parbattanews

সরগরম খাগড়াছড়ি’র ঈদের বাজার: পাহাড়ে জমে উঠেছে বেচা-কেনা

eid-pic

নিজস্ব প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি ॥

ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ, আর এই আনন্দকে আরেকটু বাড়িয়ে দিতে চাই নতুন পোষাক, আর বাহারী গয়না। সেইমাথে কসমেটিকস্ তো আছেই। তাই ঈদ উৎসবে নিজেকে ভিন্ন মাত্রায় উপস্থাপন করতে কেনাকাটা নিয়ে এখন ব্যস্ত হয়ে উঠেছে ছোট বড় সবাই।

ঈদকে সামনে রেখে খাগড়াছড়ি জেলা সদরসহ সবকটি উপজেলায় ছোট-বড় শপিংমলে কাপড় ও কসমেটিকস এর দোকান গুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভীড় লক্ষ করা গেছে। সকলেই ঈদের আনন্দে নিজেকে সাজিয়ে তুলতে নতুন জামা কাপড় কিনছে। আর এ ফাঁকে সুযোগ গ্রহণ করছে বিক্রেতারা। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য ছোট-বড় সপিং সেন্টারের মালিকরাও দোকানপাট এবং ছোট ছোট মার্কেটগুলোকে নানান সাজে সাজিয়ে তুলেছে। রয়েছে নানা রঙের আলোক সজ্জা। এতে করে ঈদ উৎসবে যেন নতুন ও আনন্দের মাত্রা যোগ করেছে।

এদিকে দোকান মালিকরা ভয়াবহ লোডশেডিং এর কথা বিবেচনায় রেখে দোকানে দোকানে স্থাপন করেছে জেনারেটর। দোকানীরা ক্রেতা আকর্ষণে নানান কৌশলও অবলম্বন করছে। ক্রেতা বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় দোকানে দোকানে টানানো হয়েছে মূল্য হ্রাসের ব্যানার ও ফেস্টুন। কোন কোন মার্কেটে ও দোকানে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য ব্যতিক্রম ধর্মী লাকী কুপন ও র‌্যাপেল ড্র এর ব্যবস্থা করেছে। সর্বনিন্ম ১শ টাকার পণ্য সামগ্রী কিনলেই একটি কুপন দেওয়া হচ্ছে। এই লাকী কুপনের ড্র হবে ঈদের দিন। সব মিলিয়ে দোকানীদের নানা ফাদেঁ পড়ে লাভ-ক্ষতির চিন্তা না করেই ঈদের আনন্দ জোয়ারে ভাসছে ক্রেতারা।

এবার ঈদে বিশেষ করে বাহারী পাঞ্জাবী ও সেলোয়ার-কামিজের দোকানগুলোতে তরুন-তরুনীদের উপচেপড়া ভীড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রিন্ট ও হাতের কাজ করা পাঞ্জাবীসহ বিভিন্ন ধরনের পাঞ্জাবী বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। সব মিলে কে কার চেয়ে কত দামী ও সর্বাধুনিক পোশাকে এবারের ঈদে নিজেকে সাজাবে সেই প্রতিযোগীতার আদলে যেন চলছে কেনাকাটার ধূম।

অন্যদিকে জেলা সদরে জেলা পরিষদের বিপনী বিতান বিশেষ করে লিয়াকত ব্রাদার্স, আরিশা, বন বিতান, মসজিদ মার্কেটে ব্রান্ডের কসমেটিকস ও গয়নার দোকানগুলোতে নানা বয়সী মহিলা, কিশোরী ও তরুনীদের ভীড় লক্ষ্যনীয়। প্রায় সকাল থেকেই গভীর রাত পর্যন্ত দোকানগুলোতে নানান বয়সী মহিলা ক্রেতার পদচারণায় মুখর থাকে।

এছাড়াও জেলা সদরে বাহারী শাড়ী বিক্রীর নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্টান মনিকা ক্লথ স্টোর, আমন্ত্রন, রুপেশ্বরী শাড়ীর দোকানগুলোতে সবচেয়ে বেশী ভীড় দেখা গেছে। শাড়ী বিক্রি সম্পর্কে খাগড়াছড়ি শহীদ কাদের সড়কের মনিকা ক্লথ স্টোরের মালিক মোঃ ইদ্রিছ জানান, এবারের ঈদে কেনাকাটায় ক্রেতাদের বেশ আনন্দ ও উৎসাহ লক্ষ্য করছি। অন্যান্যবারের তুলনায় এবার ভারতীয় শাড়ীর পাশাপাশি দেশীয় ঐতিহ্যবাহী শাড়ীর কদর খুব বেড়েছে। বারতীয় স্টারপ্লাস এর স্টোন শাড়ী ও জুট কাতান বেশ ভালই চলছে। বিভিন্ন দামের জামদানীর পাশাপাশি দেশীয় হাতের কাজের নবরুপা, ধুপিয়ান, বিশাল ও টাঙ্গাইল শাড়ীর চাহিদা সমান সমান।

জেলার গুইমারা বাজারস্থ হক ক্লথ ষ্টোরের পরিচালক মোঃ ইয়াছিন জানান, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার তার শাড়ীর ব্যবসা ভাল চলছে। তিনি বলেন এবার সব চেয়ে বেশী বিক্রি হচ্ছে পাবনা-টাঙ্গাইলের শাড়ী ও টিস্যু শাড়ী। কারণ হিসেবে তিনি জানান, অন্যান্য বছর ভারতীয় কাপড়ে বাজার ছেয়ে যেতো। এবার সীমান্ত পাহারা জোরদার করায় ভারতীয় কাপড় বর্তমান মার্কেটে নেই বললেই চলে। তাই ভালো প্রভাব পড়েছে দেশীয় শাড়ীর উপর। এবার আমাদের দেশীয় শাড়ী বেশী বিক্রি হচ্ছে এবং আমরা দামও ভাল পাচ্ছি।

জেলার টেক্সটাইল তথা তাঁত শিপ্লের দোকানগুলোতেও ক্রেতার ভীড় অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশী। খাগড়াছড়ি বেইন টেক্সটাইল এর মালিক সুপ্তা চাকমা জানান, এবার আমাদের তাঁতের পোশাক বিশেষ করে বৈশিষ্টমন্ডিত পাহাড়ী পোশাক অন্যান্য বছরের চেয়ে ভালো বিক্রি হচ্ছে। কারণ হিসাবে তিনি জানান এবার ঈদ এর পর পর পরবর্তী দূর্গাপুজা ও প্রবারণা পূর্ণিমা কাছকাছি সময়ে হওয়ায় বাঙ্গালী ও উপজাতীয়সহ সব ধরনের ক্রেতাই আমরা পাচ্ছি।

কথা হয় ফ্যামেলি নিয়ে ঈদের শপিং-এ আসা মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের সাথে, তিনি জানান-অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার আমরা বেতন বোনাস যথা সময়ে পেয়েছি। তাই সময় নিয়ে শান্ত পরিবেশে মনের মতো করে কেনাকাটা করতে পারছি। তিনি আরো জানান. বর্তমান সরকার অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার মার্কেটগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করায় আমরা নির্ভয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে পারছি। জেলার বিপনী বিতানগুলোর পাশাপাশি ফুটপাতের দোকানগুলোতেও ক্রেতাদের ভীড় চোখে পড়ার মত। মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের লোকেরা ঈদের বাজেট মাথায় রেখে তাদের সাধ্যমত ঈদের কেনাকাটা সারছে।

এম. সাইফুর রহমান,
খাগড়াছড়ি ॥

 

Exit mobile version