সাজেক প্রতিনিধি:
বাউকুলের চাষ করে নিজেদের ভাগ্য বদলেছেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা সাজেকের অর্ধ-শতাধিক পাহাড়ি পরিবার। এবছর সাজেকে বাউকুলের বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় সবগুলো গাছের ফল বিক্রিও প্রায় শেষ পর্যায়ে। সাজেকে উৎপাদিত এসব বাউকুল আকারে বড় এবং স্বাদেও মিষ্টি। সাজেক পাহাড়ের উঁচু নিচু জমিতে এবছর ব্যাপকহারে বাউকুল উৎপাদন হয়েছে।
ফলের ভারে নুয়ে পড়া গাছগুলোকে বাঁশের ঠেকা দিয়ে সোজা করে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। ৫ থেকে ১০ ফুট উঁচু প্রতিটি গাছে ঝুলছে পরিপুষ্ট বাউকুল। কোনোটি সবুজ আবার কোনোটিতে হালকা বাদামী রং ধরেছে। ফলের ভারে কোনো কোনো ডাল বাউকুলসহ মাটির উপরেই লতার মমো পড়ে আছে।
৭ জানুয়ারি রাঙামাটির সাজেকের বাঘাইহাট ডিপু পাড়ার সুজন চাকমার বাউকুল বাগানে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। ৮০ শতাংশ জায়গা জুড়ে সুজন চাকমার বাগানে সব মিলিয়ে ১৮৫টি বাউকুল গাছ রয়েছে। সবকটি গাছেই ফলন এসেছে। বড় আকারের এ বাউকুল’র একেকটির ওজন ৩০ থেকে ৫০ গ্রাম। স্বাদেও বেশ মিষ্টি।
শুধু সুজন চাকমা নন, সাজকের ডিপু পাড়া, গুচ্ছ গ্রাম নোয়াপাড়া, গ্লোকমা ছড়া, মাচালং এ্যাগোজ্যাছড়ি এলাকায় তার মতো আরও অর্ধ-শতাধিক বাউকুলচাষী রয়েছে। এ বছর এ এলাকায় বাউকুলের ফলন যেমন বেশি হয়েছে, তেমনি ভালো দামও পাওয়া যাচ্ছে। এ মৌসুমে একেকজন চাষি পঞ্চাশ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত বাউকুল বিক্রি করেছে।
বাউকুল চাষী সুজন চাকমা জানান, ২০১৪ সালে খাগড়াছড়ির এক নার্সারী থেকে বাউকুলবীজ সংগ্রহ করেন। ৮০ শতাংশ জায়গায় ১৮৫টি চারা রোপণ করেছেন। ২০১৫ সাল থেকে বাগানে ফল আসা শুরু হয়। প্রথম বছরেই বাগান থেকে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার মত বাউকুল বিক্রি হয়েছে। আর এ বাগান করতে প্রথম ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ বছর বাগানে বাদুর ও অন্যান্য পাখিদের হাত থেকে রক্ষা করতে জাল দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় পুরো বাউকুল বাগান এবং ওষুধসহ বাগান পরিষ্কার করা বাবত খরচ হয় প্রায় ছয় হাজার টাকা। ঠিকমত বাগান পরিচর্যার কারণে বাগানে বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে ফলন্ত বাগানে উৎপাদিত অর্ধেক বাউকুল বিক্রি করে আয় হয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার টাকা। প্রতি কেজি বাউকুল প্রথমে ৮০ টাকা ও এখন ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
সুজন চাকমা আরও বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় সাজেকে উৎপাদিত বাউকুল এখন সহজেই চট্রগ্রাম, কুমিল্লা, রাজধানী ঢাকাতেও নিয়ে যেতে পারছেন ব্যবসায়ীরা।
সুজন চাকমার মতো ডিপু পাড়ার শান্তিময় চাকমা, মিলন কার্বারী, খোকন চাকমা তাদের বাউকুল চাষে অভাবনী সাফল্যের বর্নণা দেন এবং বাউকুল চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে ও স্বাবলম্বী হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তারা।
কম পুঁজিতে লাভ বেশি হওয়ায় সাজেকে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বাউকুল চাষ। বাম্পার ফলন আর বেশি লাভের আশায় জুম চাষ বাদ দিয়ে বাউকুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে পাহাড়ি সাজেক অঞ্চলের কৃষকরা।
সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নেলশন চাকমা বলেন, সাজেকে কয়েক বছর ধরে বাউকুল চাষ করা হচ্ছে। প্রতিবছর ফলন বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে ডিপু পাড়া গ্রামে বেশি বাউকুল চাষ হয়। সাজেকের বাউকুল বড়, স্বাদেও মিষ্টি। এলাকায় মিশ্র ফলদ বাগানেরও প্রয়োজন রয়েছে। সরকারি সাহায্য পেলে এখানে বাউকুল চাষ বাড়বে, পাশাপাশি কৃষকেরা অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হবে বলেও মনে করেন নেলশন চাকমা।
বাঘাইছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল ইমরান বলেন, উপজেলার ৫-৬একর জমিতে বাউকুল চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সাজেকে ৩-৪ একর জমিতে কৃষকেরা আমাদের পরামর্শক্রমে চাষ করেছেন, এবছর বাম্পার ফলন হয়েছে বলে বাউকুল চাষীদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি। উপজেলার সাজেকেই প্রথম বাউকুল চাষ শুরু হয় এবং সেখানের আবহাওয়া ও মাটি উপযোগী হওয়ায় এর ফলন বেশি হচ্ছে।