সাপের দ্বীপের কথা (ভিডিও)

http://cdn4.thedhakatimes.com/wp-content/uploads/2013/07/snake-2.jpg

ডেস্ক নিউজ: 

অনেক দ্বীপের কথা শোনা যায় কিন্তু সাপের দ্বীপ আছে এমন কথা বোধহয় শোনা যায়নি। এবার শোনা গেলো একটি সাপের দ্বীপের কথা। সে কাহিনীই তুলে ধরছি।
আপনি যদি কোনো দ্বীপে বেড়াতে যান নিশ্চয়ই আপনার ভালো লাগবে। দ্বীপে ভেসে আসা সাগরের খোলা হাওয়া মনপ্রাণ জুড়িয়ে দেবে। কিন্তু যদি দ্বীপের প্রতি তিন ফুট পর পর মৃত্যু ফাঁদ আপনার জন্য অপেক্ষা করে, তবে কি সে দ্বীপে যাওয়া যায় আর এই মৃত্যুফাঁদ কিন্তু প্রাকৃতিক। সেটি হচ্ছে সাপ। প্রতি তিন ফুট পর পর একটা করে বিষাক্ত সাপের কবলে পড়তে হয় ওই দ্বীপে। এমন একটা দ্বীপ নিশ্চয়ই আপনাকে টানবে না। আর যদি
আপনার সাপের ভয় থাকে, তবে তো কথাই নেই। হাতি দিয়ে বেঁধেও আপনাকে ওই দ্বীপের নেয়া যাবে না।

আপনি হয়ত চোখ দুটো কপালে তুলে দিয়ে ভাবছেন- এমন দ্বীপ কি সত্যিই আছে। আসলেও রয়েছে এমন দ্বীপ। জায়গাটার নাম ‘ইহা ডি কুইমাডা গ্র্যান্ডি’, নামটা বেশ খটমট শোনাচ্ছে। জায়গাটা ব্রাজিলে। ব্রাজিলের সাগর ঊপকূল থেকে ৯০ মাইল দূরে দ্বীপের অবস্থান। সাও পাওলো রাজ্যের অর্ন্তগত। দ্বীপের আয়তন ১১০ একর বা চার লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। স্থানীয়দের মতে, এখানে প্রতি বর্গমিটারে পাঁচটি সাপ বাস করে। তবে ডিসকভারি চ্যানেল থেকে একটা ডকুমেন্টরি করা হয়েছিল। সেখানে দেখা গেছে, প্রতি বর্গমিটারে একের অধিক সাপ আছে। আর সবচেয়ে বেশি আনাগোনা করা সাপকে ব্রাজিলিয়ানরা বলে ‘ফার-ডি-ল্যান্স’, মানে গোল্ডেন ল্যান্সহেড ভাইপার। দুনিয়ার বিষধর সাপদের অন্যতম।

আর এসব কারণে ‘ইহা ডি কুইমাডা গ্র্যান্ডি’কে ছাড়িয়ে দ্বীপের নাম হয়ে গেছে ‘সাপের দ্বীপ’ বা ক্লে আইল্যান্ড। ক্লে আইল্যান্ড নামেই দ্বীপটির সুখ্যাতি কিংবা কুখ্যাতি। ওই দ্বীপে পা ফেলার মতো জায়গাও খুব একটা বেশি নেই সাপের জন্য। দিন দিন সাপের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এই গোল্ডেন ল্যান্সহেডদের বংশবৃদ্ধির হারও খুব বেশি। আর এসব সাপ এতই বিষধর যে, একটা মাত্র ছোবলে যে পরিমাণ বিষ ঢেলে দেয়, সঙ্গে সঙ্গে মারা যেতে পারে যে কোনো পূর্ণবয়স্ক মানুষ। এমনকি একেকটা সাপ একবারে দুটো মানুষকেও মেরে ফেলতে পারে। আর এদের কামড়ে আশপাশের মাংস পর্যন্ত গলে যায়।

প্রচলিত রয়েছে, একবার এক জেলে না বুঝে ঢুকে পড়েছিল ওই সাপের দ্বীপে। দূর থেকে থোকায় থোকায় কলা দেখেছিল জেলেটি। কিন্তু কলা আনতে গিয়ে সাপের ছোবল খেয়ে কোনো রকমে নিজের নৌকায় এসে উঠতে পেরেছিল। কয়েকদিন পর সেই জেলেকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রচুর রক্তপাত হয়েছিল তার শরীর থেকে। সাপগুলোও লম্বায় এক মিটার থেকে দুই মিটার লম্বা। মানে তিন ফুট থেকে সাড়ে ছয়ফুট। সাপগুলোর প্রধান খাবার হচ্ছে দ্বীপে উড়ে আসা সামুদ্রিক পাখি। উড়তে উড়তে ক্লান্ত পাখিরা যখন দ্বীপে এসে জিরোয়, তখনই
সুযোগ বুঝে পাখিদের খাবার বানিয়ে নেয় বিষাক্ত সাপেরা।

আরেক গল্পের কথা প্রচলিত রয়েছে। একসময় ওই দ্বীপে বাতিঘর ছিল। ওই বাতিঘর রক্ষণাবেক্ষণকারী বাতিঘরেরই উঁচু মাচানে পরিবার পরিজন নিয়ে বাস করতেন। এক রাতে কয়েকটি সাপ আক্রমণ করে তাদের ঘরে। জানালা দিয়ে ঢুকে পড়ে ঘরের ভেতরে। ঘরে তখন ছিল বাতিঘর দেখাশোনাকারী লোকটি, তার বউ আর তিন ছেলেমেয়ে। সাপের আক্রমণে কোনো রকমে তারা নৌকায় এসে উঠতে পেরেছিল। কিন্তু রেহাই মেলেনি। সাপেরা তাদের তাড়া করেছিল। গাছের উঁচু ডালে উঠে বিষ ছুঁড়ে মেরেছিল তাদের দিকে। তারপর ব্রাজিলের
ঊপকূলে পৌঁছার আগেই মৃত্যু হয় সবার। এমন বিষাক্ত দ্বীপে এরপর থেকে আর কোনো মানুষ থাকে না। কাজেই ওখানে কোনো মনুষ্য বসতি নেই। কোনো পর্যটকেরও যাওয়া নিষেধ। কেবল গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীরা যেতে পারেন তবে পূর্বানুমতি নিয়ে।

আর তাই এই দ্বীপের পুরো রাজত্ব-মালিকানা এখন সাপদেরই! এখানে কি আপনি কখনও যাওয়ার কথা ভাবতে পারেন?

দ্বীপটির ভিডিও দেখুন –

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন