সন্তু লারমার সন্ত্রাসীরা বৌদ্ধ বিহার পুড়িয়েছে: দীপংকর মহাথের

fec-image

রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার ধুপশীল ধর্মপ্রিয় আন্তর্জাতিক বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র তথা বৌদ্ধ বিহারটি পিসিজেএসএস এর নেতা সন্তু লারমার সশস্ত্র গ্রুপের সদস্যরা আগুন দিয়ে পুঁড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিহারটির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ড. এফ দীপংকর মহাথের (ধুতাঙ্গ ভান্তে)।

সোমবার (১৮মে) দুপুরে রাঙামাটি প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সন্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানান তিনি।

দীপংকর মহাথের বলেন, গত ১৫ মে (শুক্রবার) দিনগত রাতে সন্তু লারমার সন্ত্রাসীরা ধুপশীল ধর্মপ্রিয় আন্তর্জাতিক বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র তথা বৌদ্ধ বিহারটিতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এতে প্রায় দুই কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।

অতীতের ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ২০১৬ সালে জুরাছড়ি উপজেলার নির্বাণগুহা থেকে রাতের অন্ধকারে আমাকে স্থান ত্যাগ করার জন্য বাধ্য করা হয়। জেএসএস এর কেন্দ্রীয় নেতা ভিক্টর চাকমা প্রধান সেবক শুক্রসেন তঞ্চঙ্গ্যাকে আমার সঙ্গ ত্যাগ করার জন্য বাধ্য করে।

২০১৬ সালের ১৮মার্চ বিলাইছড়িতে বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণে বাধা প্রদান করে। ২০১৭ সালের ১৯ জানুয়ারি বিলাইছড়ি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এবং জেএসএস নেতা শুভ মঙ্গল চাকমা আমাদের ধর্মীয় সভা বাতিল করতে বাধ্য করে।

২০১৭ সালের ২ডিসেম্বর বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের বিহারে শসস্ত্র হামলা। এতে ১০-১২জন নিহত হন। একই বছরের ১৭ ডিসেম্বর বিহারের সেবক অপহরণ এবং দেড়মাস পর উদ্ধার। ২০১৮ সালের পহেলা মার্চ বিলাইছড়ির ফারুয়া ইউনিয়নের বিহারে গুলিবর্ষণ। একই বছরের ২০ মার্চ বিহারে আবারও সশস্ত্র হামলা। হামলায় ৫-৬জন আহত হয়। ২১মার্চ নদী পথে ফারুয়া যাওয়ার সময় উলুছড়িতে সেবক সংঘ এবং ভিক্ষু সংঘের উপর গুলিবর্ষণ। এতে শিশুসহ ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়।
একই বছরের তুফান তঞ্চঙ্গ্যা নামের একজনকে অপহরণ করা হয়। কারণ তার বাবা আমার একনিষ্ট সেবক ছিলেন।

২০১৮ সালে বিমল তঞ্চঙ্গ্যা নামের এক ব্যক্তিকে ফারুয়া ইউনিয়নের গোয়াইনছড়ি এলাকায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ২০১৮ সালের ১ ও ১১ ফেব্রুয়ারি ভক্তকুলের পানের ক্ষেত নষ্ট করে দেওয়া হয়।
২০১সালের ৬ফেব্রুয়ারি ফারুয়া বৌদ্ধ বিহারে ভক্ত নবীন চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যার বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি জুরাছড়ি বৌদ্ধ বিহারের ভিক্ষু শ্রীমৎ ধর্মজিৎ ভিক্ষুকে অপহরণ করা হয় এবং ৪দিন পর আহত অবস্থায় উদ্ধার হয়।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি জুরাছড়ি আর্যচুগ বিহার থেকে বিক্ষু সংঘকে বিহার ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টম্বর বিলাইছড়ির ফারুয়া ইউনিয়ন থেকে বিহার উঠিয়ে নেওয়ার জন্য হুমকি প্রদান করা হয়।

