সন্তু গ্রুপের হামলা অপহরণ ও হয়রানির প্রতিবাদে ধুধুকছড়ায় ছাত্র-গণসমাবেশ

Dudukchara1


প্রেস বিজ্ঞপ্তি : গত ২০ মে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ২ যুগ পূর্তি সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের গাড়ি বহরে সন্তু গ্রুপের দুর্বৃত্তদের নির্বিচারে স্কুল ছাত্রদের ওপর গুলিবর্ষণ, ২ জনকে জখম, ছাত্রীদের মারধর-লাঞ্ছনা এবং ৪০ জনকে অপহরণ ও হয়রানির প্রতিবাদে ৭ জুন শুক্রবার সকাল ১০টায় পানছড়ি উপজেলার ধুধুকছড়ায় ছাত্র-গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
‘দুর্বৃত্তদের উৎপাত বন্ধে এগিয়ে আসুন, গড়ে তুলুন গণপ্রতিরোধ’ এই শ্লোগানে লোগাং ইউনিয়নের সর্বস্তরের ছাত্র জনতার ব্যানারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ধুধুকছড়া গ্রামের কার্বারী পূর্ণজীবন চাকমা। এতে আরো বক্তব্য রাখেন পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা, ১নং লোগাং ইউপি চেয়ারম্যান সমর বিকাশ চাকমা, ২নং চেঙ্গী ইউপি চেয়ারম্যান অনিল চন্দ্র চাকমা, ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক অংগ্য মারমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য জিকো ত্রিপুরা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি থুইক্যচিং মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাদ্রী চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের পানছড়ি উপজেলা কমিটির সভাপতি বরুণ চাকমা। সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পানছড়ি থানা শাখার সভাপতি সুমেধ চাকমা। সমাবেশ শুরুতে সন্তু গ্রুপের দুবৃত্তদের কর্র্তৃক হামলা শিকার ব্যক্তিদের নাম ছাত্র-জনতার উদ্দেশ্যে পড়ে শোনানো হয়।
সমাবেশে পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা বলেন, আমরা ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত চাই না। এ বিষয়ে আমরা জুম্ম জনপ্রতিনিধি সংসদের পক্ষ থেকে জনসংহতি সমিতির প্রধান সন্তু লারমাকে একটি চিঠি দিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এজন্য প্রয়োজন অচিরেই ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করা। এ সংঘাত বন্ধ হলেই পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার আদায়ের আন্দোলন জোরদার হবে। পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনীতে সরকার আমাদেরকে বাঙালি বানিয়েছে। এর বিরুদ্ধেও আন্দোলন করতে হবে।
তিনি ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের দাবিতে সোচ্চার হওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
লোগাং ইউপি চেয়ারম্যান সমর বিকাশ চাকমা বলেন, ২০ মে পিসিপির সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের গাড়িবহরে হামলা অত্যন্ত নিন্দনীয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের কারণে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এই সংঘাত অবশ্যই বন্ধ করা দরকার।
তিনি আরো বলেন, আমরা অনেক আশা নিয়ে শান্তিবাহিনীর আন্দোলনের সময় বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছিলাম। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে শত শত যুবক যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা অধিকার পাইনি।
তিনি বলেন, স্বৈরশাসকের মতো যারা ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করে তারা শেষ পর্যন্ত টিকতে পারে না। ক্ষমতার পালাবদল প্রয়োজন রয়েছে। সন্তু লারমা দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে। এখন দরকার সম্মানজনকভাবে সরে দাঁড়ানো। তিনি আলোচনার মাধ্যমে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানান।
চেঙ্গী ইউপি চেয়ারম্যান অনিল চন্দ্র চাকমা বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক হলে সত্য যে, আমরা যে সময় ক্ষেতে-খামারে কাজ করার কথা এ সময়ে এসে আমরা ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের জন্য প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশে সমাবেশ করতে বাধ্য হচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা আশা করেছিলাম চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে আর রক্ত ঝরবে না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমরা আমাদের ভাইয়ের বুকে গুলি চালাচ্ছি। সাধারণ জনগণ আর এই সংঘাত চায় না। আমাদের সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা দরকার। স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার অধিকার দরকার। কিন্তু সে অধিকার আমাদের নেই। প্রতিনিয়ত মানুষ গুলিতে মারা যাচ্ছে, হতাহত হচ্ছে। অচিরেই এ অবস্থার অবসান হওয়া জরুরী।
তিনি অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য এলাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানান ।
ইউপিডিএফ নেতা অংগ্য মারমা বলেন, আমাদের সকল প্রকার দুর্যোগ মোকাবেলা করে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। সেদিন যাদেরকে অপহরণ করা হয়েছিল এলাকাবাসী দৃঢ়তা দেখানোর ফলে সন্তু গ্রুপের দুর্বৃত্তরা তাদেরকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তকরণ প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করা হচ্ছে। একদিন কড়ায় গ-ায় এর হিসাব দিতে হবে। সরকার ভূমি কমিশনকে দিয়ে পাহাড়িদের ভূমি কেড়ে নেয়ার চক্রান্ত করছে। সেনাবাহিনীর মদদে সেটলার বাঙালিরা হরতাল পালন করছে। তিনি সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ ও সতর্ক থাকার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

One Reply to “সন্তু গ্রুপের হামলা অপহরণ ও হয়রানির প্রতিবাদে ধুধুকছড়ায় ছাত্র-গণসমাবেশ”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন