parbattanews

সাজেকে জুম চাষ বন্ধে পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের নিষেধাজ্ঞা ও মারধোরের অভিযোগ: বিপাকে দ্ররিদ্র জুমিয়ারা

jum

সাজেক প্রতিনিধি:

রাঙামাটি পার্বত্য জেলার দেশের সর্ববৃহত সাজেক ইউনিয়নে হঠাৎকরে আঞ্চলিক দলগুলোর জুমচাষের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় দিশেহারাবোধ করছে সাজেকের পাহাড়ের বসবাসরত জুম চাষীরা। জুম চাষিরা জানায়, এবছর জুম চাষের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে জুম চাষ না করার নির্দেশ দিয়েছে আঞ্চলিক দলগুলোর স্থানীয় নেতাকর্মীরা। কোনো প্রকার আর্থিক সহযোগিতা অথবা বিকল্প আয়ের পথ না দেখিয়ে আকষ্মিক এই নিষেধাজ্ঞায় আগামী দিনগুলোতে তারা কী খেয়ে বাঁচবেন এই ভাবনায় দিশেহারা জুমচাষের উপর নির্ভরশীল কয়েক হাজার গ্রামবাসী।

সম্প্রতি সাজেকের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কয়েকজন গ্রামবাসী নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে এসে তাদের জুম চাষে বাঁধা দান ও মারধোর করার বিষয়ে অভিযোগ করে নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তা চাইলে খবরটি প্রকাশ জানাজাানি হয়।

এদিকে, নিষেধ করা সত্বেও জুম চাষ করতে যাওয়ার অপরাধে গ্রামবাসীদের মারধর করা হচ্ছে অভিযোগ করেছে স্থানীয় অর্ধশত ত্রিপুরা গ্রামবাসী। স্থানীয়রা জানায়, গত প্রায় একমাস ধরেই বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে তাদের কর্মীরা গ্রামবাসীদেরকে এই বছর জুম চাষ বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেয়।

কিন্তু পরিবারের খাবার জোটানোর আর কোনো বিকল্প পথ না থাকায় সাজেকের কয়েকটি এলাকার অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারগুলো কোনো রকম খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার তাগিদে পাহাড়ে জুম চাষের জন্য যায়। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে আঞ্চলিক দলের নেতৃবৃন্দ ঐসব জুমচাষীদের ধরে এনে ব্যাপক মারধর করে। এই ঘটনায় পুরো এলাকায় আতংক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জানা গেছে, সাজেকের ৩৩টি পাড়ায় কয়েক হাজার ত্রিপুরা গ্রামবাসীর বসবাস। এদের মধ্যে প্রায় সকলেই ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের। গুটি কয়েক অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোক আছে যারা কিনা জুম চাষের পাশাপাশি সরকারি রিজার্ভ ফরেষ্টের গাছ ও নিজেদের সৃজিত বাগানের গাছ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

কিন্তু ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকজন আর্থিকভাবে চরম অস্বচ্ছল এবং পড়ালেখায়ও অনগ্রসর। এসব প্রান্তিক জনগোষ্ঠির লোকেরা একমাত্র জুমচাষের উপর নির্ভরশীল হয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। আঞ্চলিক দলগুলোর পক্ষ থেকে এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা ও মারধরের ঘটনায় নিজেদের অস্তিত্ব নিয়েই শংকিত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে সাজেকের হাজারো গ্রামবাসী।

জুমচাষীদের মারধররের ব্যাপারে রুইলুই পাড়ার হ্যাডম্যান লাল থাং লুসাই’র সাথে কথা বললে তিনি জানান, ত্রিপুরা জুমচাষীদের মারধররের বিষয়টি আমি কারো কাছ থেকে শুনতে পায়নি। তবে সাজেকে আঞ্চলিক দলের পক্ষ থেকে জুমে আগুন দিয়ে ব্যাপক আকারে জুমচাষ করতে নিষেধ আছে।

বিষয়টি নিয়ে সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, মারধরের বিষয়টি আমি কারও কাছে শুনি নাই এবং আমাকে কেউ অবহিতও করেনি, তবে আমার জানামতে আঞ্চলিক রানৈতিক দলের পক্ষ থেকে জুমচাষের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু সাজেকের সব এলাকায় নয় যেখানে গাছ/বাঁশ বাগান রয়েছে সেখানের আশেপাশের এলাকায় জুমচাষ না করার জন্য নিষেধ করা হয়েছে।

বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়াম্যান ও জেএসএস নেতা বড়ঋষি চাকমার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাদের পক্ষ থেকে জুম চাষে কোনো প্রকার বাধাঁ দেওয়া হয়নি। কারা এই কাজ করেছে আমি বলতে পারবো না। তবে আমি আপনার মতই বিষয়টি শুনেছি কিন্তু সাজেকের জুম চাষীদের পক্ষ থেকে কেউ আমাকে এখনও বিষয়টি জানায়নি।

এই বিষয়ে বাঘাইছড়ি উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোঃ মফিদুল আলম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এই ব্যাপারে আমার কাছে কেউ কোনো ধরনের অভিযোগ নিয়ে আসেনি এবং জানায়নি। কেউ যদি প্রশাসনকে এই ব্যাপারে অভিযোগ জানায় তাহলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়েছেন নির্বাহী কর্মকর্তা।

বিষয়টি নিয়ে ইউপিডিএফ’র কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক নিরন চাকমার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, সরকারী বন বিভাগের পক্ষ থেকে এমনিতে জুম চাষের নিষেধ রয়েছে। ইউপিডিএফ’র গণতান্ত্রিক গঠনতন্ত্রের মধ্যে ব্যাপক আকারে জুমচাষের উপর নিষেধ রয়েছে কারণ পরিবেশের ভারসাম্য ও জীব-বৈচিত্র রক্ষায় জন্য। জনগনের কাছে সহযোগীতা চাওয়া হয়েছে, জুম চাষ হচ্ছে স্বল্প মেয়াদী আয়ের উৎস, দীর্ঘ মেয়াদী আয়ের জন্য জুম চাষের পরিবর্তে বনজ ও ফলজ বাগান করার জন্য জনগনকে সচেতন করার চেষ্টা ই হচ্ছে আমাদের কর্তব্য।কিন্তু ছোট আকারে বাড়ীর আঙ্গিনায় জুমচাষের উপর কোন নিষেধ নেই।

তবে জুম চাষীদের উপর মারধরের বিষয়টি আমাদের রাজনৈতিক দলের কোন নেতা কর্মী পক্ষ থেকে করা হয়নি এবং কে বা কারা মারধর করেছে আমাদের জানা নেই।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, মূলত গোপন আস্তানা ও লুকানোর জায়গা ধংসের ভয়ে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা আগুন দিয়ে জুম চাষের বিরোধিতা করছে।

উল্লেখ্য,  জুম চাষ পরিবেশ ও জীব বৈচিত্রের জন্য হুমকি স্বরূপ হওয়ায় সরকার ও পরিবেশবাদীরা দীর্ঘদিন ধরেই জুমচাষের পরিবর্তে বিকল্প চাষাবাদে পাহাড়ীদের উদ্বুদ্ধ করছে। কিন্তু বিকল্প নিশ্চিত না করে জুম চাষ বন্ধ করে দেয়ায় ক্ষুদ্র ও দরিদ্র চাষীরা বিপাকে পড়েছে।

Exit mobile version