২০১৯ সালের ২৮ জুন বিলাইছড়ি উপজেলার চেয়ারম্যান বীরোত্তম তঞ্চঙ্গ্যা, ফারুঢা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিদ্যালাল তঞ্চঙ্গ্যা এবং অন্যান্য জেএসএস নেতাকর্মীরা মিলে আমার বান্দরবানের ধুপশীল বিহারে ভক্তকুলদের সফর বাতিল করে। এবং সর্বশেষ ২০২০ সালের ১৫মে রাতের অন্ধকারে ধুপশীল বিহারটিকে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

এইদিকে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে দীপংকর মহাথের এর সাথে মুখোমুখি হয় পার্বত্যনিউজ।

আপনি বাঙ্গালী বলে আপনার সাথে এমন ঘটনা ঘটছে কিনা পার্বত্যনিউজের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আপনার কথা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। হয়তো সেটা ১০০ভাগ সঠিক হতে পারে আবার না হতেও পারে। তবে মূল সমস্যা হলো- আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করি। সন্ত্রাসীরা কোন ধর্মের অনুসারী হতে পারে না। আমি সত্য কথা বলার কারণে আমার সাথে সন্তু লারমার এত দ্বন্দ্ব।

তিনি আরও বলেন, দেখেন রাঙামাটির শ্রদ্ধেয় বনভান্তের সাথে সন্তু লারমার দ্বন্দ্ব ছিলো। সেটা আদর্শিক। কারণ বনভান্তে সন্তু লারমাকে পছন্দ করতেন না তার কর্মকাণ্ডের জন্য।

পার্বত্য ভিক্ষুর সাথে আপনার কোন দ্বন্দ্ব আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি জানান, আমার সাথে কোন দ্বন্দ্ব নেই। আমার দ্বন্দ্ব হলো- ভাল আর খারাপের সাথে। যারা খারাপ তাদের আমি পরিহার করি আর যারা ভাল তাদের গ্রহণ করি।

তিনি জানান, আমি সন্ত্রাসীদের হাত থেকে ধর্মীয় কেন্দ্রগুলো বাঁচাতে চাই। এজন্য প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।

এসময় মাহানাম ভিক্ষু, মেগিউ ভিক্ষু, প্রজ্ঞামিত্র ভিক্ষু এবং জ্যেতিক্ষ ভিক্ষুসহ ভান্তের অন্যান্য অনুসারীরা উপস্থিত ছিলেন।

দীপঙ্কর ভান্তের পূর্ণ বক্তব্য

“আমি আমার বক্তব্য উপস্থাপনের পর সমস্ত বিষয়বস্তু জেনে অসংখ্য নিরীহ ধার্মিক মানুষের ন্যায় আপনারাও ব্যথিত হবেন এবং চরম দুঃখানুভব করবেন। এই কারণে যে, গত ১৫-০৫-২০২০ ইংরেজী তারিখ রোজ শুক্রবার দিবাগত রাত আনুমানিক ৯.৩০ ঘটিকার সময় রাঙ্গামাটি জেলার অন্তর্গত বিলাইছড়ি উপজেলায় ধুপশীল “ধর্মপ্রিয় আন্তর্জাতিক বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র” তথা বৌদ্ধ বিহার আঞ্চলিক দল জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) লিডার জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা সন্ত বাবু’র সংগঠিত সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা আগুনে পুড়িয়ে সমস্ত স্থাপনা ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এতে থাইল্যান্ড কর্তৃক প্রেরিত অষ্টধাতুর সুবিশাল মহা মূল্যবান বুদ্ধমূর্তি ও ছোট-মাঝারি অনেক বুদ্ধমুর্তি, বুদ্ধবানী পবিত্র ত্রিপিটক, ভিক্ষু সংঘ, গৃহীসংঘ ও ভাবনাকারীদের (মেডিটেশন) নানাবিধ ব্যবহার্য সামগ্রী, আসবাবপত্র সহ এই ভাবনা কেন্দ্রের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক  ২,০০,০০,০০০/- (দুই কোটি) টাকা।

আপনাদের জ্ঞাতার্থে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন সময় উক্ত সন্ত্রাসী দ্বারা নানাভাবে হয়রানী ওঅত্যাচারের কিছু ঘটনাবলী নিম্নে উপস্থাপন করছি।

বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলীঃ-

১) ২০১৬ সাল, স্থানঃ নির্বাণগুহা, জুরাছড়ি, রাঙ্গামাটি।

আমাকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে রাতের অন্ধকারে স্থান ত্যাগ করার জন্য বাধ্য করে। জেএসএস কেন্দ্রীয় নেতা ভিক্টর চাকমা কর্তৃক আমার প্রধান সেবক শুক্রসেন তঞ্চঙ্গ্যাকে উক্ত নির্দেশ প্রদান করেন। শুক্রসেন তঞ্চঙ্গ্যা ভয়ে ভীত হয়ে আমার ৩ জন জ্ঞাতি রতন বড়ুয়া, দুলাল বড়ুয়া ও নিপু বড়ুয়াকে ফোনে অনুরোধ জানান আমাকে রাতের অন্ধকারে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

২) মার্চ ২০১৬ সাল

জেএসএস নেতা ভিক্টর চাকমা কর্তৃক আমার প্রধান সেবক শুক্রসেন তঞ্চঙ্গ্যাকে কেন্দ্রে ডেকে নিয়ে আমার সঙ্গ ত্যাগ করার জন্য বাধ্য করে। অন্যথায় মৃত্যুর হুমকী প্রদান করে।

৩) ১৮-০৩-২০১৬ সাল, স্থানঃ ধূপশীল, বিলাইছড়ি, রাঙ্গামাটি।

ঘটনাঃ সীমা বিহার নির্মাণে বাধা প্রদান।

৪) ১৯-০১-২০১৭ ইং ধর্মসভা বাতিলের হুমকী।

বিলাইছড়ি উপজেলা সদরে প্রাক্তন চেয়ারম্যান শুভ মঙ্গল চাকমা (বিলাইছড়ি উপজেলা জেএসএস নেতা) আমার নির্ধারিত ধর্মসভাকে কেন্দ্র করে আমার সেবক শিক্ষক সুদর্শন বড়ুয়াকে ধর্মসভা বাতিল করার জন্য বাধ্য করে। ধর্মসভা বাতিল না করলে মৃত্যুর হুমকি প্রদান করা হয়।

৫) ০২-১২-২০১৭ সাল, স্থানঃ ফারুয়া, বিলাইছড়ি, রাঙ্গামাটি।

ঘটনাঃ বিহারে সশস্ত্র হামলা, আহত ১০/১২ জন।

৬) ১৭-১২-২০১৭ সাল, স্থানঃ ফারুয়া, বিলাইছড়ি, রাঙ্গামাটি।

ঘটনাঃ বিহারের সেবক অপহরণ

নামঃ নীলচাঁন তঞ্চঙ্গ্যা, প্রায় দেড় মাস পর উদ্ধার ।

৭) ০৩-০১-২০১৮ সাল, স্থান ও স্থানঃ ফারুয়া, বিলাইছড়ি, রাঙ্গামাটি।

ঘটনাঃ বিহারে গুলি বর্ষণ, গুলিবিদ্ধ হয় বিশ্বরায় তঞ্চঙ্গ্যা।।

৮) ২০-০৩-২০১৮ সাল, স্থানঃ ফারুয়া, বিলাইছড়ি, রাঙ্গামাটি।

ঘটনাঃ বিহারে সশস্ত্র হামলা, ৫/৬ জন আহত হয়। বিহারের বিভিন্ন মূল্যবান সম্পত্তির জাতি সাধন করা হয়।

১) ২১-০৩-২০১৮ সাল, স্থানঃ ফারুয়া, বিলাইছড়ি, রাঙ্গামাটি।

ঘটনাঃ নদী পথে ফারুয়া যাওয়ার সময় উলুছড়িতে সেবক সংঘ ও ভিক্ষু সংঘের উপর সরাসরি গুলি বর্ষণ, ১০ বছর বয়সী ০১ জন শিশু গুলিবিদ্ধ হয়।

১০) ২০১৮ইং অপহরণ ।

নামঃ তুফান তঞ্চঙ্গ্যা, পিতা- সমূল্য তঞ্চঙ্গ্যা (হেডম্যান), গ্রামঃ এগুজ্যাছড়ি, ফারুয়া, বিলাইছড়ি, রাঙ্গামাটি।

উক্ত ব্যক্তিকে জেএসএস সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে। ৪ মাস পর উদ্ধার হয়। তার অপরাধ হলঃ তার পিতা আমার একনিষ্ট সেবক।

১১) ২০১৮ইং পিটিয়ে হত্যা ।

নামঃ বিমল তঞ্চঙ্গ্যা (শেয়াল্যা), গ্রামঃ গোয়াইনছড়ি, ফারুয়া, বিলাইছড়ি, রাঙ্গামাটি।

উক্ত ব্যক্তিকে ফারুয়া ছাতলী এলাকায় জেএসএস সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। তার অপরাধ হলঃ বিহারে বা কুটিরে নিয়মিত যায় কেন?

১২) ০১ ও ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সাল।

স্থানঃ ফারুয়া, বিলাইছড়ি, রাঙ্গামাটি।

উক্ত বিহারের একনিষ্ট ভক্তদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করার উদ্দেশ্যে পানের বরজে আগুন লাগিয়ে আনুমানিক ১২টি পান ক্ষেত নষ্ট করে দেয়।

১৩) ০৬-০২-২০১৮ সাল।

স্থানঃ ফারুয়া, বিলাইছড়ি, রাঙ্গামাটি।

ফারুয়া বিহারের সেবক বিহারে গিয়ে ধর্ম প্রতিপালন করায় নবীন চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যার বাড়িতে সন্ত্রাসীরা অগ্নি সংযোগ করে তার পুরো  বাড়িটি পুড়িয়ে দেয় ।

১৪) ১০-০২-২০১৯ সাল, স্থানঃ নির্বাণগুহা, জুরাছড়ি, রাঙ্গামাটি।

ঘটনাঃ আবাসিক ভিক্ষু শ্রীমৎ ধর্মজিৎ ভিক্ষুকে অপহরণ ও মারধর। আহত অবস্থায় অপহরণের ৪ দিন পর উদ্ধার।

১৫) ০২-০৪-২০১৯ সাল, স্থানঃ আর্যচুগ, জুরাছড়ি, রাঙ্গামাটি।

ঘটনাঃ ভিক্ষু সংঘকে বিহার ত্যাগে বাধ্য করা অন্যথায় হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। ফলে ভিক্ষু সংঘকে প্রত্যাহার করা হয়।

১৬) ১৪-০৯-২০১৯ সাল, স্থানঃ ফারুয়া, বিলাইছড়ি, রাঙ্গামাটি।

ঘটনাঃ বিহার/কুঠির উঠিয়ে নেওয়ার জন্য হুমকি প্রদান।

১৭) ২৮ জুন ২০১৯ সাল।

আমার বান্দরবান হতে ধুপশীল ও ফারুয়া গমনের জন্য দিনক্ষণ নির্ধারিত হলে বিলাইছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান বীরোত্তম তঞ্চঙ্গ্যা, ফারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিদ্যালাল তঞ্চঙ্গ্যা ও অন্যান্য জেএসএস নেতাকর্মী কর্তৃক বাধা প্রদান করে ধর্ম সফর বাতিল করে দেয়।

১৮) ১৫-০৫-২০২০ সাল, স্থানঃ ধূপশীল, বিলাইছড়ি, রাঙ্গামাটি।

প্রথম ঘটনাঃ রাত আনুমানিক ৯.৩০ ঘটিকায় ধর্মপ্রিয় আন্তর্জাতিক বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রে (ধুপশীল মহা শশ্মান) আগুন লাগানো হয় এবং সম্পূর্ণ ভাবনা কেন্দ্র পুড়ে যায়। একজন বিহারের সেবককে অস্ত্র প্রদর্শন করে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও মারধর করা হয়।

দেশ প্রেমিক সাংবাদিকবৃন্দ,

আমাদের বাংলাদেশের স্মরণাতীত কাল থেকে অদ্যাবধি আত্মধর্মীয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পরস্পর পরস্পরের ধর্মের প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা ও গৌরভ প্রদর্শন করা একটি চমৎকার ইতিহাস প্রচলিত আছে। ধুপশীল ধর্মপ্রিয় আন্তর্জাতিক বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রটি ভিন্ন ধর্মের লোকজন কর্তৃক যদি ধ্বংস করা হত সেটা ভিন্ন বিষয়। তখন হয়ত অসংখ্য নিরীহ ধার্মিক মানুষের চিত্ত আজ এত দুঃখ ভারাক্রান্ত হত না। কিন্তু বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে বৌদ্ধ হিসেবে যারা পরিচিতি সেই বৌদ্ধ নামধারী জেএসএস সন্ত্রাসী কর্তৃক উক্ত ভাবনা কেন্দ্রটি অগ্নিসংযোগ করে ধ্বংস করা হয়। যেখানে শতকরা ৯৯% বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারি বসবাস করে সেখানে এমন চরম নির্মম ধ্বংসযজ্ঞ চালালো কেন? চালাবে কেন? এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয় নি? এটাই আপনাদের সবার কাছে আমার প্রশ্ন।

প্রিয় সাংবাদিক মিত্রগণ,

প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশে জাত-পাত, নিম্নবর্ণ, উচ্চবর্ণ, গোত্রে বৈষম্য, মানুষে-মানুষে- বিভক্তি, বিভাজন ইতিহাসের পাতায় দৃষ্ট হয়। সর্বোপরী তখনকার দিনে অতী ব্রাহ্মণ্যবাদীদের অত্যাচার-নির্যাতন, নিষ্পেষনের ফলে সাধারণ মানুষ ছিল হতাশাগ্রস্থ। ভারতীয় সংবিধান প্রনেতা ড. বি আর আম্বেদকর ছিলেন নিম্নবর্ণের হিন্দু অর্থাৎ দলীত গোত্রে জন্মগ্রহণ করার কারণে ব্রাহ্মণ্যবাদীদের দ্বারা তাঁকেও এই অত্যাচারের স্বীকার হতে হয়েছিল। তিনি ব্রাহ্মণ্যবাদের বিশাক্ত ছোবলে বিরক্ত হয়ে ৩ লক্ষ দলিত সম্প্রদায় নিয়ে মহারাষ্ট্র নাগপুরে ধর্মান্তরিত পূর্বক শান্তির ধর্ম হিসেবে প্রচারিত বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন এবং বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারি হয়েই মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে বাংলাদেশে স্বধর্মীয়, স্বগোত্রিয় অধার্মিক বৌদ্ধ নামধারী জেএসএস সন্ত্রাসীদের ছোবল, অত্যাচার-নির্যাতনের কারণে অসংখ্য নিরীহ সহজ সরল বৌদ্ধ ধর্মালম্বী মানুষগুলো কি অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত হবে? এই অসংখ্য মানুষগুলো কি অন্য ধর্ম অবলম্বন করবে? এটাই আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন।

