সবুজ পাহাড়ে তরল সোনা- পাম চাষে
কোটি টাকা আয়ের স্বপ্ন কৃষকের চোখে
দুলাল হোসেন, খাগড়াছড়ি:
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ন্যায় পার্বত্য চট্টগ্রামেও দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তরল সোনাখ্যাত পাম অয়েল চাষ। ব্যক্তি উদ্যোগে পার্বত্য খাগড়াছড়িতে ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে ৪০টি পাম বাগান। বিদ্যুতের সংযোগ না থাকায়, পর্যাপ্ত পানি সেচ দিতে না পারায়, ফিকে হতে বসেছে কৃষকদের সাজানো স্বপ্ন। এত কিছুর পরেও সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে খাগড়াছড়িকে আরেকটি মালেশিয়া করার স্বপ্নে বিভোর তারা।
কৃষিবিদদের মতে পৃথিবীর ৪২টি দেশে পাম অয়েল চাষ হয়। মোট উৎপাদিত পামের মধ্যে ৪৪% মালয়েশিয়ায় উৎপাদিত হয়। দেশটি সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে যে,‘সবুজ গাছের তরল সোনা (পাম অয়েল) পাল্টে দিয়েছে মালয়েশিয়া’-কে। কৃষিবিদদের মতে বাংলাদেশ ট্রপিক্যাল জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত যা পাম চাষের উপযোগী। মালয়েশিয়ার একটি কাদি থেকে বছরে যেখানে ৪০-৬০ কেজি পর্যন্ত পাম ফল পাওয়া যায় সেখানে বাংলাদেশে উৎপাদিত প্রতি কাদি থেকে ৭০-৮০ কেজি পর্যন্ত ফল পাওয়া সম্ভব। খাগড়ছড়িতে সবচেয়ে বড় পাম বাগান মানিকছড়ি উপজেলার বনলতা এগ্রো প্রাইভেট লিমিটেড। এ বাগানে রয়েছে ১০ হাজার পাম গাছ। এ ছাড়াও মাটিরাংগার আকবর কোম্পানীর বাগানে আছে প্রায় তিন হাজার পাম গাছ । খাগড়াছড়ি জেলায় ৪০টি বাগানের বেশিরভাগ বাগানের গাছে এসেছে ফল। এখন অপেক্ষা শুধু প্রক্রিয়াজাত করনের।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, পাম গাছের বৈজ্ঞানিক নাম এলিইস গিনিসিস। গাছটি প্রায় ৫হাজার বছর পূর্বে পশ্চিম আফ্রিকায়, সিয়েরা লিওয়ন, সেনেগাল, গিনি, গামবিয়া, নাইজেরিয়া, মালে প্রভৃতি দেশে চাষ হয়ে আসছে। বিশ্বায়নে এই যুগে এর চাষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। পাম গাছ রোপনে ৩-৪ বছরের মধ্যে ফল দেওয়া শুরু করে। গুচ্ছমূল জাতীয় উদ্ভিদটি ৪০-৫০ বছর পর্যন্ত প্রতি কাদিতে ৪০-৮০ কেজি পর্যন্ত ফল দেয়। প্রতি গাছে বছরে ১০-২০টি থোকা/ছড়া আসে এবং প্রতিটি গাছ থেকে বাৎসরিক আয় ১০ হাজার টাকা ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা রাখা এই গাছ অন্যান্য গাছের তুলনায় পনেরো-বিশ গুন বেশি অক্রিজেন দেয় এবং অধিক পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্রাইড শোষণ করে। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, পাম অয়েল ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল না থাকার পাশাপাশি এই তেল ব্যবহারের ফলে রক্তে মোট কোলেস্টেরল মাত্রা বাড়ে না। এছাড়া পাম তেলে বিদ্যামান ক্যারোটিকনোইড টোকোপেনড থাকায় তা ক্যান্সার প্রতিরোধক ও হৃদরোগে উপকারী এবং পাম তেল ব্যবহারে মানবদেহে উপকারী এইচডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে কিন্তু ক্ষতিকারক এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়।
কৃষি কর্মকর্তা প্রনব বড়ুয়া, রনজিত চক্রবর্তী এবং উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পহেলী চাকমা জানায় পরিকল্পিত উপায়ে দেশব্যপী ব্যাপক হারে পাম চাষ করে দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। এতে ভোজ্য তেল আমদানি বাবদ কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এছাড়া পাম চাষের জন্য এদেশের মাটি ও আবহাওয়া মালয়েশিয়ার চেয়ে বহুগুন উন্নত। ফলে গোটা দেশের অর্থনীতির চিত্র পাল্টে যাবে বলে মত দিয়েছেন তারা।
তারা আরো বলেন, পাম গাছ থেকে শুধুমাত্র পামওয়েল উৎপাদিত হয়না। পাশাপাশি সাবান, কনডেন্স মিল্ক, নারকেল তৈল তৈরীর মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের কাঁচামাল হিসেবে ব্যাবহার হয়ে থাকে এই পাম ফল। তাই এ সুযোগ কাজে লাগানো গেলে পাম অয়েল উৎপাদনে আরেকটি মালয়েশিয়াকে হতে পারে বাংলাদেশ।
তিন পার্বত্য জেলার মাটি পাম গাছ চাষের জন্য বেশ উপযোগী।পাহাড়ে অব্যবহ্রত ভুমিতে ব্যাপক হারে পাম চাষ করে এখানকার বিরজমান বেকার সমস্য দূর করা সম্ভব।