parbattanews

সরবরাহ কমিয়ে দিলে বাড়বে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা

তহবিল সংকটে খাদ্য সহায়তা কমানোর ঘোষণায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং ক্যাম্প ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা স্থানীয় প্রশাসন বলছে, খাদ্যাভাব দেখা দিলে রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনায় এতদিনের সব অর্জন মুখ থুবড়ে পড়বে। জীবনের তাগিদে ১০ লাখ রোহিঙ্গা বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে!

ডব্লিউএফপি’র কান্ট্রি ডিরেক্টর ডম স্কালপেল্লির মতে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও মানবিক সহায়তা দানকারী গোষ্ঠীর জন্য এটি বড় ধরনের এক বিপর্যয়। অন্যান্য অতি জরুরি সেবাগুলো সংকুচিত হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য সহায়তায় এই পরিবর্তনের প্রভাব হবে মারাত্মক। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে বিপজ্জনক পথ বেছে নিতে পারে। সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়বে নারী, কিশোরী ও শিশুদের ওপর। খাদ্য সহায়তা কমানোর পরিকল্পনায় বিশ্বের বৃহৎ শরণার্থী শিবিরে খাদ্য নিরাপত্তার সংকট ও পুষ্টিহীনতা আরও ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলোও। সেভ দ্য চিলড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর অনো ভ্যান ম্যানেনের মতে সহায়তা কমার ধারা অব্যাহত থাকলে তা হবে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর প্রতি আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ।

জাতিসংঘের দুই বিশেষ দূত মাইকেল ফাখরি ও টম অ্যান্ড্রুজ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তার তহবিলে ঘাটতি হলে তার ফল হবে বিপর্যয়কর। রোজার মাসের আগে এভাবে রোহিঙ্গা মুসলমানদের রেশন কমিয়ে দেয়ার ঘোষণা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুরের মতে, বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া হলে শরণার্থীরা কাজের খোঁজে আরও মরিয়া হয়ে উঠবে।

তাতে তাদের ক্যাম্পের মধ্যে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে চেপে তারা সাগরপথে মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশে যাওয়ার প্রবণতা আরও বাড়বে। গভীর অনিশ্চয়তায় রোহিঙ্গারা মাদক পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধেও জড়াবে।

ডাব্লিউএফপি’র এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক জনি আইলিয়েফ মনে করেন, এভাবে রোহিঙ্গাদের রেশন কমিয়ে দেয়া অচিন্ত্যনীয়। কক্সবাজারের একটি ক্যাম্পের বাসিন্দা ১৮ বছর বয়সী আরিফ উল্লাহ প্রশ্ন রাখেন যে রেশন তাদের আগে দেয়া হতো, তাতে তাদের কোনোক্রমে চলতো। এখন যদি আরও কমিয়ে দেয়, আমরা তাহলে বাঁচবো কীভাবে?

উল্লেখ্য, অপর্যাপ্ত অনুদানের কারণে রোহিঙ্গাদের দেয়া খাদ্য সহায়তার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। দ্রুত অনুদান না পেলে খাদ্যসহায়তা আরও কাটছাঁট হতে পারে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি। শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোহিঙ্গা সংকটের প্রায় ছয় বছরের মাথায় এই প্রথম ডব্লিউএফপি জীবন রক্ষাকারী সহায়তার পরিমাণ কমিয়ে আনতে বাধ্য হচ্ছে। ১লা মার্চ থেকে খাদ্যসহায়তা ভাউচারের পরিমাণ ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ১০ ডলারে নিয়ে আসা হচ্ছে।

Exit mobile version