parbattanews

সাউথপয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজ’র মেধাবী শিক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষা অনিশ্চিত

বৈশ্বিক মহামারী ‘করোনায়’ দেশব্যাপী দীর্ঘ এক বছরের অধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা স্বত্বেও অনেক প্রতিষ্ঠান টিউশন ফি আদায় বাধ্যতামূলক করায় শিক্ষাজীবনে অর্থের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে অনেক শিক্ষার্থীর!

অর্থের কাছে হেরে যাচ্ছে চট্টগ্রামস্থ ‘সাউথপয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজ’র মেধাবী শিক্ষার্থী মেহেরুন নেছা আইরিন! আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপে অর্ধলক্ষ টাকার ভার কাঁধে নিতে না পেরে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার অভিযোগ এনে শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো. আইয়ূব রাজা।

অভিযোগ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সুত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি ‘সাউথপয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজ। এই বিদ্যাপীঠের নিয়মিত ও মেধাবী শিক্ষার্থী মেহেরুন নেছা আইরিন ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত মেধাবী হিসেবে বিনা বেতন অধ্যয়ন করে আসছে। ২০২০ সালে সে ১০ম শ্রেণিতে উত্তীর্ণের পর বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ায় দেশব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এই বন্ধ সময়েও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ‘টিউশন ফি’ আদায় বাধ্যতামূলক করেন। ফলে করোনার ছোবলে বিপর্যস্ত অভিভাবকরা সন্তানদের শিক্ষাজীবন নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন! এমন শঙ্কিত অভিভাবকদের একজন ‘সাউথপয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজ’র ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহেরুন নেছা আইরিন, রোল-৩, শাখা-ক, বিভাগ-বিজ্ঞান এর অভিভাবক মো. আইয়ূব রাজা।

তিনি ১১ এপ্রিল ,রোজ রবিবার চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান বরাবর এক লিখিত অভিযোগে বলেন, আমি একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। আমার জ্যেষ্ঠ কন্যা মেহেরুন নেছা আইরিন সাউথপয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজ’র মেধাবী শিক্ষার্থী। সে আসন্ন ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী। বর্তমান এসএসপি পরীক্ষার ফরম ফিলাপ চলমান রয়েছে। এই দুঃসময়ে আমার মেয়ের বিগত ২০২০ শিক্ষাবর্ষের টিউশন ফি ও অন্যান্য ফি বাবদ ৫৭ হাজার ৮ শত টাকা এবং ফরম ফিলাপ বাবদ ২ হাজার টাকা ধার্য্য করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ! যা আমার কিংবা কোন দরিদ্র/ ক্ষুদ্র পরিবারের পক্ষে এই দুঃসময়ে পরিশোধ করা দুঃসাধ্য!

আমি এই বিষয়ে মানবিক আবেদন নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে সাউথপয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজে গিয়ে ধর্ণা দিয়েও ব্যর্থ হই। আমাকে শিক্ষার্থীর করোনায় বন্ধকালীন সময়ের টিউশন ফি ও অন্যান্য ফি বাবদ মোট ৫৯ হাজার ৮শত পরিশোধ বাধ্যতামূলক করায় আমি মানবিক কারণে টিউশন ফি মওকুপের আবেদন করি। কিন্তু তাতেও প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নারগিস আক্তার সাড়া দেয়নি।

তিনি ফোনে আমাকে বলেন, একাউন্সে (হিসাব শাখা) যোগাযোগ করতে। সেখানে গেলে একাউন্সে কর্মরত ব্যক্তিরা জানান, বকেয়া মওকুপের সুযোগ নেই। প্রয়োজনে অর্ধেক নগদ এবং অর্ধেকের চেক জমা দিয়ে ফরম ফিলাপ করাতে হবে। যার ফলে নিরুপায় হয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীর ভবিষৎ চিন্তা করে মানবিক কারণে লিখিত অভিযোগ করতে বাধ্য হচ্ছি।

অভিভাবক মো. আইয়ূব রাজা পার্বত্যনিউজ’কে জানান, আমি নিরুপায় হয়ে শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত আবেদন করেছি। এছাড়া শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী, শিক্ষা সচিব, জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম’কে অনুলিপি দিয়েছি। আমি চাই শিক্ষার্থীদের মেধা নিয়ে সরকারী নিদের্শ অমান্য করে কেউ যাতে কারো শিক্ষাজীবন ধ্বংসে মেতে উঠতে না পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাউথপয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজ’র চেয়ারম্যান নারগিস আক্তার বলেন, মেহেরুন নেছা আইরিন (শিক্ষার্থী) আমার প্রতিষ্ঠানে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে অধ্যয়নরত। মেধাবী হিসেবে সে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত বিনা বেতন পড়ার সুযোগ পেয়েছে। করোনার বন্ধেও অনলাইনে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত ছিল এবং আছে। ফলে টিউশন ফি ব্যতিত একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা কঠিন। ফলে আমরা অভিভাবকদের সাথে আলোচনাক্রমে টিউশন ফি পরিশোধে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকি। এই মেহেরুন নেছা আইরিন এর অভিভাবক বকেয়া টিউশন ফি পরিশোধে আমাদের পরামর্শ না মেনে এককভাবে পুরো টিউশন ফি পরিশোধে অপারগতা প্রকাশ করে চলে যায়! তাঁর মানবিক বিষয়টি বিবেচনা করে নগদ ও বকেয়ায় টিউশন ফি পরিশোধ করে ফরম ফিলাপ করতে বলেছি। কিন্তু তিনি তা না করে কোথাও অভিযোগ করা ঠিক হয়নি।

Exit mobile version