দেশ প্রেমিক সাংবাদিকবৃন্দ,

দেশ, জাতি ও সমাজের শান্তিপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বুদ্ধের অহিংসা বানী প্রচার করছি আমি। সেই জায়গায় এই নিরীহ মানুষগুলোর আদা বিক্রি করে, হলুদ বিক্রি করে, জুমচাষ করে অতীব সাধারণ জীবন যাপন করা সত্ত্বেও অতি কষ্টার্জিত অর্থ দ্বারা নির্মিত এই ভাবনা কেন্দ্রটি কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠাপিত বুদ্ধমুর্তি ও বুদ্ধনী পবিত্র ত্রিপিটক অগ্নিসংযোগ দ্বারা ধ্বংসযজ্ঞ কেন? এই ভাবনা কেন্দ্রে হাজার হাজার মানুষ বুদ্ধের ধর্মের প্রার্থনা ও ধ্যান সাধনা করার স্থানে ধ্বংসযজ্ঞ কেন? সাধারণত যুদ্ধ ক্ষেত্রে যোদ্ধাগণ কিছু নিয়মনীতি মেনে চলেন। যেমন শস্যক্ষেতে আগুন লাগানো, শিশুদের উপর অত্যাচার, মাতৃজাতির উপর অত্যাচার, ধর্মীয় উপাসনালয় এবং ধর্মীয় গুরুদের

উপর আঘাত করা নিষিদ্ধ মানা হয় এবং জঘন্য অপরাধ বলে বিবেচিত হয়। সেক্ষেত্রে বিনাযুদ্ধে এই ভাবনা বৌদ্ধ বিহার, বুদ্ধমুর্তি, পবিত্র ত্রিপিটকে এই অগ্নিসংযোগ কেন? এটা কোন ধরনের অপরাধের মধ্যে পড়ে তা বিবেচনার দায়িত্ব দেশ, জাতি ও সমাজের উপর । বাংলাদেশের সংবিধানে ২ (ক) ৪১ অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে যে, প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রয়েছে। সেখানে ধর্ম আচার-আচরণে, প্রচার-প্রচারনায় এবং প্রতি পালনে জেএসএস বাহিনী কর্তৃক প্রতিনিয়ত এত বাধা-বিপত্তি এবং আক্রমণ কেন? এবং স্বাধীন ভাবে ধর্ম প্রতিপালনে অধিকার কেড়ে নিচ্ছে কেন?

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,

আমি কারো সাজা, শাস্তি চাই না বা অমঙ্গল কামনাও করতে পারি না। কিন্তু আমি তা সত্য প্রকাশ করতেই পারি। তাই বাংলাদেশে সবার সুখ-শান্তি ও নিরাপত্তা কামনায় আজকে আপনাদের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও দেশবাসীর কাছে আমার এই সত্য ভাষণ।

পরিশেষে রাষ্ট্র এবং আপনাদের সবার কাছে আমার আবেদন প্রত্যেক ধর্মের মানুষেরা নিজ নিজ ধর্ম শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিপালন ও প্রচার প্রসার যেন করতে পারে তার শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই, মৈত্রীপূর্ণ জীবন চাই। সবাই যেন সম্মানজনকভাবে বাচঁতে পারে। বাংলাদেশে তথা সমগ্র বিশ্বে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধ হোক। অশান্ত বিশ্বে শান্তি

বিরাজ করুক এটাই বুদ্ধের উপদেশ।

সমগ্র বিশ্বে আজ মরণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা মৃত্যু বরণ করেছে তাদের পারলৌকিক সদগতি কামনা করছি। যারা করোনা ভাইরাস ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত তাদের আরোগ্য কামনা করছি। আর যারা সুস্থ ও স্বাভাবিক আছে তাদের নিরোগ ও দীর্ঘ জীবন কামনা করছি।

জগতের সকল প্রাণি শত্রুমুক্ত হউক, বিপদমুক্ত হউক, রোগমুক্ত হউক, সুখী হউক, সবার উপর শান্তি বর্ষিত হউক।

 সকলের কল্যাণ কামনায়

ড, এফ দীপংকর মহাথের (ধুতাঙ্গ ভান্তে)”।

 

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: বৌদ্ধ বিহার, বৌদ্ধ মন্দির ও বুদ্ধ মূর্তি ভাঙচুর, বৌদ্ধ মন্দির পোড়ানো
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন