সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি: সাপ্তাহিক ‘পঙক্তি’র দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে বক্তারা

fec-image

নারীর সমান অধিকার, সাংস্কৃতিক জাগরণ ও মুক্তচিন্তার বিকাশ ছাড়া বৈষম্যহীন সমাজ গঠন সম্ভব নয় এমন মত প্রকাশ করেছেন বক্তারা।

শনিবার (১ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাপ্তাহিক পঙক্তির দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তারা এ আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ বলেন, ‘নারীরা অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও পুরুষতান্ত্রিক নানা বৈষম্য ও হেনস্তার শিকার হন। আমরা দেখছি, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও নারী ও শিশুরা লাঞ্ছিত, নিপীড়িত হচ্ছে, এটি লজ্জার বিষয়। আমরা এমন সমাজ চাই না। আমরা চাই একটি সত্যিকারের বৈষম্যমুক্ত সমাজ, যেখানে নারী–পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত থাকবে।’

তিনি আরো বলেন, আমরা আশা করব, পঙক্তি আরও এগিয়ে যাবে এবং আরও বৃহত্তর পরিসরে তার অবদান রাখবে। বাংলাদেশের নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে পঙক্তি আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।

প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা বর্তমানে একটি সাংস্কৃতিকভাবে খারাপ সময় পার করছি। একটি নতুন রাজনৈতিক আন্দোলন বারবার ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। সর্বক্ষেত্রে যে অবক্ষয় দেখা দিয়েছে, তাতে একমাত্র একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লবই আমাদের জাতিকে রক্ষা করতে পারে।’

কবি ও কলামিস্ট সোহরাব হাসান বলেন, ‘ফেসবুক–ইউটিউবের যুগে একটি সাহিত্য পত্রিকা টিকিয়ে রাখা অত্যন্ত কঠিন কাজ। বর্তমানে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এক ধরনের বৈরী পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আক্রান্ত হচ্ছে মাজার, দরগা, শিল্পী ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক তৎপরতা। এই আক্রমণ জাতিসত্তার উপর আক্রমণ, আমাদের শিল্প–সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সুকুমার ভিত্তির উপর আঘাত। এর বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে লড়াই করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ষাটের দশকে রাজনৈতিক আন্দোলন ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন একত্রিত হয়েছিল বলেই দেশ স্বাধীন হয়েছে। এখন সময় এসেছে নতুন এক সাংস্কৃতিক জাগরণের।’

সভাপতির বক্তব্যে সাপ্তাহিক পঙ্ক্তির সম্পাদক কবি জান্নাতুল ফেরদৌস পান্না ওরফে পান্না বেগম বলেন, আজ আমি খুব আনন্দিত,উচ্ছ্বসিত। আমি একজন সফল নারী বলে নিজেকে সম্মান করি। আমি ২৬ বছর ধরে কাজ করি। কারোর মুখাপেক্ষী হইনি। একটি পত্রিকা কারোর সহযোগিতা ছাড়া নিয়মিত প্রকাশ করা এতোটা সহজ নয়। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আজকের এই জায়গাটি তৈরি হয়েছে। সাপ্তাহিক পঙ্ক্তি পত্রিকায় নারীদের যে কোনো সমস্যা সর্বাধিক প্রাধান্য পাবে।

বাংলাদেশের আলো পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মফিজুর রহমান বাবু বলেন, সাপ্তাহিক পঙ্ক্তি পত্রিকাটি নিয়ে প্রথম থেকেই আমার একটি চিন্তা ছিল। পত্রিকাটির নাম পঙ্ক্তি কেন? খুব চিন্তা করে এর দুইটি কারণ খুঁজে পেলাম। একটি হলো-এই পত্রিকাটির সম্পাদক একজন কবি ও সাংবাদিক। উনার কবিসত্তার চিন্তাধারা থেকে এই নামটি নির্ধারণ করেছেন। কারণ পঙ্ক্তি শব্দের অর্থ কবিতার লাইন বা সারি। আর দ্বিতীয়টি হলো- সম্পাদকের একমাত্র কন্যার নাম পঙ্ক্তি। সন্তানের প্রতি একজন মায়ের যে অসাধারণ ভালোবাসা, তারই বহিঃপ্রকাশ হলো সাপ্তাহিক পঙ্ক্তি। তিনি বলেন, অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও পত্রিকাটি অত্যান্ত সফলতার সাথে প্রকাশিত হচ্ছে। একটি পত্রিকা করতে অনেক কষ্ট করতে হয়। পত্রিকা চলে বিজ্ঞাপন ও বিক্রির মাধ্যমে। সেটা অনেক কঠিন কাজ। তিনি পত্রিকাটিকে আরো গতিশীল ও চলমান রাখতে সকলের কাছে সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক মানিক মুনতাসির বলেন, মানুষ যেমন তার সীমা ছাড়িয়ে আকাশে যায়, তেমনি সমুদ্রের নিচেও যায়। তাই আমি প্রত্যাশা করবো সাপ্তাহিক পঙক্তির দ্বি-বার্ষিক প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পঙ্ক্তি তার সীমা ছাড়িয়ে অনেক দূরে যাক।

কবি ও সাংবাদিক বজলুর রহমান বলেন, একটি কাগজ প্রকাশনার যে বেদনা সেটি আমরা জানি। সাপ্তাহিক পঙ্ক্তির বর্ষপূর্তি পালন করা হচ্ছে অত্যন্ত খারাপ সময়ে। আমরা যারা পাঠক তারা একটি সু-সম্পাদিত কাগজ পেলে আনন্দিত হই। এ পর্যন্ত যতোগুলো সংখ্যা পড়েছি ,তাতে মনে হয়েছে পঙ্ক্তি একটি অত্যান্ত মানসম্পন্ন ও অনন্য পত্রিকা।কবি আব্দুল মান্নান বলেন, পত্রিকাটি অত্যান্ত মানসম্পন্ন। ঝকঝকে তকতকে। যে কেউই পত্রিকাটি দেখলে পড়তে চায়। আমি পত্রিকাটির সাফল্য কামনা করছি।

কবি মোশাররফ হোসেন ইউসূফ বলেন, সাপ্তাহিক পঙ্ক্তির মতো এতো মানসম্পন্ন পত্রিকা এখনকার সময়ে বাজারে নেই। একটি পত্রিকা বের করা আর টিকিয়ে রাখা খুবই কঠিন কাজ। সেই কঠিন কাজটি অত্যান্ত সফলতার সাথে করছেন পঙ্ক্তি পরিবার।

বাংলানিউজের সাংবাদিক তুলনা আফরিন বলেন, একজন নারী সম্পাদক হয়ে একটি পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশ করে যাচ্ছেন আমাদের পান্না আপা। এটি অত্যন্ত গর্ব ও অহংকারের। পুরো নারী জাতির জন্যে সম্মানের। আমি সাপ্তাহিক পঙ্ক্তির জন্যে শুভকামনা করছি।

অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করে জেরিন ফেরদৌস পঙ্ক্তি। কবি, লেখক, সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা পঙক্তি’র সম্পাদক ও প্রকাশক জান্নাতুল ফেরদৌস পান্নাকে অভিনন্দন জানিয়ে আশা প্রকাশ করেন পঙক্তি’র ভবিষ্যতেও সাহিত্য, সংস্কৃতি ও মানবিক মূল্যবোধের চর্চায় অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন