parbattanews

‘সন্তানদের দেহ খুঁজে দিন, শেষকৃত্য করতে চাই’

উত্তাল ভারতের মণিপুর রাজ্যে দুই শিক্ষার্থীর দেহ জঙ্গলে পড়ে রয়েছে। এমন ছবি প্রকাশ্যে এলেও তাদের দেহের এখনো কোনো হদিস মেলেনি। সন্তানদের দেহ খুঁজে দিতে মণিপুর সরকারের কাছে আরজি জানিয়েছেন অভিভবকরা।

তাদের দাবি, সন্তানদের দেহ খুঁজে দেওয়া হোক, যাতে অন্তত মর্যাদার সঙ্গে শেষকৃত্যটা করতে পারেন তারা। দুই মেইতেই শিক্ষার্থীর হত্যাকাণ্ড নিয়ে তিন দিন ধরে উত্তাল রয়েছে।

এই ঘটনায় ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই)। দুই পরিবার তাই আশায় বুধ বেঁধেছে, সিবিআই ঠিক তাদের ন্যায়বিচারের ব্যবস্থা করবে।

জানা যায়, গত জুলাইয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন হিজম লিনথোয়িনগাম্বি ও ফিজম হেমজিত নামে দুই মেইতেই শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার তাদের একটি ছবি প্রকাশ্যে আসে।

যদিও সেই ছবির সত্যতা যাচাই করা যায়নি। সেই ছবিতে একটি জঙ্গলে তাদের দুইজনকে দেখা যায়। তাদের ঠিক পেছনে সশস্ত্র দুই ব্যক্তিকেও দেখা যায়। তারপর আরো একটি ছবি প্রকাশ্যে আসে।

সেখানে ওই দুই শিক্ষার্থীর দেহ জঙ্গলে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। আর সেই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই আবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মণিপুর।
সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে তরুণী শিক্ষার্থীর বাবা হিজম কুলাজিৎ বলেছেন, ‘সন্তানকে শেষবারের মতো দেখতে চাই। মর্যাদার সঙ্গে ওদের শেষকৃত্য করতে চাই। আমাদের যা ক্ষতি হয়ে গেল তা অপূরণীয়।

তিনি আরো বলেন, ‘যখনই মেয়ের ছবি দেখছি, চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে পানিতে। ওর মা বারবার জ্ঞান হারাচ্ছে। শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছে।’

ফিজমের বাবার মতো হিজমের পরিবারেরও আকুতি, সন্তানকে শেষবারের মতো দেখতে চায় তারা। হিজমের মা বলেন, ‘ছেলে নিখোঁজ হয়েছে দুই মাস পেরিয়ে গেছে। ওর কম্বলটায় এখনো ওর শরীরের গন্ধ পাই। আমার ছেলেকে শেষবারের মতো দেখতে চাই।’

বুধবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং আশ্বাস দিয়েছেন, হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে চরম শাস্তি দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও এই কথা জানিয়েছেন তাকে। কিন্তু দুই পরিবার চাইছে সন্তানদের দেহ খুঁজে বের করুক সরকার এবং তাদের হাতে তুলে দিক।

এদিকে দুই শিক্ষার্থীকে অপহরণ ও নৃশংস খুনের ঘটনায় চলতি সপ্তাহে নতুন করে অশান্ত হয়েছে মণিপুর। বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন শিক্ষার্থীরা। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে ইম্ফলে প্রায় ৫০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

এ ছাড়া গুজব ঠেকাতে মঙ্গলবার থেকে সে রাজ্যে ইন্টারনেট পরিষেবার ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বুধবার ঘোষণা করা হয়েছে, কুকি অধ্যুষিত পাহাড়ি অঞ্চলে আগামী ছয় মাসের জন্য বলবৎ থাকবে ‘সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন’ ‘আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট’ বা আফস্পা)।

সেই সঙ্গে কাশ্মীর থেকে আনা হচ্ছে মণিপুর ক্যাডারের আইপিএস কর্মকর্তা রাকেশ বলওয়ালকে। বর্তমানে শ্রীনগরে পুলিশের সিনিয়র সুপারিন্টেডেন্ট পদে কর্মরত রয়েছেন রাকেশ। কিন্তু দ্রুত তাকে সেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে মণিপুরে ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সূত্রের খবর, দক্ষ পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত রাকেশের অভিজ্ঞতাকে মণিপুরে সহিংসতা থামাতে কাজে লাগাতে চাইছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

প্রসঙ্গত, গত ৩ মে আদিবাসী ছাত্র সংগঠন অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অব মণিপুরের (এটিএসইউএম) কর্মসূচি ঘিরে মণিপুরে অশান্তির সূত্রপাত। মণিপুর হাইকোর্ট মেইতেইদের তফসিলি আদিবাসীর মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর পরেই আদিবাসী সংগঠনগুলো তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই সংঘাতের সূচনা হয় সেখানে। মণিপুরের আদি বাসিন্দা হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকি, জোসহ কয়েকটি তফসিলি আদিবাসী সম্প্রদায়ের সংঘর্ষে গত ছয় মাসে প্রায় ২০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘরছাড়ার সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

Exit mobile version