তাইন্দং সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করলেন দীপঙ্কর তালুকদার
মুজিবুর রহমান ভুইয়া, তাইন্দং থেকে ফিরে :
মাটিরাঙ্গার তাইন্দং সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্থ পাহাড়ীদের সরকারী ত্রান সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার এমপি। তিনি বলেন, প্রাপ্ত ত্রাণ পর্যাপ্ত না হতে পারে। তবে ত্রাণ সামগ্রী না পাওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। আজ বুধবার বিকালে মাটিরাঙ্গার তাইন্দং সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্থ পাহাড়ীদের সাথে বৈঠকে দেয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মাটিরাঙ্গার তাইন্দং সহিংসতার ৩০ দিন পরে আজ বৃধবার পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি তাইন্দং সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কিন্তু এ সময় প্রতিনিধি দলটি পাহাড়ী ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ী পরিদর্শন ও ব্যাক্তিদের সাথে কথা বললেও একই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত স্বল্প সংখ্যক বাঙালীদের কারো সাথে কথা বলেননি। এমনকি স্থানীয় বাঙালীদের কাছ থেকেও ঘটনার বর্ণনা শুনতে চাননি। বরং পাহাড়ীদের কাছ থেকে ঘটনার এক তরফা বর্ণনা শুনে ঢাকায় ফিরে গেছেন। এ ঘটনায় স্থানীয় বাঙালীরা বেদনাহত ও ক্ষুদ্ধ হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর নেতৃত্বে বেলা দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌছায় প্রতিনিধি দলটি । প্রতিনিধি দলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার এমপি, ভারত প্রত্যাগত শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি। গত একমাসের ব্যবধানে একাধিক ভাড়াটে প্রতিনিধি দলের মধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এই পরিদর্শক দলটি পাহাড়ী পল্লী বগাপাড়ায় প্রবেশ মুখেই পাহাড়ীদের মানববন্ধনের মুখে পড়ে। পরিদর্শক দলটির আসার খবরে হঠাৎ করেই দোষীদের শাস্তি দাবীসহ সরকারী সহায়তা না পাওয়ার দাবী সম্বলিত প্লেকার্ড ও ফেস্টুন বহন করে।
এসময় ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে স্থানীয় পাহাড়ীদের প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিনিধি দলের কাছে ৩ আগষ্টের ঘটনার কল্পিত কাহিনী তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন বকুল চাকমা, দেবব্রত চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম জুম্ম শরনার্থী কল্যান সমিতির সম্পাদক সন্তোষিত চাকমা প্রমুখ। তারা বলেন, সেটেলার বাঙ্গালীরা তাদেরকে নিজ নিজ ভুমি থেকে উচ্ছেদ করতেই সেদিন এ হামলা চালিয়েছে। এসময় তারা গত একমাসেও কোন ধরনের সরকারী সাহায্য না পাওয়ার অভিযোগ করে প্রতিনিধি দলের কাছে। এসময় ঘটনার ৩০ দিন পেরোলেও তারা এখনও খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছে বলেও অভিযোগ করে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এ পরিদর্শক দলটির কাছে।
যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি পাহাড়ী বাঙ্গালীদের সহাবস্থান নিশ্চিত করার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, তা না হলে এ জাতীয় অনাকাঙ্খিত ঘটনা আবারো ঘটতে পারে। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের যেকোন সমস্যার সমাধানে আওয়ামীলীগ সরকার আন্তরিক। আমরা আপনাদের দেখতে এসেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘটনার বিষয়ে অবগত আছেন। ভবিষ্যতে যেন এ জাতীয় ঘটনা না ঘটে এজন্য সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা এই প্রতিনিধি দলের সাথে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে তার বক্তব্যে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যথাসম্ভব সহযোগিতা প্রদান করা হবে। এসময় পাহাড়ীরা অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে বসতবাড়ি নির্মান সহ যথাযথ ক্ষতিপুরণ প্রদান, অপারেশন উত্তোরণ বন্ধ করা, পাহাড়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত কর, বিজিবির যামিনীপাড়া জোন কমান্ডারসহ তাইন্দং এলাকা থেকে বিজিবি-কে প্রত্যাহার ও ঘটনার দিন পুলিশ প্রশাসনের নীরবতায় তাদের ক্ষোভের কথা জানায় প্রতিনিধি দলকে।
এতে অন্যান্যের মধ্যে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো: মাসুদ করিম, পুলিশ সুপার শেখ মিজানুর রহমান, মাটিরাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান মো: শামছুল হক, মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ড. মোহাম্মদ মাহে আলম, মাটিরাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মো: মাইন উদ্দি খান ও তাইন্দং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: তাজুল ইসলাম প্রমুখ।
তবে প্রতিনিধি দলটি তাইন্দংয়ের ক্ষতিগ্রস্থ পাহাড়ী পাড়ায় গিয়ে পাহাড়ীদের সাথে কথা বললেও সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত বাঙ্গালীদের বাড়িতে যাননি এমনকি তাদের সাথে কথাও বলেননি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনকালে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এ প্রতিনিধি দলটি ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ীদের মাঝে তৈজসপত্রসহ ত্রান সামগ্রী বিতরণ করে। এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমিন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ ৩৮ পরিবারের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে অনুদান প্রদানের ঘোষনা দেন। এসময় স্থানীয় পাহাড়ীদের পক্ষ থেকে নয় দফা দাবী সম্বলিত একটি স্মারকলিপি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির হাতে তুলে দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জুম্ম শরনার্থী কল্যান সমিতির সম্পাদক সন্তোষিত চাকমা।