parbattanews

পার্বত্য চট্টগ্রাম : সরকারী দল আওয়ামী লীগও যেখানে চাঁদা দিতে বাধ্য

চাঁদাবাজি

মমিনুল ইসলাম, পার্বত্যাঞ্চল থেকে ফিরে:

পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি। বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো অংশ নয় পাহাড়ি এ জনপদ। কিন্তু সমতলের চেয়ে একেবারে ভিন্ন চিত্র বিরাজ করছে এখানে। সরকারি কর বা ভ্যাটের ন্যায় আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর প্রকাশ্যে চলছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি। কিছু করতে গেলেই বাধ্যতামূলক চাঁদা দিতে হয় পাহাড়ে বসবসরত ১৩টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও বাঙালি সম্প্রদায়ের লোকদের।

ভুক্তভোগী বাঙালি ও উপজাতিরা অভিযোগ করেন, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল, গাছের ফল, ক্ষেতের ফসল, ছোট-বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কৃষক-শ্রমিক-মৎসজীবী, সড়কে চলাচলকারী সকল প্রকার যানবাহন, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, স্থানীয় উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত পরিবার, দেশিয় ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, জমি কেনা-বেচা, এমনকি ডিম-কলা বিক্রি করতে গেলেও চাঁদা দিতে হয়।

চাঁদা না দিলে করা হচ্ছে অপহরণ, নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যা, ধর্ষণ। সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চাঁদা দিয়েও টিকতে পারছেন না, এমন অভিযোগ করেছেন অনেকে। সম্প্রতি ক্ষমতাসীন দলটির বহু নেতাকর্মীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা হয়েছে।

গোয়েন্দা সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিন পার্বত্য জেলায় উপজাতিদের সশস্ত্র গ্রুপগুলোর চাঁদা আদায়ের পরিমাণ দিনে দিনে বেড়েই যাচ্ছে। সরকারের কাছে দেয়া ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জেএসএস (সন্তু), জেএসএস (সংস্কার) ও ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি ও অপহরণের ঘটনা গত কয়েক মাসে চরম আকার ধারণ করেছে। এভাবে চলতে থাকলে পার্বত্য চট্টগ্রামে জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়বে।

পার্বত্যাঞ্চল ঘুরে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাঁদাবাজি সেখানে একটি স্বীকৃত বিষয়। সরকারি ভ্যাট-ট্যাক্স না দিলেও বাধ্যতামূলকভাবে সশস্ত্র গ্রুপগুলোর নির্ধারিত চাঁদা পরিশোধ করতে হয়। থানা ও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও কোনো প্রতিকার পান না ভুক্তভোগীরা।

সূত্র মতে, চাঁদা আদায়ে নিয়োজিত রয়েছে জেএসএস ও ইউপিডিএফের পাঁচ হাজার সশস্ত্র প্রশিক্ষিত কর্মী। সরকারের করের ন্যায় বিভিন্ন জিনিসের ওপর মাসিক/বার্ষিক নির্দিষ্ট হারে চাঁদা আদায় করা হয় এবং রসিদও দেওয়া হয়। ক্যাডার পর্যায়ে নিয়োগপ্রাপ্ত এসব সশস্ত্র সদস্যের বেতন-ভাতাও দেওয়া হয় বলে বলে জানা গেছে।

পার্বত্যাঞ্চল নিয়ে নিয়মিত কাজ করেন এমন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টেও চাঁদাবাজির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। এ নিয়ে সরকারের নীতি-নির্ধারক মহলকেও জানানো হয়েছে। সেখানে চাঁদার সুনির্দিষ্ট হিসাবও তুলে ধরা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, বছরে এ তিন জেলায় শুধু চাঁদা তোলা হয় ৪০ কোটি ২৯ লাখ ১৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাঁদা তোলা হয় খাগড়াছড়িতে। সেখানে বছরে চাঁদা ওঠে ১৯ কোটি ৫৩ লাখ ৮৮ হাজার ১ শ টাকা।

এ টাকার ১১ ভাগ অর্থাৎ ২ কোটি ১২ লাখ ৯৭ হাজার ৩০৩ টাকা তোলে জেএসএস। ৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫২ হাজার ৫৪৩ টাকা আদায় করে ইউপিডিএফ। যা মোট চাঁদার ৫১ ভাগ। অন্যদিকে, জেএসএস (সংস্কার) চাঁদা তোলে ৭ কোটি ৪৬ লাখ ৩৮ হাজার ২৫৪ টাকা।

এরপরই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চাঁদা আদায় হয় বান্দরবানে। সেখানকার পরিমাণ ১৩ কোটি ২৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৮৮ ভাগ অর্থাৎ ১১ কোটি ৬৪ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৫ টাকা যায় জেএসএস’র তহবিলে।

তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে সবচেয়ে কম চাঁদা তোলা হয় রাঙামাটিতে। এখানে চাঁদা তোলা হয় ৭ কোটি ৪৬ লাখ ৪৫ হাজার ৯ শ টাকা। এর মধ্যে জেএসএস আদায় করে ৫ কোটি ৭৪ লাখ ৫ হাজার ৯ শ ৫ টাকা। ইউপিডিএফ তোলে ২ কোটি ২১ লাখ ৯৮ হাজার ৯৫ টাকা এবং জেএসএস (সংস্কার) ১৭ লাখ এক হাজার ৯ শ টাকা চাঁদা তোলে।

গোয়েন্দা সূত্র আরও জানিয়েছে, বিভিন্ন খাত ছাড়াও বছরের বিভিন্ন সময়ে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, জুম্ম জাতীয় নেতার মৃত্যু দিবস, মাতৃভাষা দিবস, দলের কাউন্সিল, বৈসাবি/বিজু/সাংগ্রাই, পূজা, বৌদ্ধ পুর্ণিমা, বৌদ্ধ বিহার/মন্দির, কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান ইত্যাদির নামে বিভিন্ন ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, কাঠ ব্যবসায়ী সমিতি, যানবাহন মালিক সমিতি, ব্রিক ফিল্ড সমিতি, জেলা পরিষদ, উন্নয়ন বোর্ড, ব্যাংক, এনজিও, সরকারি/বেসরকারি অফিস ইত্যাদি থেকে চিঠি দিয়ে রশিদের মাধ্যমে চাঁদা আদায় করে থাকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনগুলো চাঁদার এ অর্থ দিয়ে দেশ-বিদেশে বাঙালি বিদ্বেষী প্রচারণা ও তাদের অস্ত্রভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করার কাজ করে থাকে।

যেভাবে চাঁদা চাওয়া হয়

যেখানে চাঁদা দিতে বাধ্য আ.লীগওপাহাড়ি সন্ত্রাসীদের চাঁদা আদায়ের একটি চিঠি প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে। যেখানে বলা হয়-‘সম্মানীত, পার্টির পক্ষ থেকে আপনাকে/আপনাদেরকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও সংগ্রামী অভিবাদন জানাচ্ছি। আমাদের পার্টি গত ১৮ বছর ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম সরকারের নির্যাতন-নিপীড়ন ও ভূমি বেদখলের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে গণ-আন্দোলন করে আসছে।

আমরা এ সময় অসংখ্য সভা-সমাবেশ ও মিছিল-মিটিংয়ের আয়োজন করেছি। ভূমি বেদখল ও বাঙালি সেটলার হামলার বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে নেতৃত্ব দিয়েছি। হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছি। ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি এবং ভূমিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আইনগতভাবে লড়াই পরিচালনা করেছি।’

১২/১২/২০১৬ তারিখে খাগড়াছড়ির পানছড়ি ইউনিট থেকে ইস্যু করা এ রকম চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে আন্দোলন পরিচালনার জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন। এ অর্থ সংগ্রহে প্রত্যেক চাকরিজীবী (যে স্তরের হোন না কেন) তার মাসিক মূল বেতনের ২% হারে বছর শেষে পুরো ১২ (বার) মাসের টাকা এক সঙ্গে প্রদান করে পার্টিকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করবেন।’

স্থানীয়রা ছাড়াও পর্যটক, টোকেন ছাড়া ব্যবসায়ী, ব্যবসা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের অপহরণ করে বড় অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পার্বত্য খাগড়াছড়ির এক ব্যবসায়ী বলেন, আঞ্চলিক দলগুলোর চাঁদাবাজি অহরহ ঘটছে। চাঁদাবাজিতে তারা কারো চেয়ে কেউ পিছিয়ে নেই। কোনো পরিবহন মাল নিয়ে খাগড়াছড়ি ঢোকার সময় অথবা বের হওয়ার সময় চাঁদা দিতে হয়। একেক সময় তারা একেক স্থান থেকে চাঁদা তোলে। চাঁদা না দিলে গাড়ি থামিয়ে স্টাফদের মারধর করা হয়, অনেক ক্ষেত্রে গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। চাঁদা না দেওয়ায় সম্প্রতি বিআরটিসির একটি ও প্রাণ আরএফএল গ্রুপের একটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয় ইউপিডিএফ।

বিভিন্ন জিনিসের ওপর চাঁদার হার

গোয়েন্দা তথ্যমতে, পার্বত্য এলাকায় চলাচলকারী প্রতিটি বাসের (৩০০ বাস আছে) জন্য বছরে জেএসএস (সন্তু) ও জেএসএস (সংস্কার) গ্রুপকে ৫ হাজার করে এবং ইউপিডিএফকে ৩ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। ট্রাকের জন্য (৩০০টি আছে) জেএসএস ও সংস্কারকে ৬ হাজার করে এবং ইউপিডিএফকে ৪ হাজার টাকা করে চাঁদা দিতে হয়।

এ ছাড়া চাঁদের গাড়িতে জেএসএস ৩ হাজার, সংস্কার ২ হাজার এবং ইউপিডিএফ দেড় হাজার টাকা চাঁদা আদায় করে। মাইক্রো/কারের জন্য জেএসএস ৪ হাজার, সংস্কার আড়াই হাজার, ইউপিডিএফকে ২ হাজার এবং সিএনজিতে তিন গ্রুপই দেড় হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করে।

এ ছাড়া টমটম/অটোরিকশায় ৬ শ করে, ট্রাক্টরে এক হাজার করে, মোটরসাইকেলের জন্য ৫ শ টাকা করে চাঁদা পরিশোধ করতে হয়।

যেখানে চাঁদা দিতে বাধ্য আ.লীগওবাইরে থেকে কোনো ওষুধ কোম্পানির গাড়ি ঢুকলে জেএসএস (সন্তু) গ্রুপকে ১০ থেকে ৪০ হাজার, জেএসএস সংস্কার গ্রুপকে ১০ থেকে ২৫ হাজার এবং ইউপিডিএফকে ৮ থেকে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। মোবাইল ফোন কোম্পানির ডিলারশিপ নিলে তিনটি গ্রুপকে এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়।

এভাবে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর জন্য সন্তু ও সংস্কার গ্রুপকে ৮ লাখ করে এবং ইউপিডিএফকে ৬ লাখ টাকা, আবুল খায়ের টোবাকোর সন্তু গ্রুপকে চার লাখ, সংস্কারকে ৩ লাখ ও ইউপিডিএফকে দুই লাখ, আকিজ গ্রুপের সন্তু গ্রুপকে ৩ লাখ এবং অন্য দুই গ্রুপকে দুই লাখ করে চাঁদা দিতে হয়।

তিন জেলায় উন্নয়ন বোর্ড, জেলা পরিষদ, সড়ক ও জনপদ, এলজিইডি, পিডব্লিউডি, পাবলিক হেলথ, স্থানীয় সরকারের অধীনে বছরে প্রায় ৬০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকার কাজ হয়ে থাকে। যার মধ্যে ১১ থেকে ১২ শতাংশ অর্থ বাধ্যতামূলকভাবে দিতে হয় জেএসএস সন্তু, সংস্কার ও ইউপিডিএফকে। জমি কেনা-বেচার ক্ষেত্রে মোট দামের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ দিতে হয় সন্তু গ্রুপকে, ৮ থেকে ১০ শতাংশ সংস্কার এবং ৬ থেকে ৭ শতাংশ ইউপিডিএফকে। শ্যালো মেশিন/মেশিনারিজ কিনলে প্রতি হর্সে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা প্রতিটি গ্রুপকে দিতে হয়।

