parbattanews

সারা বছর নীরব থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় প্রশাসনের দৌঁড়ঝাপ নিয়ে সমালোচনা সচেতন মহলের

 

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

কক্সবাজারে পাহাড় ধ্বস এখন প্রশাসনের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাহাড় ধ্বস প্রতিরোধে চলছে উচ্ছেদ অভিযান। গুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা অবৈধ ঘরবাড়ি। পাহাড়ের পাদদেশ থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে লোকজনকে।

এদিকে পাহাড়ে থাকা লোকজন মরতে রাজী তবুও পাহাড় ছাড়তে রাজী নয়। এসব লোকজনকে একদিকে তাড়িয়ে দিলে তারা অন্য দিকের পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। আবার অনেক প্রভাবশালী পাহাড়ি জায়গাকে নিজের দাবি করে প্রশাসনের সাথে চ্যালেঞ্জ ছুটছে। এতে ভাল’ই বেগ পেতে হচ্ছে প্রশাসনকে। আর এ অবস্থার জন্য প্রশাসনকেই দ্বায়ী করছে সচেতন মহল।

তারা বলেছেন, পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে সারা বছর প্রশাসন নীরব থাকে। তেমন কোন কার্যক্রম দেখা যায়না। যখনই বর্ষা মৌসুম আসে অথবা প্রচুর বৃষ্টিপাতে পাহাড় ধ্বসের আশঙ্কা থাকে তখনই শুরু হয় দৌঁড়-ঝাপ। এছাড়া পাহাড় ধ্বসে মৃত্যুর কোন ঘটনা ঘটলে বেড়ে যায় প্রশাসনের তৎপরতা।

শুষ্ক মৌসুমে পাহাড়ের বিষয়ে প্রশাসনের নীরবতার সুযোগে পাহাড় দখলে চলে যায় শহরের কিছু রাগুব বোয়াল আর রোহিঙ্গাদের হাতে। পরে তাদের হাত থেকে ছাড়াতে প্রশাসনকে বেকায়দায় পড়তে হয়। এ অব্যবস্থাপনার ফলেই ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে পাহাড়। ঘটছে পাহাড় ধ্বসে মৃত্যু।

সচেতন মহল আরও বলছেন, জরুরী অবস্থা ছাড়া সারা বছর’ই প্রশাসন সক্রিয় থাকা উচিত। এতে করে পাহাড় আর দখলে যাবেনা প্রভাবশালী আর রোহিঙ্গাদের হাতে। হবেনা পাহাড় ধ্বস। ঘটবেনা মৃত্যু। রক্ষা পাবে পরিবেশ।

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি দীপক শর্মা দীপু জানান, পাহাড়ে যখন ঝুঁকিপূর্ন অবস্থার সৃষ্টি হয় তখন প্রশাসনের অভিযান শুরু হয়। এটি লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়। শুষ্ক মৌসুমে যদি এ কার্যক্রম চলত তাহলে এ অবস্থা হতনা। এছাড়া এ বৃষ্টিতে লোকজনকে ঘর থেকে বের করে দেওয়া সম্পূর্ণ অমানবিক। এটি এক ধরনের মানবাধিকার লঙ্গন। তাই ঝুকিপূর্ণ পরিস্থিতির আগে যদি লোকজনকে সরিয়ে পূর্নবাসনের ব্যবস্থা করা হত। তাহলে এ অবস্থা হতনা।

এ ব্যাপারে কলেজ শিক্ষক আব্দুল হোসেন জানান, এ প্রাকৃতিক দূুর্যোগ মানুষ দ্বারা সৃষ্ট দুর্যোগ। লোকজনের পাহাড় কাটার কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। প্রশাসনের অনেক লোকজন পাহাড় কাটার সাথে জড়িত। তারা প্রশাসনের ছত্র-ছায়ায় রয়েছে। এছাড়া যারা পাহাড় কাটে তাদের মধ্যে অনেকের সাথে পরিবেশ অধিদপ্তরের কিছু লোকজন থেকে শুরু করে অনেক কর্মকর্তার সাথে হাত রয়েছে। প্রশাসনকে শক্ত হাতে এসব নির্মূল করতে হবে।

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা জানান, কক্সবাজারের বাস্তবতা হল লোকজন পাহাড়ে অবস্থান করে। এ বিষয়টা মূলত সুষ্ঠ পরিকল্পনার অভাব ছাড়া আর কিছুই নয়। এটাকে প্রশাসনের অদুরদর্শিতার সাথে তুলনা করা হয়েছে। এছাড়া বর্ষার সময় তাদেরকে উচ্ছেদ করাটা আদৌ মানবিক নয়। যদিও পাহাড় দখল করে বসবাস করাটা সম্পূর্ণ অপরাধ। এ কাজটি সুষ্ক মৌসুমে করা যায়। এ মুহুর্তে না করে বর্ষা শুরুর আগে করা উচিত। আর এ বিষয়টি প্রতি বছরই দেখা যাচ্ছে। এ যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৭ বছরে পাহাড় ধ্বসে পর্যটক, সেনা সদস্যসহ মারা যায় শতাধিক মানুষ। কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন পাহাড় চূড়া ও ঢালুতে অন্ত্যত ২০ হাজার ঘরবাড়ি রয়েছে। এসব ঘরে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ।

Exit mobile version