সারা বছরই আলোচনায় ছিল বান্দরবান

fec-image

২০২২ সাল বান্দরবান শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামেই নয়, বরং সারা দেশেই আলোচিত ছিল বিভিন্ন ঘটনার কারণে। বছরের শুরুর দিকে জেএসএস সন্তু গ্রুপের সন্ত্রাসীদের হামলায় এক সেনা সদস্যের নিহত হওয়ার ঘটনা সারা দেশে আলোড়ন তুলেছিল। এরপর কেএনএফ-এর উত্থান, জেএসএস (সন্তু) সমর্থিত সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ জেএলএ এবং কেএনএফ-এর মধ্যকার লাগাতার দ্বন্দ্ব-সংঘাতের খবরে বান্দরবান ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। অবশেষে কেএনএফ-এর সাথে জঙ্গি সংগঠনের কানেকশানকে ঘিরে শুরু হয় যৌথবাহিনীর অভিযান। এক পর্যায়ে বেশ কিছু অস্ত্রসহ কেএনএফ এবং জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের অ্যারেস্ট করে তাদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাব। তাছাড়া বান্দরবান-মিয়ানমার সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরের চলমান সংঘাতের জেরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরের অনেকে হতাহতের শিকার হয়। ফলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবেও আলোচিত হয়ে ওঠে বান্দরবান। সর্বশেষ বান্দরবানের মিয়ানমার সীমান্তে মাদককারবারিদের ধরতে গেলে ডিজিএফআই কর্মকর্তার নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। সেসব ঘটনাই বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:

১ সেনা সদস্য ও ৩ সন্ত্রাসী নিহত

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের রুমা উপজেলায় সেনাবাহিনীর সাথে জেএসএস সন্ত্রাসীদের বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। এসময় ১ জন সেনা কর্মকর্তা ও ৩ জন সন্ত্রাসী নিহতের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টায় রুমা উপজেলার বথিপাড়া এলাকায় এঘটনা ঘটে। সেনাবাহিনী সূত্র জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) সন্ত্রাসীদের একটি শসস্ত্র দল রুমা উপজেলার বথিপাড়া এলাকায় চাঁদাবাজির জন্য আগমন করবে এমন তথ্যের ভিত্তিতে রাইং খিয়াং লেক আর্মি ক্যাম্পের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবের নেতৃত্বে একটি সেনা টহল দল পাহাড়ি পথ পায়ে হেঁটে বথি পাড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে টহল দলটি উক্ত এলাকায় পৌঁছালে পাড়ার নিকটস্থ একটি জুম ঘর থেকে সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীরা অতর্কিত গুলি বর্ষণ করে। জবাবে সেনা টহল দলের সদস্যরাও সন্ত্রীদের লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি চালায়। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে প্রায় ৩ ঘণ্টা বন্দুক যুদ্ধ চলে। বন্দুক যুদ্ধের এক পর্যায়ে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস সন্ত্রাসী দলের তিনজন সশস্ত্র সন্ত্রাসী গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যায়। এসময় সেনাবাহিনীর গুলির মুখে টিকতে না পেরে পালিয়ে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীদের এলোপাথারি ছোঁড়া গুলিতে মাথায় গুলি বিদ্ধ হয়ে সেনাবাহিনীর টহল কমান্ডার সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমান ঘটনাস্থলেই নিহত হন এবং ফিরোজ নামে এক সেনা সদস্য ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন।

পরে সেনা টহল দলের সদস্যরা উক্ত এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত ১টি এসএমজি, ২৭৫ রাউন্ড তাজা গুলি, ৩টি এম্যোনিশন ম্যাগাজিন, ৩টি গাদা বন্দুক, গাদা বন্দুকের ৫ রাউন্ড গুলি, ৪ জোড়া ইউনিফর্ম এবং চাঁদাবাজির নগদ ৫২৯০০ টাকা উদ্ধার করে।

৫ সন্ত্রাসী নিহত

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলায় দুই ঘণ্টার ব্যবধানে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই উপজাতীয় শসস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপের বন্দুক যুদ্ধে চার সন্ত্রসী নিহত হয়। শনিবার (১৩ মার্চ) দুপুর ২টায় রোয়াংছড়ি উপজেলার মবাইতং এলাকায় এঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানায়, শনিবার বেলা ১২টায় রোয়াংছড়ি তালুকদার পাড়া থেকেএক দল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী জেএসএস এর শসস্ত্র শাখার পরিচালক উনুমং মারমা রয়েলকে গুলি করে হত্যা করে সাঙ্গু নদী পথে চলে যাওয়ার সময় ওই সন্ত্রসী দলের সাথে জেএসএস সন্ত্রসীদের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর সন্ধ্যায় উক্ত স্থানে ৪টি লাশ পড়ে থাকার বিষয়টি সেনাবাহিনীকে জানায় এলাকাবাসী। ঘটনার সংবাদ পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ৩টি লাশ উদ্ধার করে।

কেএনএফের ঘাঁটিতে অভিযান

 

