সরকার আদিবাসীদের অস্তিত্ব অস্বীকার করছে- ড. ইফতেখারুজ্জামান

dr.-iftekharuzzaman_77596_0

পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:

‘আদিবাসী’ শব্দটির ব্যবহার পরিহারের নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির মধ্য দিয়ে সরকার আদিবাসীদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করছে বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। আজ শুক্রবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এক গোলটেবিল বেঠকে এ মন্তব্য করেন তিনি।

‘ভূমি থেকে আদিবাসী উচ্ছেদ বন্ধ ও তাদের মানবাধিকার সুরক্ষায় রাষ্ট্রের ভূমিকা’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), টিআইবি, এএলআরডি, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ, সিসিডিবি, কারিতাস, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), নিজেরা করি, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ও কাপেং ফাউন্ডেশন এবং মালেয়া ফাউন্ডেশন।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও আসকের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস ও আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। আলোচনায় অংশ নেন আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ডালেম চন্দ্র বর্মণ, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষক ড. স্বপন আদনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ, জাবি অধ্যাপক ড. আইনুন নাহার প্রমুখ।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘৪২ বছরে আমাদের কোনো অগ্রগতি হয়নি বরং বিপরীত মুখী অবস্থানে এসে পৌঁছেছি। আদিবাসী লেখা যাবে না মর্মে যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে এটা তারই প্রচেষ্টা। সংবিধান পরিবর্তন করে আদিবাসী শব্দটি বাদ দিয়ে সরকার তাদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করছে। সরকার কেন এগুলো করছে এটা বোধগম্য নয়। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। তিনি অবিলম্বে এই প্রজ্ঞাপনের কার্যকারিতা স্থগিতের পাশাপাশি সংবিধান সংশোধন করে আদিবাসীদের অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

আদিবাসী-বাঙ্গালি বিভাজন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আদিবাসী বনাম বাঙালি ও বাঙালি বনাম আদিবাসী বিভাজন করে রাষ্ট্রযন্ত্র তার উদ্দেশ্যে হাসিল করতে চায়। এটা ষড়যন্ত্রমূলক। এতে সংকট আরো বাড়বে, ঘনীভূত হবে। জনগণকে এ বিষয়ে সোচ্চার হতে হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে সুলতানা কামাল বলেন, ‘যে পরিবেশেই মানুষ বসবাস করুক তার অধিকার রক্ষা করা সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সরকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। তা যদি হয় তাহলে আদিবাসীদের তাদের অধিকারসহ স্বীকৃতি হবে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে যাতে আমরা বিব্রত হওয়ারও সুযোগ পাচ্ছি না। এটা তারা করতে পারেন না। আমরা এর চরম নিন্দা ও ধিক্কার জানাই এবং এই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করছি। এতে যদি শাস্তি পেতে হয় তবে তা মাথা পেতে নেব।’

আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, এই প্রজ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে আদিবাসীদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয়েছে। এতে তারা খুবই মনোকষ্ট পেয়েছেন। এর ফলে আদিবাসীদের সঙ্গে সরকার ও বাঙালিদের দূরত্ব বাড়বে।

প্রসঙ্গত, ‘আদিবাসী’ শব্দটির ব্যবহার পরিহারের নির্দেশনা দিয়ে বৃহস্পতিবার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। বাংলাদেশ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী বর্তমানে দেশে আদিবাসীদের কোনো অস্তিত্ব নেই উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাংলাদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

এছাড়া ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, আলোচনা ও টকশোতে ‘আদিবাসী’ শব্দটির ব্যবহার পরিহার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন