ষষ্ঠ তারাবির আজকের বিষয়বস্তু : যে কারণে ৬ জাতির উপর আল্লাহর লা’নত

fec-image

আজ খতমে তারাবিহতে পবিত্র কোরআনের অষ্টম পারার শেষ অর্ধেক এবং নবম পারার পুরো অংশ। মোট দেড় পারা পড়া হবে।

সুরা আরাফের ১২ থেকে সুরা আনফালের ৪০ নম্বর আয়াত পর্যন্ত—এই অংশে রয়েছে
*আদম-হাওয়া (আ.) সৃষ্টির আদি ঘটনা
*শয়তানের ধোঁকা
*লজ্জা
*বিভিন্ন জাতি ধ্বংসের কারণ
*মুসা (আ.)-এর মোজেজা
*অপচয়
অংশবিশেষ এখানে তুলে ধরা হলো—

শয়তান যে কারণে জান্নাত থেকে বিতাড়িত হলো
আজকের তারাবির আলোচনা শুরু হয়েছে আল্লাহর সঙ্গে শয়তানের বাগ্‌বিতণ্ডা নিয়ে। মানুষ সৃষ্টির আগে আল্লাহর সৃষ্টিতে ফেরেশতা ও জিন ছিল। ইবলিস ছিল জিন জাতির সদস্য। আগুনের তৈরি। তবে সে থাকত ফেরেশতাদের সঙ্গে। একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করত। আল্লাহর সৃষ্টিতে তার ইবাদতের আলোচনা হতো।

পরে আল্লাহ দুনিয়ায় তাঁর প্রতিনিধি বানাতে চাইলেন। মানুষের আদি পিতা, সৃষ্টির প্রভাতপুরুষ আদম (আ.)কে সৃষ্টি করলেন। আল্লাহ ফেরেশতাদের আদেশ করলেন, আদমকে সেজদা করতে। ফেরেশতারা আদেশ পালন করেছিলেন। কিন্তু ফেরেশতাদের দলে থাকা ইবলিস সেজদা করল না।

ইবলিস প্রথমত, সেজদা না করে আল্লাহর আদেশের অবাধ্যতা করেছিল। দ্বিতীয়ত, কারণ হিসেবে অহংকার দেখিয়ে বলেছিল, ‘আমি আগুনের তৈরি আর আদম মাটির’। তৃতীয়ত, আল্লাহর সুস্পষ্ট আদেশের বিপরীতে যুক্তি দাঁড় করিয়েছিল; যা আল্লাহভীরুদের কাজ হতে পারে না। ফলে আল্লাহ তাকে জান্নাত থেকে বের করে দিলেন। সে আর কখনো জান্নাতে যেতে পারবে না।

অবাধ্যতা, অহংকার ও মিথ্যা যুক্তি তার পতন ডেকে এনেছিল। তাকে জান্নাত থেকে বিতাড়িত করেছিল। আল্লাহ বললেন, ‘নেমে যা এখান থেকে, এর ভেতরে থেকে অহংকার করবি, তা হতে পারে না। অতএব বেরিয়ে যা, অধমদের কাতারেই তোর স্থান।’ (সুরা আরাফ: ১৩)

নামাজের পোশাক যেমন হওয়া প্রয়োজন
সুরা আরাফে মানুষের পরিধেয় পোশাক সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা তিনবার আলোচনা করেছেন। মানুষকে সতর ঢেকে রাখা ও নামাজে উত্তম পোশাক পরার নির্দেশ দিয়েছেন। সতর ঢেকে রাখা ফরজ। লজ্জা-শরম ইমানের সৌন্দর্য। মুমিন কখনো সতর খোলা রেখে চলতে পারে না।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পুরুষদের সতর নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত এবং নারীদের সতর মুখমণ্ডল, হাতের তালু এবং পদযুগল ছাড়া অবশিষ্ট দেহ।’

ঢেকে রাখা অঙ্গগুলোর কোনো একটির এক-চতুর্থাংশ বা এর অধিক এক মুহূর্তের জন্যও ইচ্ছাকৃত খুলে ফেললে নামাজ ছুটে যাবে।

পবিত্র দেহ, সতেজ ও প্রফুল্ল মন, পরিপাটি ও উত্তম পোশাকে নামাজ আদায় করতে হবে। নিজের সবচেয়ে ভালো পোশাক পরে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমি মহামহিম আল্লাহর সামনে দাঁড়াচ্ছি। আমি মালিকের কাছে হাজিরা দিচ্ছি।

পৃথিবীতে কত কারণে আমরা নতুন ও উত্তম পোশাক পরি, সাজসজ্জা গ্রহণ করি; কিন্তু নামাজে দাঁড়াই অপরিচ্ছন্ন পুরোনো পোশাকে, অপ্রস্তুত এলোমেলো হয়ে; এ রকম কাজ আল্লাহর অপছন্দ। আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম সন্তান, প্রত্যেক নামাজের সময় সাজসজ্জা (সুন্দর পোশাকপরিচ্ছদ) গ্রহণ করো।’ (সুরা আরাফ: ৩১)

সুরা আরাফের ৬৫ থেকে ৮৭ নম্বর আয়াতের অংশবিশেষে রয়েছে
*নুহ জাতি
*আদ জাতি
*সামুদ জাতি
*লুত জাতি
*মাদায়েনবাসী ও
*বনি ইসরাইল
এই ছয় সম্প্রদায়ের অবাধ্যতা ও গজবে ধ্বংস হওয়ার আলোচনা রয়েছে। যথা—
১. কওমে নুহের নবী ছিলেন নুহ (আ.)। মূর্তিপূজা পরিত্যাগ না করার কারণে ভয়ংকর বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস দিয়ে নুহ (আ.)-এর জাতিকে ধ্বংস করা হয়েছিল।
২. আদ জাতির নবী ছিলেন হুদ (আ.)। শক্তি ও ক্ষমতার বাহাদুরি এবং মূর্তিপূজা না ছাড়ার কারণে বিভিন্ন আজাব দিয়ে আদ জাতিকে ধ্বংস করা হয়েছিল।
৩. সামুদ জাতির নবী ছিলেন সালেহ (আ.)। আল্লাহর নিদর্শন বিশেষ একটি উট হত্যার কারণে ভূমিকম্প দিয়ে সামুদ জাতিকে ধ্বংস করা হয়।
৪. কওমে লুতের নবী ছিলেন লুত (আ.)। সমকামিতার অপরাধে ভূমি উল্টে পাথরবৃষ্টি দিয়ে লুত (আ.)-এর জাতিকে ধ্বংস করা হয়েছিল।
৫. মাদায়েনবাসীর নবী ছিলেন শোয়াইব (আ.)। তাওহিদে অবিশ্বাস, মাপে কম দেওয়া, সম্পদ আত্মসাৎ, অর্থনৈতিক অসততা ও মানুষকে ধর্ম পালনে বাধা দেওয়ায় ভূমিকম্প দিয়ে মাদায়েন জাতিকে ধ্বংস করা হয়েছিল।
৬. বনি ইসরাইলের নবী ছিলেন মুসা (আ.)। নিজের ক্ষমতার প্রতি অন্ধ মোহ, মুসা ও হারুন (আ.)কে হত্যার পরিকল্পনা করার কারণে ফেরাউন ও তার জাতিকে নীল নদে ডুবিয়ে ধ্বংস করা হয়েছিল।

এই জাতিগুলোর অনেক ধ্বংসাবশেষ এখনো টিকে রয়েছে। মিসরে ফেরাউনের মমি, ফিলিস্তিন ও জর্ডান নদীর মধ্যবর্তী স্থানে ডেড সি বা মৃত সাগর, লুত সাগরের সন্নিকটে সিরিয়া ও হিজাজের সীমান্তবর্তী মাদায়িন জনপদ, মদিনার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত বর্তমান শহর আল উলা থেকে কয়েক মাইল ব্যবধানে সামুদ জাতির ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়।

যুদ্ধবিষয়ক বিধান—সুরা আনফাল
সুরা আনফাল মদিনায় অবতীর্ণ। এ সুরার আয়াতের সংখ্যা ৭৫। পবিত্র কোরআনের অষ্টম সুরা এটি। আনফাল ‘নফল’ শব্দের বহুবচন। অর্থ অতিরিক্ত। কাফেরদের সঙ্গে যুদ্ধ চলাকালে যে সম্পদ মুসলিমদের হস্তগত হয়, তাকে নফল বা গনিমত বলা হয়। এ সুরায় গনিমতের সম্পদ বণ্টন নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। তাই এ সুরাকে আনফাল বলা হয়। (তাফসিরে তাইসিরুল কোরআন)

সুরা আনফালের ১ থেকে ৪০ নম্বর আয়াতে রয়েছে
*আল্লাহর পথে জিহাদ,
*ইমানদারের বৈশিষ্ট্য,
*গনিমতের সম্পদ বণ্টনের নীতি,
*নবীজির বিরুদ্ধে কাফেরদের ষড়যন্ত্র,
*বদর যুদ্ধের বিস্তারিত বিবরণ,
*কাফেরদের ঠিকানা জাহান্নাম,
*মুসলমানদের অভিভাবক আল্লাহ ইত্যাদি বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।

এ ছাড়া আজকের তারাবির অংশে আদম ও হাওয়া (আ.) দুনিয়ায় আসার ঘটনা, নবীরা নিজ নিজ সম্প্রদায়কে কী বলেছিলেন, জবাবে সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় লোকজন কী বলেছিল, ফলে আল্লাহ কী করেছেন, আল্লাহর একত্ববাদের প্রমাণ, বনি ইসরাইলের ওপর আল্লাহর শাস্তি, শয়তানের ধোঁকা থেকে মানুষকে বাঁচার নির্দেশ, মুসা (আ.)-এর লাঠি ও ফেরাউনের জাদুর সাপ ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা রয়েছে।

বিষয়বস্তুর বিশদ আলোচনা বিভিন্ন তাফসির গ্রন্থে বিদ্যমান।

আর এই রমজানে প্রতি তারাবিতে তিলাওয়াতকৃত আয়াতের বিষয়বস্তুর সারকথা ধারাবাহিকভাবে থাকছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন