parbattanews

সাবেক এমপি পুত্র ও দুইবারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রাজু এখন চট্টগ্রামে উবার মটো চালক

সাফায়েত হোসেন রাজুর ফেসবুক পোস্টের স্ক্রীন শট থেকে নেয়া

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু দুইবারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েও উবারে মটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। যখন রাজনীতিবিদদের অফিস, কার্যালয়ে শতশত কোটি টাকা, স্বর্ণালংকার পাওয়া যাচ্ছে তখন এমন খবর কিছুটা বেমানান ও অবিশ্বাস্য বটে। কিন্তু এই অবিশ্বাস্য কাণ্ডই ঘটিয়েছেন কক্সবাজারের সাবেক বিএনপি দলীয় এমপি মরহুম মাহামুদুল করিম চৌধুরী পুত্র শাফায়েত হোসেন রাজু। পার্বত্যনিউজকে তিনি এর সত্যতা স্বীকার করেছেন।

জানা যায়, এলাকায় উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শাফায়েত আজিজ রাজু এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। তিনি টানা দশ বছর পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। রাজুর পিতা মরহুম মাহামুদুল করিম চৌধুরীও ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান। রাজু পেকুয়া উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচিত প্রতিষ্ঠাতা উপজেলা চেয়ারম্যান।

তিনি সম্প্রতি চট্টগ্রামে অ্যাপস ভিত্তিক পাঠাও, উবার, ওভাই ও সহজে মোটরসাইকেল রাইড শেয়ার করে চলছেন চট্টগ্রাম সিটির অলি গলিতে। পরিচিত জনেরা দেখে যেমন বিস্মিত হচ্ছেন আবার কেউ কেউ স্বাগত জানাচ্ছেন ।

তিনি এ বিষয় নিয়ে ফেসবুকে একটি স্টাটাস দিয়েছেন যা মুহুর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকে সাধুবাদ জানিয়ে কমেন্ট করছেন। অনেকে তরুণ এই নেতার স্টাটাস নিজেদের ওয়ালে শেয়ার করে নিয়েছেন।

জানা যায়, শাফায়েত আজিজ রাজু পেকুয়া উপজেলার দুই বার নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান। যদিও বা এবারের নির্বাচনে তার দল (বিএনপি) অংশ না নেয়ায় তিনি নির্বাচনে লড়েননি। তার এই রাইড শেয়ারিং নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে আলোচনা । সবাই বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং তার সততার জন্য সবাই স্যালুট জানাচ্ছেন ।

সাবেক এই উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা সোমবার তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক টাইমলাইনে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকে সাধুবাদ জানিয়ে কমেন্ট করছেন। অনেকে এই তরুণ ও পরিশ্রমী নেতার স্ট্যাটাস নিজেদের ওয়ালে শেয়ার করছেন। ফেসবুকে তার দেয়া স্ট্যাটাস টি হুবহু তুলে দেয়া হলো-

“পাঠাও, উভার, সহজ, ও ভাই এ্যাপস ভিত্তিক শেয়ারিং রাইড।

যে বাইক বা কারটি এতদিন আপনাদের কাছে সৌখিন ছিল উপরোক্ত কোম্পানীর কারনে তা এখন আপনার রুটি রুজির অংশ। স্বাধীন পেশা, প্রয়োজনের তাগিদে উপার্জনের মাধ্যম নচেৎ সৌখিনতার অংশ।

শিক্ষার হার যেমন বাড়ছে তেমনি উচ্চ শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। অংকের সংখ্যা হেরফের করে জিডিবি’র প্রবৃদ্ধি উচ্চ সূচকে দেখানো যায় কিন্তুদেশের বেকারত্বের হারকে কাষ্টমাইজ করা যায়না।

এই সময়ে অ্যাপস ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং তাই যুব সমাজের কাছে খুবই জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। বাইকে একটু খাটুনি দিলে হাজার টাকা দিনে রোজগার করা যায়, যেখানে পূঁজি এক লক্ষ হলেই চলে সাথে বৈধ কাগজ পত্র। মাসে ত্রিশ হাজার টাকার একটি চাকরির জন্য আমরা কত কিছুইনা করি। জমি জমা বিক্রি করে নেতার পিছু পিছু ২/৪/৫/১০/২০ লক্ষ টাকা দিয়েও চাকরি হয়ে যায় সোনার হরিণের মত অধরা।

অন্যদিকে টাকা ফেরত না পেয়ে আত্মহত্যা, মাদকাসক্ত, দেশান্তরি থেকে শুরু করে অনেক কিছুতেই জড়িয়ে পড়ছে দেশের প্রাণশক্তি যুবসমাজ। মোটকথা পাঠাও, উবার, ওভাই, সহজ এগুলো ড্রাইভিং পেশাটির সম্মান বৃদ্ধি করেছে। একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে অল্প পূঁজিতে যে কেউই এই পেশায় আসতে পারে এবং এসেছেও, এমনকি মেয়েরাও এসেছে।

লজ্জা, শরম, ইগো, পাছেলোকে কিছু বলবে এই বিষয়গুলো মাথা থেকে ঝেড়ে আমার মত আপনিও নেমে পড়ুন রাস্তায়। সহজ পন্থায় হালাল পথে বৈধ ইনকাম। কারো দয়ায়, কারো দাক্ষিণ্যে বা করুণায় বেশি দিন চলা যায় না। কেউ আপনাকে চাকরি দিবে বা কারো উপর নির্ভরশীল হয়ে বসে থাকাটা চরম বোকামি ছাড়া কিছুই নয়। অন্তত যতদিন পর্যন্ত আপনার যোগ্যতানুযায়ী কিছু করতে পারছেন না ততদিন পর্যন্ত চালিয়ে যান।

কথায় আছে অভাব দরজা দিয়ে ঢুকলে ভালবাসা জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়। সুতরাং ঘরের মানুষের কাছে বোঝা এবং বাইরের মানুষের কাছে মজা না হতে চাইলে এখনি সিদ্বান্ত নিন আপনি কি করবেন? মনে রাখবেন “ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণা বিন্দু বিন্দু জল গড়ে তোলে মহাসাগর” বড় কিছু পেতে চাইলে ছোট দিয়েই শুরু করুন। আজকের ছোট কাজের অভিজ্ঞতা আগামীকালের বড় কাজের প্রেরণা হয়ে আপনার সাহস সঞ্চার করবে। বি: দ্র: আমাকে রাইড শেয়ার করতে দেখে কেউ লজ্জা পেলে তার জন্য আমি দায়ী নই”।

পার্বত্যনিউজের পক্ষ থেকে বিষয়টির সত্যতা জানার জন্য শাফায়েত হোসেন রাজুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমার পিতা সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন। অনেকটা জমিদারের মতো ছিলো আমাদের পরিবার। আমি উপজেলা নির্বাচন করতে গিয়ে আমার ভাগের অনেক জমি বিক্রি করে দিই। চেয়ারম্যান হিসেবে দুই বারের দায়িত্বপালন কালে আমি টাকা পয়সা কামাইয়ের ধান্দা না করে জনসেবাকে প্রাধান্য দিয়েছি। গত উপজেলা নির্বাচনে আমার দল অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত দেয়ায় আমি উপজেলা নির্বাচন করিনি। আমি অনেকদিন থেকেই পরিবারসহ চট্টগ্রামে ভাড়া বাসায় বসবাস করছি। অল্প কিছু স্বঞ্চয় যা ছিলো তা দিয়ে টুকটাক ব্যবসা করার চেষ্টা করে সফল হইনি। এরপর থেকে দীর্ঘদিন চাকুরি খোঁজ করেছি। কিন্তু আমার পরিচয় জানার পর কেউ আমাকে চাকুরি দিতে রাজি হয়নি।

রাজু বলেন, পারিবারিক অবশিষ্ট জমিজমা থেকে যা পাই তা দিয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের পড়ালেখা চালানো কঠিন হয়ে পড়ায় আমি অনেকটা বাধ্য হয়েই আমার নিজের বাহন মটরসাইকেল দিয়ে রাইড শেয়ার দেয়ার সিদ্ধান্ত নিই। যেহেতু কাজটা আমি করছি, তাই অন্যান্য শিক্ষিত বেকাররাও যেন একাজে আগ্রহী হয়, কাজটা হেয় না করে তাদের উদ্বুদ্ধ করার চিন্তা থেকেই ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছি। আমি বুঝাতে চেয়েছি, আমি এমপি পুত্র ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে যদি রাইড শেয়ারিং করতে পারি তাহলে অন্যরাও একই কাজ করতে পারবে।

এক প্রশ্নের জবাবে রাজু বলেন, আমার প্রাইভেট কার কেনার সামর্থ থাকলে মটর সাইকেল চালাতাম না। বর্তমানে আমি মটর সাইকেল রাইড শেয়ারিং করে দিনে ৭শত থেকে ১ হাজার টাকা খরচ বাদে আয় করে থাকি।

পোস্টটি স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। এই পোস্টের একজন কমেন্ট করেছেন, ‘প্রিয় রাজু, তোমাকে অন্তরের গভীর থেকে শুভেচ্ছা। আল্লাহ তোমাকে আরো দীর্ঘ হায়াত প্রদান করুক, তোমার পিতার মতো জনগনের সেবা করার জন্য। রাইড শেয়ারিং ও বিশাল জনসেবা ও জীবন চলার মহৎ পেশা। হয়তো তোমার বেলায় জীবন চলার জন্য নয়।

মোহাম্মদ আবু জুবায়ের কমেন্টে লিখেছেন, রাজু ভাই স্যালুট আপনাকে আপনার বাজাজ কেলিবার সবুজ রং এর বাইক দিয়ে আমি প্রথম মটর সাইকেল চালানো শিখেছিলাম। আপনাকে দেখে আজ হঠাৎ পুরনো কথা মনে পড়ে গেল। বিদেশে এই পেশা নিয়ে অনেক গর্ব কিন্তু দেশে কেনো জানি মানুষ নানান মন্তব্য করে যাই হউক আপনার যাত্রী হতে পারা সৌভাগ্যের আমাদের জন্য।

কামরুল হাসান লিখেছেন, রুটিরুজির নয় নিশ্চয় তরুণ প্রজন্মের পথ প্রদর্শক হিসেবে আপনার এই পেশায় আসা। ধন্যবাদ আপনাকে মানসিক দেয়াল ভাঙবার জন্য। অনেকেই অনুপ্রাণিত ও উপকৃত হবে। মোক্তার আহমেদ লিখেছেন, আপনাকে নেতা হিসেবে নয় খুবই প্রিয় একজন বড় ভাই হিসেবে জানতাম। ভালবাসা আপনার জন্য।

আমাদের যুব সমাজ আপনাকে দেখে শিক্ষা নিক। আমি গার্মেন্টস এর সোয়টার আপারেটর থেকে ব্যাংকের ম্যানেজার হয়েছি ভাই। পৃথিবীতে কোন কাজ ছোট নয়। আশা করি আপনার বাইকে আপনার পাশে বসার সৌভাগ্য আমার হবে।

Exit mobile version