা বিদ্যালয়ে ১০৫জন শিক্ষার্থীকে সু-নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করছে।

৫১, বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন-বিজিবি‘র বাবুছড়া জোনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা ও বিনোদনের জন্য উপকরণ দেয়া হয়েছে নিশ্চিত করে তিনি পার্বত্যনিউজ-কে বলেন, বিজিবি‘র পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে। তিনি বিজিবির পক্ষ থেকে ভবিষ্যতেও সব সহযোগিতা প্রত্যাশা করে বলেন, একদিন এসকল শিশু শিক্ষার্থীই দেশের জন্য কাজ করবে।

আবারো স্কুলে আসতে পেরে উৎফুল্ল ২নং বাঘাইছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র মোহরসি চাকমা। গত কয়েক মাসে তাদের লেখাপড়ায় অনেক ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে সে চায় আর কখনোই যেন স্কুলটি বন্ধ না হয়। তবে সেদিনের সৃষ্ট ঘটনা বা পরবর্তী কোন বিষয়ে কিছুই জানেনা এ শিশু শিক্ষার্থী।

প্রসঙ্গত, গত ১০ জুন খাগড়াছড়ির দীঘিনালার বাবুছড়া ইউনিয়নের জয়ন্ত কুমার কার্বারী পাড়ায় ৫১, বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন-বিজিবি’র নির্মাণাধীন ক্যাম্পে হামলা করে স্থানীয় পাহাড়ী গ্রামবাসীরা। হামলায় বিজিবি‘র ৬ সদস্যসহ কমপক্ষে ২১ জন আহত হয়। পাহাড়ী আক্রমণকারীরা বিজিবি’র বেশ কিছু অস্ত্র ভেঙে ফেলে। এ ঘটনার পর বিজিবি‘র বিরুদ্ধে পাহাড়ী গ্রামে হামলা ও পাহাড়ীদের জমি জবরদখলের অভিযোগ এনে আন্দোলনে নামে স্থানীয় পাহাড়ীরা। একটি বিশেষ মহলের ইন্ধনে তারা বিজিবি‘র বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে। তারই অংশ হিসেবে বাবুছড়া জোন ঘেঁষা ২নং বাঘাইছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সন্তানদের পাঠানো বন্ধ করে দেয় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। পরে বিতর্কিত সিএইচটি কমিশনসহ বেশ কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাতীয় পর্যায়ে বিজিবি ও বাংলাদেশ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে নানা অপচেষ্টা চালায়- যা একনো অব্যহত রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন