সংষ্কারের একদিনের মাথায় উঠে গেছে নাইক্ষ্যংছড়ি-চাকঢালা সড়কের কার্পেটিং
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরে প্রশাসনের নাকের ডগায় সড়ক সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সংস্কার কাজে নিম্নমানের বিটুমিন, ময়লা আবর্জনা যুক্ত পাহাড়ি বালি ব্যবহার, সীলকোট না মানা এবং বৃষ্টিতে যেনতেনভাবে কাজ করা হচ্ছে।
এছাড়া সড়কে ছোট বড় গর্তে নিম্ম মানের ইটের খোঁয়া দিয়ে খুব পাতলাভাবে বিটুমিন দেওয়া হচ্ছে। অনেক জায়গায় ঠিকমতো বোল ড্রোজারও চালানো হয়নি। ফলে সড়কটিতে গর্তের ঢেউ রয়ে গেছে। যার কারনে গত তিনদিনের বৃষ্টিতে উপজেলা সদরের থানার মোড়, বাজারসহ সড়কের অনেক স্থানে কার্পেটিং উঠে গেছে বলে জানিয়েছেন এই সড়কে চলাচলরত রিক্সা ও টমটম চালকসহ ব্যবসায়ীরা।
এরপরও কাজ বন্ধ করেনি ঠিকাদার। বৃহস্পতিবার (৪ মে) নাইক্ষ্যংছড়িতে থেমে থেমে বৃষ্টি হলেও পানিতেই পিচ ঢালাই করা হয়েছে। এসময় ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ করলেও সংশ্লিষ্টরা কাজ করে গেছেন।
জানতে চাইলে কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, ঠিকাদার যে মালামাল দিয়েছেন এবং যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা মেনে তারা সড়কের কাজ করছেন। এর বাইরে তাদের করার কিছুই নেই।
জানা গেছে, বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগের বরাদ্দে নাইক্ষ্যংছড়ি-চাকঢালা সড়কের ২কিঃ মিটার সড়কের ভাঙ্গন এলাকায় সংষ্কারে ব্যয় ধরা হয় ২০ লাখ টাকা। ইউনুছ এন্ড ব্রাদার্স নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সে এই কাজটি করছেন বান্দরবানের ঠিকাদার ও জেলা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি সাইফুদ্দিন হারুন। স্থানীয়ভাবে কাজটি দেখাশুনা করছেন আবু হান্নান নামে এক যুবক।
গত সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা পরিষদ থেকে থানার মোড় পর্যন্ত কাজটি চলছি। এমন কাজের দৃশ্য দেখে দিনভর সমালোচনার ঝড় উঠে সর্বত্র। কাজে তদারকি করতেও দেখা যায়নি সওজ বিভাগের কাউকে। এরপর মঙ্গল ও বুধবার কাজ বন্ধ থাকলেও বৃহস্পতিবার বৃষ্টির মাঝেই কাজ করেছে শ্রমিকরা।
তবে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে রাস্তার কাজ বুঝে নেওয়ার দায়িত্বে থাকা বান্দরবান সওজ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মো. পারভেজ জানান, তিনি সরেজমিনে কাজ তদারকি করেন। তবে গত দুইদিন বৃষ্টির কারনে বাইরে আছেন।
সিডিউল অনুযায়ী যতটুকু কাজ করা প্রয়োজন ততটুকুই ঠিকাদার করছে বলে দাবী করেন সওজ বিভাগের এই এসও।
এদিকে বৃহস্পতিবার বৃষ্টির মাঝেই সড়কের কাজ করার কারনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাজারের ব্যবসায়ী খোকন সুত্র ধর, জামাল, সুমন শর্মা, শিক্ষক আমিন উল্লাহ, ছাঅং চাকসহ অসংখ্য স্থানীয় বাসিন্দা। তাদের মতে, প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন নিম্মমানের কাজ সরকারের উন্নয়ন কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এমন নিম্মমানের কাজ দুর্গম এলাকায়ও হয় কিনা সন্দেহ রয়েছে তাদের।
স্থানীয়রা জানান, এক পশলা বৃষ্টিতে সব কার্পেটিং উঠে গেছে। এত খারাপ কাজ উপজেলা সদরে করার কী দরকার ছিল প্রশ্ন রাখেন?
এই কাজটি নিয়ে খোদ ঠিকাদারদের মাঝেও অনেকে প্রশ্ন তোলেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে তারা জানান, উপজেলা সদরে এমন নিম্মমানের কাজের জন্য পুরো ঠিকাদার সমাজ লজ্জিত হয়েছে।
কাজটির ঠিকাদার বান্দরবান জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাইফুদ্দিন হারুন। মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি সীলকোট কাজ। মানুষ কেন “ভুল বুঝছে” তিনি বুঝতে পারছেন না।
নাইক্ষ্যংছড়ি-চাকঢালা সড়কে অনেক ছোট বড় গর্ত আছে সেসবস্থানে যে পরিমান মালামাল দেওয়ার কথা তা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে নিম্মমানের কাজের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সজিব আহমদ বলেন, নিম্মমানের কাজের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি, এই প্রতিবেদকের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। কাজের মানের বিষয়ে তিনি খোঁজ নিবেন।