পার্বত্য জেলা বান্দরবান ও রাঙামাটির দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী কেএনএফ এর ঘাঁটিতে অভিযান চালিয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ৭ ও পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী শসস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর ৩ সদস্যসহ মোট ১০ জনকে আটক করেছে র‌্যাব। এসময় বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার (২১ অক্টোবর) বেলা ১২টায় বান্দরবান মেঘলাস্থ জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে র‌্যাবের এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া ইউংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল খন্দকার আল মঈন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) রাতে রাঙামাটির বিলাইছড়ির সাইজামপাড়া ও বান্দরবানের রোয়াংছড়ি বাজার এলাকায় র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার নেতৃত্বে র‌্যাব-৭ ও র‌্যাব- ১৫ অভিযান পরিচালনা করে। এসময় পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ক্যাম্প থেকে জঙ্গি সদস্য (১) সৈয়দ মারুফ আহাম্মদ প্রকাশ মানিক (৩১) পিতা সৈয়দ আবুল কালাম, থানা জগন্নাথপুর জেলা সুনামগঞ্জ (২) ইমরান হোসাইন শাওন (৩১) পিতা মো. শাহ আলম, থানা স্বরূপকাঠি জেলা ফিরোজপুর (৩) কাওসার শিশির (৪৬) পিতা গোলাম কিবরিয়া, থানা শৈলকুপা জেলা ঝিনাইদহ (৪) জাহাঙ্গীর আহাম্মদ জনু (২৭) পিতা ফজলুল হক, থানা বিয়ানীবাজার জেলা সিলেট (৫) মো. ইব্রাহীম আলী(১৯) পিতা নয়ন মৃধা নুরজ্জামান, থানা মুলাদি জেলা বরিশাল (৬) আবু বক্কর ছিদ্দিক বাপ্পি (২৩) পিতা আতিকুল আলম, থানা গোলাপগঞ্জ জেলা সিলেট (৭) রুফু মিয়া (২৬) পিতা আব্দস সালাম, থানা ছাতক জেলা সুনামগঞ্জ। আর বিচ্ছিন্নতাবাদী কেএনএফ সদস্যরা হচ্ছে (১) জৌথান স্যাং বম (১৯) পিতা লাল মুন সয় বম, রোয়াংছড়ি বান্দরবান (২) ষ্টিফেন বম (১৯) পিতা লাল মিন সম বম, রোয়াংছড়ি বান্দরবান এবং (৩) মাল সম বম(২০) পিতা জিক বিল বম,রোয়াংছড়ি বান্দরবান। এসময় তাদের ক্যাম্প থেকে এসবিবিএল বন্দুক ৯টি গুলি ৫০ রাউন্ড, কার্তুজ কেইস ৬২টি, লম্বা বন্দুক ৬টি, কার্তুজ কেইস ১টি, কার্তুজ বেল্ট ২টি, বিদেশি পিস্তল ১টি এবং বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র, ওয়াকিটকি ও পোশাকসহ নানান সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

পাড়াবাসীর হামলায় এক পরিবারের ৫ জন নিহত

বান্দরবানের রুমার গ্যালেংগা ইউনিয়নের আবু পাড়ায় বাবা ও তার ৪ ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করেছে পাড়াবাসীরা। নিহতরা হলেন, আবু পাড়ার কারবারী ল্যাংরুই ম্রো (৬০) ছেলে রুংথুই ম্রো (৪৫), লেংরুং ম্রো (৪২), মেনওয়াই ম্রো (৩৭) ও রিংরাও ম্রো (৩৫)। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাত সাড়ে ১১টার দিকে রুমার গ্যালেংগার আবু পাড়ার ৭ নং ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, পাড়াবাসীদের সাথে পাড়া প্রধান (কারবারি) পরিবারের মধ্যে জুম চাষের জমি ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাতে পাড়াবাসীর সাথে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে সংর্ঘষ শুরু হয়। এসময় পাড়াবাসী ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কারবারি ও তার ৪ ছেলে ঘটনাস্থলেই হত্যা করে। ঘটনার সংবাদ পেয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী লাশ উদ্ধার করে।

জেএলএ-এমএলপির সংঘর্ষে নিহত ৩

পার্বত্য বান্দরবান-রাঙামাটি সীমান্তে উপজাতীয় দুই শসস্ত্র সংগঠন জেএসএস সমর্থিত জেএলএ এবং মগ লিবারেশন পার্টি (এমএলপি)র মধ্যে ব্যাপক বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। এসময় মগ বাহিনীর দুই সদস্যসহ ৩ জন নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে বান্দরবান-রাঙামাটি সীমান্তবর্তী এলাকা রাজবিলা কেচি নতুন পাড়া ও গাইন্ধ্যা ইউনিয়নের সীমানা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

২ জনকে অপহরণ

বান্দরবানের রুমা উপজেলার গ্যালেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্যসহ দুই জনকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। অপহৃতরা হলেন ৪নং গ্যালেঙ্গা ইউপির ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য মংসাচিং মার্মা (৫০) এবং পানতলা পাড়ার বাসিন্দা মওয়াইচিং মার্মা (৩০)।

ভূমি কমিশন চেয়ারম্যানের সাথে পিসিএনপির বৈঠক

বান্দরবানে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ার উল হকের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ (পিসিএনপি) নেতৃবৃন্দের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২৪ জুলাই) বিকালে বান্দরবান সার্কিট হাউজে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান কাজী মো. মজিবর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এ বৈঠকে অংশ নেন।

অনুষ্ঠিত বৈঠকে পাবর্ত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের বিচার পদ্ধতি, বিচার কাঠামো, কমিশনের সীমাবদ্ধতাসহ নানান দিক নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়। বৈঠকে পাবর্ত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ নেতৃবৃন্দ কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালিরা শিক্ষা, চাকরি, ভূমি অধিকারসহ সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছে মর্মে অভিযোগ করেন।

৫ আসামির মৃত্যুদণ্ড

বান্দরবানে ছোট্ট মিয়া (৪৫) নামে এক গরু ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ৫ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও দশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অপর ৩ আসামিকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও দশ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ (ছয়) মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন জেলা ও দায়রা জজ আদালত। মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টার দিকে বান্দরবানের জেলা ও দায়রা জজ মো. ফজলে এলাহী ভূইয়া এ রায় দেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন উচিংনু মার্মা (২২), পিতা-রে অং মার্মা, উবা চিং মার্মা (৩০), পিতা-মংনুমং, চিং নু মং প্রকাশ হদা (২৩), পিতা-থোয়াই চিং মং, মং নু মং প্রকাশ মং নু (৫০), পিতা-মৃত ক্যহ্লা প্রু বান্দরবান সদর উপজেলার লুলাইন হেডম্যান পাড়ার বাসিন্দা। অপর আসামি মং থু প্রকাশ মং ক্যাসিং, পিতা-কুনাক মার্মা একই উপজেলার লুলাইন পুর্নবাসন পাড়ার বাসিন্দা।

অশান্ত মিয়ানমার সীমান্ত

২০২২ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সীমান্তে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সাথে তুমুল লড়াই চলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর। আরাকান আর্মি এ যুদ্ধে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর শতাধিক সদস্যকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে। অপরদিকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে হামলা চালায় বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা আরাকান আর্মির সম্ভাব্য আস্তানা লক্ষ্য করে। ফলে এ লড়াইয়ের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমসহ বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক মর্টার শেল এসে পড়ায় নোম্যান্স ল্যান্ডের আশ্রয় শিবিরে থাকা রোহিঙ্গারা হতাহতের শিকার হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে বাংলাদেশের নাগিরকরাও। বন্ধ হয়ে গেছে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজ।

বার বার দেশের অভ্যন্তরে মিয়ানমারের মর্টার শেল এসে পড়ায় এবং সে দেশের হেলিকপ্টার-বিমানের আন্তর্জাতিক সীমা লংঘনের ঘটনায় প্রতিবাদ জানাতে এক মাসেরও কম সময়ে ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূতকে চারবার তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ গত ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উ অং কিয়াউ মোকে তলব করা হয়। এই দিন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রতিবাদপত্রে কড়া ভাষায় বলা হয়, মিয়ানমার থেকে কোনো মর্টারের গোলা যেন আর বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এসে না পড়ে।

পর্যটকদের চলাচলে বিধিনিষেধ

বান্দরবানের রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন। রোববার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রুমা-রোয়াংছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকাগুলোতে যৌথ বাহিনীর জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় স্থানীয় ও বিদেশি পর্যটকদের দুই উপজেলা ভ্রমণে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা থেকে রুমা-রোয়াংছড়ি উপজেলা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। অন্যদিকে ২৩ অক্টোবর সন্ধ্যা থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত আলীকদম-থানচিসহ চার উপজেলা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয় প্রশাসন। পরে তা কয়েক দফায় বাড়িয়ে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।

এদিকে থানচি-আলীকদমে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হলেও রুমা-রোয়াংছড়ি ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা বৃদ্ধি করে ৪ ডিসেম্বর করা হয়। পরে গত ৩ ডিসেম্বর পুনরায় নিষেধাজ্ঞার সময় বাড়ানোর পাশাপাশি থানচি উপজেলাকেও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়।

ডিজিএফআই কর্মকর্তা নিহত

বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে র‌্যাব এবং ডিজিএফআইয়ের মাদক বিরোধী যৌথ অভিযান পরিচালনাকালে চোরাচালানকারীদের সাথে গুলিবিনিময়ে সময় ডিজিএফআই অফিসার স্কোয়াড্রন লিডার রেজোয়ান ও এক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। সোমবার (১৪ নভেম্বর) মাদক বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু এলাকায় এ গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে।

আইএসপিআর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মাদক চোরাচালানকারীদের সাথে সংঘর্ষ চলাকালে মাদক চোরাচালানকারীদের গুলিতে দায়িত্বরত অবস্থায় ডিজিএফআই এর একজন কর্মকর্তা (বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা) দেশের জন্য আত্মত্যাগ করে শহীদ হন। এছাড়াও এক নারী রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় র‌্যাবের আরো একজন সদস্য আহত হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: বান্দরবান, সালতামামি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন