parbattanews

সরকারের তৎপরতায় ক্ষতিগ্রস্তরা সংক্ষুব্ধ : পোড়া মাটির কলঙ্ক মুছতে বাধা

pahar 1

(দুই)
বেলায়েত হোসেন, খাগড়াছড়ি থেকে ফিরে:
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দং ইউনিয়নের পাঁচ গ্রামে নারকীয় হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং ভাংচুরে ক্ষতিগ্রস্ত উপজাতীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৩৬ টি পরিবার খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’ প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্তের বাড়িতে তাবু টাঙ্গিয়ে দেয়া সত্বেও তারা সেখানে  দিনের বেলায় থাকছেন না। ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারী ত্রাণের স্বল্পতায় অসন্তুষ্ট। রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে আবাসন নির্মাণের কথা সত্বেও এদের অনেকেই আগামী ছ’মাসেও নিজ বাড়িতে ঘর তুলছেন না।‘পোড়াবাড়ি প্রদর্শনে বিশ্বব্যাপী দেশের ভাবমর্যাদা কলঙ্কিতের ঝুকি থাকলেও টনক নড়ছেনা প্রশাসনের ।

সরেজমিনে এলাকাবাসী জানান, মোটর সাইকেল চালক কামাল হোসেনের কথিত অপহরণের গুজব ছড়িয়ে দুর্বৃত্তরা গত ৩ আগস্ট মাটিরাঙার তাইন্দংয়ে হেডম্যানপাড়া, বগাপাড়া, পোমাংপাড়া, তানাক্কাপাড়া এবং ৩নং কলিন্দ্র কারবারিপাড়ায় উপজাতীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৩৬ বাড়ি এবং বাঙ্গালীদের তিন বাড়িতে  অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, লুটপাটসহ ব্যাপক তান্ডবের পর থেকে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। জেলা উপজেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ীদের মধ্যে ত্রাণবিতরণসহ পুনর্বাসনে কাজ করে যাচ্ছে । সেনাবাহিনী, বিজিবি, রেডক্রিস্টে সোসাইটিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা এ ব্যাপারে সহায়তা করে  চলেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান অব্যাহত রেখেছেন সেনাবাহিনী ও বিজিবি মেডিকেল কোরের সদস্যরা।

সরকারের এ সহায়তায় সন্তুষ্ট নন ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ীরা। সরকারের নির্দেশে বিজিবি ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি নির্মাণের প্রস্তুতি নিয়েছে। অজ্ঞাত কারণে তাদের বাড়ি নির্মাণে সহায়তা না করার অভিযোগ রয়েছে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। রয়েছে অদৃশ্য বাধা। পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের সাথে আলাপ করে এ তথ্য জানা গেছে।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ড. মোহাম্মদ মাহে আলম অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্থ ৩৫ টি পাহাড়ী ও তিনটি বাঙালি পরিবারের প্রত্যেককে  নগদ নয় হাজার টাকা এবং তিন বান্ডিল ঢেউটিন বিতরণের কথা জানান। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক পরিবারকে ৩০ কেজি চাউল ও নগদ সাড়ে ৭ হাজার টাকা  দেয়া হয়। গুজবে আতংকিত হয়ে গ্রাম ছেড়ে যাওয়া ৫৪৮  পরিবারকে শুকনা খাবার, ৩০ কেজি চাউল ও নগদ এক হাজার করে টাকা  দেয়া হয়েছে।

বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন-বিজিবির যামিনীপাড়া জোনের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর শোয়াইব স্বাধীনমতকে জানান, ৩ আগস্ট ট্রাজেডির পর প্রতি পরিবারকে  চাল,  ডাল, চিনি সহ প্রায় দুই লাখ টাকার ত্রাণ সহায়তা  দেয়া হয়েছে। তৈজসপত্র এবং কাপড়-ছোপড় প্রদান করা হয় বিজিবির পক্ষ থেকে। এছাড়াও স্বর্বেশ্বরপাড়ায় এক লাখ টাকা ব্যয়ে নবরতœ বৌদ্ধ বিহার পুনঃনির্মাণ করে দিয়েছে বিজিবি। একই পাড়ায় আরেকটি বিহার মেরামত করা হয়েছে। গুইমারা রিজিয়নের  ক্যাপ্টেন ডা: রুমেল এর নেতৃত্বে মেডিকেল ক্যাম্প চিকিৎসাসেবা প্রদান অব্যাহত রেখেছে।

তাইন্দং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফনি ভূষণ চাকমা  জানান, ১০টি পাহাড়ী গ্রামে এখন শুধুই অভাব। অসহায় অবস্থায় জীবন কাটছে তাদের। হেডম্যানপাড়ার ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের নেতা সুকুমার রোয়াজা জানান,  ১০ কেজি চাল ছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো তেমন কিছুই পায়নি।  সত্যপ্রিয় চাকমা জানান, তারা প্রয়োজনীয় সরকারী ত্রাণ সামগ্রী পায়নি । তঙ্গমোহন পাড়ার বীরলাল চাকমা বলেন, তার এলাকায় ত্রাণ  পৌঁছায়নি। আর্থিক সহায়তা পায়নি সংশ্লিষ্ট এলাকার পাহাড়ীরা।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মাসুদ করিম জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ২৩ হাজার ৯১০ কেজি চাল, ৪৪৯ কেজি ডাল, ৫২৬ কেজি চিনি, ৭০৮ কেজি চিড়া, ২১৮ কেজি গুড়, বিশুদ্ধ খাবার পানি, পর্যাপ্ত কাপড় এবং তৈজসপত্র  দেয়া হয়েছে।
♦বেলায়েত হোসেন- সিটি এডিটর, স্বাধীনমত

Exit mobile version