parbattanews

সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধে আর্থিক যোগানের মূল ভিত্তি কাঠ পাচার বন্ধ জরুরী

বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় পার্বত্য চট্টগ্রামের জীববৈচিত্র্য ও বনাঞ্চল রক্ষার স্বার্থে এ অঞ্চলে সব ধরণের গাছ কাটা নিষিদ্ধ করেছে৷ যে সমস্ত গাছ কাটার উপযোগী এবং প্রয়োজন তা বন বিভাগ থেকে পারমিট নেওয়ার মাধ্যমে কাটার সুযোগ রয়েছে। বলাবাহুল্য যে, বন বিভাগ থেকে পারমিট নেওয়ার শর্ত অনেক কঠিন, যা সাধারণ একজন মানুষের পক্ষে নেওয়া কষ্টকর। গাছের পারমিটে এই কঠিন শর্ত দেওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে অবৈধভাবে যে কেউ যেন গাছ কাটতে না পারে৷

বৈধভাবে গাছ কাটলে বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের পকেট ভরবে না। তাই পকেট ভরাতে তারা অবৈধভাবে গাছ কাটাতে এবং কাঠ পাচার করাতে গোপনে, প্রকাশ্যে উৎসাহ দেয়৷ প্রতিটি অবৈধ কাঠের গাড়ি প্রতি বন বিভাগকে ৩ শত থেকে ১ হাজার টাকা দিতে হয়। বড় ধরনের বাগান কাটলে বন বিভাগকে তার দামের ৫% দিতে হয়। এরা সন্ত্রাসী দলগুলোর মত চাঁদাবাজ। সরকারি আরো অনেক দপ্তর, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি অবৈধ কাঠের গাড়ি হইতে চাঁদা নেয়। পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি না ঘটাতে সব প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ থেকে বিরত থাকা হলো। তবে তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের চেয়ে রাঙ্গামাটি অঞ্চলে বন উজাড় বেশি হয়। এখানে সন্ধ্যা নামলেই কাঠ পাচারকারীদের উৎপাত বেড়ে যায়।

এবার মূল কথায় আসি। জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা পরিচালিত বিচ্ছিন্নতাবাদী ‘জনসংহতি সমিতি’ (জেএসএস) ও প্রসিত খীসা পরিচালিত’ ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’ (ইউপিডিএফ) নামক আঞ্চলিক সন্ত্রাসী দলগুলোর অস্ত্র ক্রয় ও প্রশিক্ষণসহ সাংগঠনিক পরিচালনার জন্য আর্থিক সংহতির মূল উৎস হচ্ছে ‘অবৈধ কাঠ পাচার’৷ দলগুলো নিজেদের খেয়াল খুশি মত অবৈধ কাঠের পারমিট দিয়ে থাকে৷ তাদের অনুমতি নিয়ে পাহাড়ের ভিতর থেকে অবৈধভাবে কাঠ আসে। তাদেরকে গোল কাঠ ট্রাক প্রতি ২৫ হাজার টাকা দিতে হয়। লাকড়ি গাড়ি প্রতি ৫ হাজার টাকা দিতে হয়। গাছের বাগান বিক্রি করলে মোট দামের ১০% দিতে হয়।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ইউপিডিএফ এর এক শীর্ষ নেতা জানান, ইউপিডিএফ এর সাংগঠনিক পরিচালনার ৭০% অর্থ আসে কাঠ-বাঁশ থেকে৷ দলগুলো এখন মানুষ থেকে আগের মত চাঁদা নেওয়ার উপর নির্ভরশীল নয়। এখন বিকাশ এর মাধ্যমে টাকা নিয়ে থাকে।

শুধুমাত্র কাঠ-বাঁশের চাঁদায় সন্ত্রাসী দলগুলোর সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যথেষ্ট। একই ঘটনা জেএসএস এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সাম্প্রতিক সময়ে ইউপিডিএফ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার, গুজব ও কুৎসা রটিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সেনাবাহিনী তথা সকল নিরাপত্তা বাহিনী সম্পর্কে বিদ্বেষমূলক বার্তা দিচ্ছে।

আঞ্চলিক সন্ত্রাসী দলগুলো বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনীকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে উচ্ছেদে কূটনীতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে এবং অত্যাধুনিক অস্ত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করে প্রতিনিয়ত পাহাড়ে চাঁদাবাজি, অপহরণ ও হত্যাসহ রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করছে। তাদের এই দেশদ্রোহিতামূলক কর্মকাণ্ডের অর্থনৈতিক যোগান ও অর্থের মূল উৎস হচ্ছে ‘কাঠ পাচার’৷

স্থানীয় জনসাধারণ ও গোয়েন্দাসংস্থাগুলোর দাবি অবৈধ কাঠ পাচার বন্ধ করতে না পারলে উক্ত দলগুলোর অর্থের মূল উৎস বন্ধ করা কোনভাবেই সম্ভব হবে না। তারা চাঁদাবাজির টাকা দিয়ে অবৈধ অস্ত্র ক্রয় করে বাঙ্গালী, সেনাবাহিনী ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে।

আঞ্চলিক সন্ত্রাসী দলগুলোর লাগাম টেনে ধরতে হলে আপাতত কাঠ পাচার বন্ধ রাখতে হবে৷ যেহেতু সরকার থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল রক্ষার জন্য কাঠ পাচার নিষিদ্ধ-সেহেতু আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবৈধ কাঠ পাচার রোধ করতে সচেতন থাকতে হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে।

শুধু আঞ্চলিক সন্ত্রাসীদলগুলোর তৎপরতা নিয়ন্ত্রণই নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে এ বন উজাড় ও কাঠ পাচার বন্ধ করা জরুরী।

♦ লেখক: রাঙামাটি থেকে

Exit mobile version