সরকারী পদে থেকে সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের সুযোগ নেই, পদত্যাগ করুন- সন্তু লারমাকে বাঙালী নেতৃবৃন্দ

আর মাত্র এক দিন। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান ও পার্বত্য জনসংহতি সমিতির চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার অসহযোগ আন্দোলনের আল্টিমেটামের আর মাত্র একদিন বাকি। এই একদিন পর কী হতে চলেছে পার্বত্য চট্টগ্রামে- এ নিয়ে তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের কথা বলেছে পার্বত্যনিউজ ডটকম। তাদের মতামত নিয়েই আজকের প্রতিবেদন

অসহযোগ আন্দোলন

সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার :

পার্বত্য চট্টগামের সাবেক গেরিলা নেতা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামকে ক্রমেই অস্থিতিশীল করে তোলার অপচেষ্টোয় লিপ্ত রয়েছেন বলেই মনে করছেন পাহাড়ের সচেতনমহল। তারা মনে করেন, প্রতিমন্ত্রী স্ট্যাটাসে সব ধরনের সরকারী সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারকে আল্টিমেটাম দেয়া এক ধরনের দেশদ্রোহী কাজ। এজন্য তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোরও আহবান জানিয়েছে বিভিন্নমহল।

পার্বত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবীতে আগামী পহেলা মে থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামকে ক্রমেই অস্থিতিশীল করে তোলার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন দাবী করে পার্বত্য নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আলকাছ আল মামুন ভুইয়া পার্বত্যনিউজকে বলেন, আন্দোলন করতে হলে তাকে সরকারী সুযোগ সুবিধা থেকে সরে এসে করা উচিত। সরকারী এসি রুমে থেকে আন্দোলনের ডাক দেয়াকে তিনি তার নতুন কোন কৌশল বলেও মনে করেন। এরকম দেশদ্রোহী ঘোষণার জন্য এবং ত্রিশ হাজার বাঙালী হত্যার অপরাধে তাকে(সন্তুকে) যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালে বিচার করার দাবী জানান তিনি।

সমঅধিকার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয় মনিরুজ্জামান মনির পার্বত্যনিউজকে বলেন, নাগরিক হিসাবে এ রকম ঘোষণা তিনি দিতেই পারেন। কিন্তু সরকারী পদে থেকে নয়। কোনো প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় সুবিধা ভোগকারী, জাতীয় পতাকা বহনকারী সরকারী কোনো ব্যক্তি সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন করার সুযোগ নেই। তিনি অসহযোগ আন্দোলন করতে চাইলে পদত্যাগ করে তা করা উচিত। সন্তু লারমার আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করে সরকার যদি পার্বত্য চট্টগ্রামের অখন্ডতা ও বাঙালী বিরোধী কোনো সুবিধা দেয় তবে তার পরিণতি ভয়াবহ হবে বলে সরকারকে হুঁশিয়ার করেন এ নেতা।

সন্তু লারমার এ জাতীয় আন্দোলনের ঘোষণা শুধুই হাস্যকর দাবী করে মাটিরাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক মো: তাজুল ইসলাম তাজু বলেন, স্বাধীনতার পর ২৫ বছর ধরে সরকার ও পাহাড়ের নিরীহ বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে স্বশস্ত্র আন্দোলন করে সন্তু লারমা অনেক মানুষের জীবন নিয়েছেন। ১৯৯৭ সালে একটি চুক্তির মাধ্যমে সরকারী, পতাকাবাহী গাড়ি, বাড়ি আর সরকারী সব ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করে এখন আবার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুমকি দিয়ে মুলত তার সুযোগটা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।

‘সরকার জুম্ম জনগোষ্ঠীকে ভেঙে টুকরো টুকরো করার ষড়যন্ত্র করছে সন্তু লারমা‘র এমন অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উপজাতীয় নেতা বলেন, সরকার নয় বরং সন্তু লারমাই নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য জম্মু জনগোষ্ঠিকে ভেঙে টুকরো টুকরো করার ষড়যন্ত্র করছে। তার কারনেই পাহাড়ে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতে অনেক জুম্ম জনগণ প্রাণ দিয়েছে। ‘দীর্ঘ ১৭ বছরেও শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন না করে আ’লীগ সরকার তামাশা শুরু করেছে বলে সন্তু লারমা যে বক্তব্য দিয়েছে তা হটকারী বক্তব্য দাবী করে মাটিরাঙ্গা পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি এম এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, লারমা তার সরকারী সুযোগ বাড়াতেই চুক্তি বাস্তবায়নের নামে আল্টিমেটাম দিয়ে সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করছে। তিনি সন্তু লারমাকে অশান্ত পাহাড়ের জনক দাবী করে বলেন, পাহাড়ে সকল অশান্তির মুলেই সন্তু লারমার হঠকারী বক্তব্য।

সাবেক গেরিলা নেতা সন্তু লারমাকে পাহাড়ের ত্রিশ হাজার বাঙ্গালীর খুনী দাবী করে পার্বত্য নাগরিক পরিষদের রাঙ্গামাটি জেলা শাখার আহবায়ক বেগম নুরজাহান বলেন, সন্তু লারমা‘র বক্তব্যের মাধ্যমে পাহাড়ের ঈশাণকোণে কোন এক অশনিসংকেত দেখা যাচ্ছে। এ বক্তব্যের মাধ্যমে সন্তু লারমা নিজেকে একজন সন্ত্রাসী বা সন্ত্রাসের গডফাদার হিসেবে নিজের স্বরূপ উন্মোচন করলেন।

সন্তু লারমার এ ঘোষনাকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আখ্যা দিয়ে পার্বত্য নাগরিক পরিষদের বান্দরবান জেলা শাখার সভাপতি আতিকুর রহমান বলেন, চুক্তিতে উভয়ের স্বার্থ লঙ্ঘিত হলে চুক্তি আর চুক্তি থাকে না। যে চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তি আসেনি সে চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের আন্দোলন কখনোই জনগনের সমর্থনপুষ্ট হতে পারে না। তারপরও সন্তু লারমা আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে জনগনই তার এ আন্দোলন প্রতিহত করবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন