সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিলেন খালেদা জিয়া

‘সাভারে সরকার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ’

 নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায় সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন ১৮ দলীয় জোটের নেত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, আমরা অনেক সহ্য করেছি, এখন আর সহ্য করবো না। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য যেকোনো কর্মসূচি দিলে নেতাকর্মীরা তা পালন করবে বলে আমার বিশ্বাস।

শনিবার সন্ধ্যায় মতিঝিলের শাপলা চত্বরে জোটের ডাকা এক সমাবেশে এ আলটিমেটাম দেন তিনি।

বক্তব্যের শুরুতে খালেদা জিয়া সাভার ট্রাজেডিতে নিহতদের স্মরণ করেন। সাভারে ভবন ধসের ঘটনায় উদ্ধার কাজে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ বলেও দাবি করেন খালেদা জিয়া। এত হতাহতের পরও শোকের দিন সরকারি ছুটি কেন ঘোষণা করা হলো না এ প্রশ্ন করেন বিরোধী দলীয় নেতা।

তিনি বলেন, আমরা সমাবেশে ভাড়া করে লোক আনি না। আমাদের সমাবেশে এত টাকা খরচ হয় না। আমাদেরকে মানবতার কথা শেখাবেন না। সাভারে দুর্ঘটনার পর আমরাই প্রথমে ছুটে গিয়েছি। 

পদ্মা সেতু, হলমার্ক, শেয়ার মার্কেট, ডেসটিনির টাকা সাভারে দান করতেও আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বান জানান খালেদা জিয়া। সংলাপের বিষয়ে তিনি বলেন, আগে পরিবেশ তৈরি করেন। সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার পদ্ধতি পুনর্বহাল করলে আলোচনার জন্য বিএনপি প্রস্তুত।

খালেদা জিয়া বলেন, বিপদে পড়লেই সরকারের সুর নরম হয়। আমরা চার বছর অনেক সহ্য করেছি। আমাদের ওপর হামলা-মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। আমাদের দলের মহাসচিব এখনো জেলে।

কর্মসূচির ব্যাপারে তিনি বলেন, যেহেতু কাল হেফাজতে ইসলামের একটি কর্মসূচি আছে এজন্য আমরা আজ অবস্থান কর্মসূচি দিলাম না। তবে সরকারকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার সময় দিচ্ছি, এ সময়ের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মানলে পরবর্তী সময়ে আমরা যেকোনো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবো।

খালেদা জিয়া অভিযোগ করে বলেন, মানবতার কথা শেখ হাসিনার মুখে মানায় না। বিরোধী দলে থাকতে জ্বালাও-পোড়াও করে একের পর এক মানুষ হত্যা যখন করেছিলেন তখন মানবতা কোথায় ছিল?

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, দুর্নীতিতে আপনার বারবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। সবকিছু আজ আপনাদের দখলে। হিন্দুদের সব সম্পদ আপনারা দখল করেছেন। আগেরবারও করেছেন, এবারো করছেন। আপনাদের কথা কেউ বিশ্বাস করে না। আপনাদের মুখে মানবতা মানায় না।

তিনি অভিযোগ করেন, স্বাধীনতার পরে হিন্দুদের ওপর আওয়ামী লীগ হামলা করেছে, এবার ক্ষমতায় এসেও করছে। রামুর ঘটনায় আওয়ামী লীগের লোকজন জড়িত। এতে পুলিশ বাহিনীকে দলীয় ক্যাডার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এজন্য রামুর ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।

র‌্যাব-পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, আজ পুলিশ-র‌্যাবের ইমেজ শুধু দেশে নয় বিদেশেও ক্ষুণ্ন হয়েছে। জাতিসংঘ মিশনে তাদের নেবে কিনা সন্দেহ আছে।

খালেদা জিয়া বলেন, রানা প্লাজার জন্য আজ আমাদের এই গার্মেন্ট শিল্প ধ্বংস হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে মিথ্যা কথা বলেছেন, সোহেল রানা যুবলীগের কেউ না বলে দাবি করেছেন। পরে বের হলো, সে যুবলীগের নেতা। সাভারের এমপির সঙ্গে কোলাকুলির ছবি আপনারা দেখেছেন। হরতালবিরোধী মিছিল করতেই শ্রমিকদের ডেকে এনে হত্যা করা হয়েছে। এটা কোনো দুর্ঘটনা নয় এটি পরিকল্পিত হত্যাকা্ণ্ড। সরকারকেই এর জবাব দিতে হবে। শুধু রানাকে গ্রেফতার করলেই হবে না স্থানীয় এমপিকেও গ্রেফতার করতে হবে। রানাকে রিমান্ডে নিয়ে জামাই আদরে রেখেছেন। সে রিমান্ডে থেকেও হুংকার দিচ্ছে, বের হয়ে এলে নাকি দেখে নেবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, ধাক্কা দেয়ার ইচ্ছা থাকলে আমরা সরকারকেই দিতাম, বিল্ডিংয়ে নয়।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, পাগল-ছাগল মন্ত্রীকে বাদ দিন। আপনার হোম মিনিস্টার একজন রাজাকার। একজন রাজাকার কিভাবে হোম মিনিস্টার হয়। তারও জেলে যাওয়া উচিত।

খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় আমরা নাকি স্বাধীনতা বিরোধীদের বাঁচাতে চাই। স্বাধীনতাবিরোধী আওয়ামী লীগেই বেশি। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনাল নিয়ে আজ প্রশ্ন উঠেছে। আমরা সরকারে এলে স্বচ্ছ-নিরপেক্ষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আওয়ামী লীগে থাকা স্বাধীনতাবিরোধীদেরও বিচার করবো।

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন