সমঅধিকার চান দেশের সমকামীরা

সস

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক :

সমকামিতা নিয়ে কমবেশি গোটাবিশ্বেই আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী সমকামী ছেলে-মেয়েরা তাদের এ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে স্বাভাবিক উল্লেখ করে সমাজে একই সাথে বসবাসের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। বেশকিছু দেশে তাদের স্বীকৃতিও মিলেছে।

বাংলাদেশেও যে সমকামীরা রয়েছে এটা জানা ছিল। কিন্তু এবার জানা গেল তারা সমাজে তারা বসবাসের সমান অধিকার চায়। লন্ডন ভিত্তিক জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম বিবিসি এক রিপোর্টে এমন দাবী করেছে।

সংবাদে আরো জানানো হয়, শুধু ছেলেরাই যে ছেলেদের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে তাই নয় মেয়েরাও মেয়েদের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে এবং সম্পর্ক তৈরি করছে। বাংলাদেশে সমকামী পুরুষ বা যাদেরকে ‘গে’ বলা হয় তাদের সমাজে এখন যতটা খোলামেলা ভাবে প্রকাশ হতে দেখা যাচ্ছে মেয়েদের ক্ষেত্রে বিষয়টা অনেকটাই চাপা পড়ে আছে।

একটা পুরুষের সাথে পুরুষের বা একটি মেয়ের সাথে মেয়ের মানসিক ও শারীরিক আকর্ষণ বোধকেই সাধারণ অর্থে সমকামীতা হিসেবে ধরা হয়।

কয়েকজন সমকামী পুরুষ মিলে অনলাইনে একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও প্রথম আত্মপ্রকাশ করেছে। এগারো বছর আগে তৈরি করা ওই ওয়েবসাইটটির জন্য তাদের অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়।

ওয়েবসাইটের একজন প্রতিনিধি তানভীর আলিম। তিনি বলেন,”এর মাধ্যমে অনেকেই এখন তাদের সঙ্গী খুঁজে নিচ্ছেন আর বব কাজ করছে বাংলাদেশের এই সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব ও অধিকারের বিষয়ে কথা বলতে।”

“আট বছর আগে, ২০০৫ সালে একটা একটা গেট টুগেদারের ব্যবস্থা করা হয়, সেখানে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যায়”-বলেন আলিম। যিনি নিজেও একজন সমকামী। সেখান থেকে তারা সোশ্যাল অ্যাক্টিভিজমের পথ বেছে নেবার সিদ্ধান্ত নেন।

“এখন আমরা চাচ্ছি সমাজ যেন আমাদেরকে স্বীকৃতি দেয়, এবং বাংলাদেশের আইনেও আমাদের সম্পর্কে যা বলা আছে সেটা যাতে সংশোধন করা হয়”-যোগ করেন আলিম।

তানভীর বলেন, ”সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ‘বয়েস অফ বাংলাদেশ’এর পেজও রয়েছে। ফেসবুকে তাদেরকে ফলো করেন দু’ হাজারের মত মানুষ। এছাড়া মাঝে তারা কিছু অনুষ্ঠান করেন সেখানে দু থেকে আড়াইশ মানুষ আসেন। এদের মধ্যে যেমন বিভিন্ন বয়স এবং পেশার ছেলেরা রয়েছেন।”

তানভীর যে তাদের যে অধিকার বা স্বীকৃতির কথা বললেন সে বিষয়ে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে স্পষ্ট সমকামিতাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সানায়ইয়া আনসারীর বলছেন,”যদিও বাংলাদেশের সংবিধানে বলা আছে আইনের চোখে সবাই সমান এবং সমানভাবে আশ্রয় লাভের অধিকারী, কিন্তু সমকামীদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটেছে। বাংলাদেশের আইনে বলা আছে, সম লিঙ্গের কোন মানুষের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা অস্বাভাবিক একটি অপরাধ।

সমকামিতার জন্য ১০ বছর কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ডের বিধানও রয়েছে বলে আনসারী জানান।

তিনি আরো বলেন, “যে মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্রে বলা আছে বর্ণ, ধর্ম, গোত্র বা জন্ম স্থানভেদে কারও সাথে বৈষম্য করা যাবে না। তবে বাংলাদেশের দণ্ডবিধি আইনে পরিষ্কার করে বলা আছে কোন ব্যক্তি যদি স্বেচ্ছাকৃতভাবে প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে পুরুষ পুরুষের সাথে, এবং নারী নারীর সাথে যদি কোন যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে তবে তিনি অপরাধী হবেন।”

নারী ও পুরুষের মধ্যে প্রচলিত যে সম্পর্ক তার বাইরে এই ধরণের আকর্ষণের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শাহনুর হোসেন বলেন,“একটা বয়সের পর যখন তারা দেখে তাদের অন্য বন্ধুরা মেয়েদের ব্যাপারে আগ্রহ বোধ করছে, তখন তাদের ক্ষেত্রে হয় উল্টোটা। তারা ছেলেদের ব্যাপারে আগ্রহ বোধ করে। এটা জন্মগত, না হরমোনাল, না মানসিক সেটা বলা কঠিন।”

বাংলাদেশের সমকামীদের নিয়ে অল্প বিস্তর কাজ করছে বেসরকারি কিছু সংস্থা। মূলত তাদের স্বাস্থ্যের দিক বা এইডস প্রতিরোধে তাদের কাজ বেশি। সংস্থাগুলো বলছে,“যৌন প্রবণতার ব্যাপারে বাংলাদেশে খোলাখুলি কথা বলাটা সহজ না হওয়াই তাদের কাছে এর সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই। তবে বলা হয় একটি দেশের ১০ শতাংশ মানুষ প্রচলিত যৌনকর্মের বাইরে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করে থাকে।”

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন