parbattanews

ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেই পাহাড়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির মাতৃভাষায় শিক্ষা অব্যাহত থাকবে

21.02.2017_Matiranga Vasa Mela news Pic (1)

নিজস্ব প্রতিবেদক, মাটিরাঙ্গা :

পাহাড়ের নানা সংস্কৃতির মেলবন্ধন সৃষ্টি করেছে দাবী করে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী একটি বিশেষ মহলের প্রতি ঈঙ্গিত করে বলেন, সরকার যখন পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির জাতিসত্ত্বার জন্য প্রাক-প্রাথমিকে স্ব স্ব মাতৃভাষায় পাঠ্যবই প্রণয়ন করে তা শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে তখন তারা সরকারের এ উদ্যোগকে প্রতারণা বলে প্রচারণা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, সব ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেই পাহাড়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির মাতৃভাষায় শিক্ষা অব্যাহত থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোন উদ্যোগই মাঝপথে থেমে যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক বেঁচে থাকতে আপনাদের কোন অপপ্রচারই সফলতার মুখ দেখবে না।

মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘ভাষা-সংস্কৃতি ও বই মেলা‘র সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মেলা আয়োজক কমিটির আহবায়ক ও মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিএম মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মাটিরাঙ্গা জোন অধিনায়ক লে. কর্ণেল কাজী শামশের উদ্দিন পিএসসি, মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মো. শামছুল হক ও মাটিরাঙ্গা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ প্রশান্ত কুমার ত্রিপুরা প্রমুখ বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

সমাপনী অনুষ্ঠানে মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কৃষ্ণলাল দেবনাথ, মাটিরাঙ্গা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হিরনজয় ত্রিপুরা ও মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুবাস চাকমা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সন্ত্রাসীদেরকে শুধুমাত্র সন্ত্রাসী উল্লেখ করতে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের প্রতি আহবান জানিয়ে প্রধান অতিথি বলেন, কিছু কিছু সংবাদ মাধ্যমে উপজাতীয় বা পাহাড়ী সন্ত্রাসী উল্লেখ করে সংবাদ পরিবেশন করছে। যা কাঙ্খিত হতে পারে না। তিনি বলেন, পাশের উপজেলা ফটিকছড়িতে কোন সন্ত্রাসী আটক হলে তাকে বাঙ্গালী বলা হয় না। সন্ত্রাসীদের পরিচয় শুধুমাত্র সন্ত্রাসী বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

স্ব-স্ব মাতৃভাষার স্বকীয়তাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ‘ভাষা-সংস্কৃতি ও বই মেলা’ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী বলেন, এ জন্য সকলকেই নিজের মাতৃভাষার পাশাপাশি অন্যের মাতৃভাষার প্রতিও সমান শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। তবেই আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা সহজতর হবে।

অ-উপাজীয় গুচ্ছগ্রাম সমিতির কার্ডধারী সদস্যদের কোটি টাকা অলস পড়ে থাকার কথা উল্লেখ করে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী এসব অর্থ আয়বর্ধক খাতে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে বলেন, গচ্ছিত অর্থের স্বদ্বব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আয়বর্ধক খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে সকলকে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাটিরাঙ্গা জোন অধিনায়ক লে. কর্ণেল মোহাম্মদ জিল্লুর হমান মফস্বল শহরে এমন আয়োজন মাতৃভাষার প্রতি মানুষের ভালোবাসা সৃষ্টি করবে মন্তব্য করে বলেন, এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন যে পথ দেখিয়েছে স্থানীয়দেরকেই সে উদ্যোগ আগামীতে অব্যাহত রাখতে হবে।

পরে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে মাটিরাঙ্গা উপজেরা প্রশাসন আযোজিত স্ব-স্ব মাতৃভাষায় (বাংলা, চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা) কবিতা আবৃতি, চিত্রাঙ্কণ ও রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে সনদপত্র ও উপহার তুলে দেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরীসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ। পরে তিনি মাটিরাঙ্গা শিল্পকলা একাডেমীর শীল্পিদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

এর আগে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরীসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের সাথে নিয়ে ভাষা ও সংস্কৃতি মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন এবং স্টল মালিকদের সাথে কথা বলেন।

Exit mobile version