মৌসুমী ভিত্তিক ফসল (ধান, চাল, ভুট্টা, আলু, বেগুনসহ সব ধরনের পণ্য) বিক্রি করলে সন্তু গ্রুপকে বিক্রি মূল্যের ১০ শতাংশ, অন্য দুই গ্রুপকে মণ প্রতি ৪০ থেকে ৬০ টাকা হারে দিতে হয়। আম, লিচু, আনারস, কমলা, কলার ছড়া, কাঠাল, গরু, ছাগল/শুকর, হাস/মুরগি ইত্যাদি বিক্রির ক্ষেত্রে জেএসএস সন্তু গ্রুপকে বিক্রি মূল্যের ১০ শতাংশ দিতে হয়। অন্য দুই গ্রুপকে পণ্য ভেদে ৫ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। যেকোনো ব্যবসার ডিলারশিপ নিলে ইউপিডিএফকে বছরে ৩ লাখ, জেএসএস ও সংস্কার গ্রুপকে ৫ লাখ টাকা করে দিতে হয়।

সেগুন, গামারি ও অন্যান্য কাঠের জন্য প্রতি ঘনফুটে ৫০ থেকে ৭০ টাকা করে, কাঠ বোঝাই প্রতিটি ট্রাকের জন্য ১২ থেকে ১৬ হাজার করে, কাঁচা পণ্য/কলা/কাঁঠাল বোঝাই প্রতিটি ট্রাকের জন্য ৩ থেকে ৪ হাজার, বালুর ট্রাকে ৫ শ থেকে ৭ শ, মুলি বাশেঁর ট্রাকে ২ শ থেকে ৩ শ, বাইজ্জা বাঁশে ১২ শ থেকে ১৮ শ, মাছ ব্যবসায়ীদের বাৎসরিক ৩৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা, রাইস মিলের প্রতিটি মেশিনের জন্য ৫ থেকে ৬ হাজার, স’মিলের জন্য সন্তু গ্রুপকে ৫০ হাজার, সংস্কার ও ইউপিডিএফকে ৫ হাজার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা করে চাঁদা দিতে হয়।

প্রথম শ্রেণির সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদেরকে ১২ মাসের বেতনের ৫ শতাংশ করে মোট ১৫ শতাংশ, দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিজীবীদের ৩ শতাংশ, উচ্চবিত্ত পরিবারকে মাসে ৬ শ টাকা হারে, মধ্যবিত্তকে মাসে ৫ শ এবং নিম্নবিত্তকে মাসে ৩ শ টাকা হারে প্রতিটি গ্রুপকে পৃথকভাবে চাঁদা দিতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা জানান, এখানে অস্ত্রধারী জেএসএসের এতটাই প্রভাব যে, ক্ষমতাসীন দলের লোক হয়েও তাদের পক্ষে চাঁদা ছাড়া বসবাস করা অসম্ভব। নিরুপায় হয়ে দোকান-পাটও গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। তাদের কাছে পুলিশও জিম্মি বলে অভিযোগ তার।

পার্বত্য-চট্টগ্রামের সংরক্ষিত মহিলা এমপি ফিরোজা বেগম চিনু বলেন, চাঁদাবাজি এখানে ওপেন সিক্রেট বিষয়। তবে ভয়ে কেউ মামলা করছে না। সশস্ত্র গ্রুপ চাঁদাবাজি, খুন, অপহরণ করে পাহাড়কে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা সকল পর্যায়ে চাঁদা আদায় করে থাকে। তাদের চাঁদাবাজির কারণে এলাকার লোকজন অতিষ্ঠ। তিনি এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার বলেন, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি বন্ধ করতে সবার আগে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। এগিয়ে এসে প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মজিদ আলী বলেন, বিষয়টি অনেকটা ওপেন-সিক্রেটে পরিণত হয়েছে। আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর নাম করে বিপুল পরিমাণ টাকা তোলা হয়। এসবের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের নিয়মিত গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তাদের বেশির ভাগই উঠতি বয়সের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেএসএসের মুখপাত্র ও সহ-প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা তাদের বিরুদ্ধে আনীত চাঁদাবাজির অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেন।

তিনি বলেন, আমরা চাঁদাবাজি করি না। পাহাড়িদের কল্যাণে কাজ করি। চাঁদার চিঠি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জেএসএসের নামে অন্য কেউ করতে পারে। আমাদের নয়।

ইউপিডিএফ’র মুখপাত্র, প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের প্রধান নিরন চাকমাও এসব চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেন। মানুষের সহযোগিতায় তাদের দল পরিচালিত হয় বলে জানান তিনি।

– সূত্র: যমুনা নিউজ

Exit mobile version