সিএইচটি কমিশনের পার্বত্য অঞ্চল সফরকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত পাহাড়

10366285_604974949616298_8391994001178499597_n

দীঘিনালা (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি :

বহুল বিতর্কিত সিএইচটি কমিশনের তিন পার্বত্য জেলা সফরকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে পড়েছে পাহাড়। তাদের অবরোধ প্রত্যাখ্যান করে খাগড়াছড়ি জেলা বাঙালী ছাত্র পরিষদ গতকাল মানববন্ধন করেছে জেলা শহরে। এদিকে সিএইচটি কমিশনের রাঙামাটি সফর প্রত্যাখ্যান করে ৬ বাঙালী সংগঠনের ডাকা দুই দিনের সড়ক ও নৌ অবরোধ শুরু হয়েছে আজ সকাল থেকে। এরপর বান্দরবানের ৬ বাঙালী সংগঠনও ৪ দিনের জন্য সড়ক ও নৌ অবরোধ কর্মসূচী ডেকেছে।

সম্প্রতি বিভিন্ন সময়ে পার্বত্য এলাকায় মানবাধিকার লংঙ্ঘনের অযুহাত দেখিয়ে পার্বত্য তিন জেলা সফরে এসেছে সিএইচটি কমিশনের ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন কমিশনের কো-চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে পাহাড়ীদের একক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পার্বত্য এলাকা পর্যবেক্ষণে এসেছে প্রতিনিধ দলটি।

গত দুই জুলাই বিকেলে সিএইচটি কমিশনের প্রতিনিধি দলটি খাগড়াছড়ি এসে পৌছে। ঐদিন জেলার দীঘিনালা উপজেলার বাবুছড়ায় ৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন ও উচ্ছেদ হওয়া পাহাড়ি ২১ পরিবারকে দেখতে পরিদর্শনে যাওয়ার কথা থাকলেও তা বাতিল করা হয়। ঠিক কি কারনে ঐদিন বাবুছড়া পরিদর্শনে যাওয়া বাতিল করেছে সে ব্যপারে স্পষ্ঠ নয় কেওই। এদিকে দুই জুন বিকেলে খাগড়াছড়ি মহাজন পাড়াস্থ একটি রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করার নামে এক গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে যোগ দেয় দীঘিনালা, পানছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি ও সদর উপজেলার চার চেয়ারম্যান। তবে বৈঠকে ঠিক কি শলাপরামর্শ হয়েছে তা জানা যায়নি।

এদিকে দীঘিনালা উপজেলায় ৩ জুন পাহাড়ি ও বাঙালি সংগঠন একই স্থানে একই সময় পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষনা করে। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষনা করায় সম্ভাব্য অপ্রিতিকর ঘটনা এড়াতে ঐদিনই উপজেলা প্রশাসন বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে। ১৪৪ ধারা বহাল থাকা অবস্থায় সিএইচটি কমিশন দীঘিনালার বাবুছড়া ও দ্বি-টিলা পরিদর্শন করে।

এদিকে খাগড়াছড়ি জেলায় বাবুছড়া বিজিবি ব্যাটালিয়ন স্থাপনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে ইউপিডিএফ সমর্থিত গনতান্ত্রীক যুব ফোরাম। বৃহস্পতিবার সকালে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশন(সিএইচটি কমিশন)’র সকল কার্যক্রম বয়কটের ঘোষনা দিয়েছে পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ(পিবিসিপি)। সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর হামলার ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করা হলে সংগঠনের পক্ষ থেকে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুশিঁয়ারী দেয়া হয়। সিএইচটি কমিশনের রাঙামাটি সফর বাতিলের দাবীতে রাঙামাটিতে শুক্রবার-শনিবার সড়ক ও নৌপথ অবরোধের ডাক দিয়েছে বাঙালি সংগঠনগুলো।

একই দাবীতে বান্দরবানে সিএইচটি কমিশনের সফর বাতিলের দাবীতে আগামী ৫ জুলাই থেকে টানা চারদিন সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচী ঘোষণা করেছে পার্বত্য নাগরিক পরিষদ’সহ বাঙ্গালী সংগঠনগুলো।

এদিকে বাবুছড়ায় প্রস্তাবিত ৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন এলাকা পরিদর্শন শেষে বৃহস্পতিবার পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশনের (সিএইচটি) কো-চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘সময়োচিতভাবে শান্তিচুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি এত জটিল হতো না। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নই পাহাড়ে শান্তির একমাত্র পথ।’ কমিশনের কো-চেয়ারম্যান এডভোকেট সুলতানা কামালের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন কমিশনের সদস্য ডঃ স্বপন আদনান, ডঃ ইফতেখারুজ্জামান, খুশি কবির ও হানা শামস।

অপরদিকে প্রতিনিধিদলের নিকট ঘটনার বিবরণ তোলে ধরেন বিজিবি ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর মোঃ কামাল উদ্দিন এবং সেনাবাহিনীর সাবজোন কমান্ডার মেজর মঈন। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী হেলিপ্যাডে কলাগাছ লাগানোর সময় বাধা দিলে স্থানীয়রা বিজিবি’র ওপর হামলা করে স্থাপনা ভাংচুর করে বিজিবি সদস্যদের আহত করে। তখন পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাস ছুড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে। কর্মকর্তারা প্রতিনিধিদলের নিকট আরো জানান, ১২৩ কিঃ মিঃ অরক্ষিত সীমান্ত সুরক্ষায় সরকারী সিদ্ধান্তে বিজিবি’র দপ্তর স্থাপনের কাজ চলছে। এতে স্থানীয়দের সমস্যা হওয়ার কথা নয়; কিন্তু শান্তিচুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর সশস্ত্র গ্রুপের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্রের এলাকটি নিরাপত্তা নজরে চলে আসার আশংকায় সংগঠনটি নেপথ্যে থেকে সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে পরিস্থিতি অশান্ত করছে। বাবুছড়ায় বিজিবি ব্যাটালিয়ন স্থাপনে কোনো পরিবার উচ্ছেদ হয়নি দাবি করে উপ-অধিনায়ক বলেন, ‘যারা উচ্ছেদ হয়েছে বলে দাবি করছেন, বাস্তবিক অর্থে তারা বিজিবি ব্যাটালিয়ন স্থাপন প্রকল্প শুরু হওয়ায় ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশায় ৩/৪ মাস আগে বসতি স্থাপন করেছিলেন।’ উল্লেখ্য, দীঘিনালার বাবুছড়া এলাকায় বিজিবি’র একটি ব্যাটালিয়ন স্থাপনের জন্য ১৯৯১ সালে সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়।

চলতি বছরের ২২ মে বাবুছড়া বিজিবি ব্যাটালিয়নের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আনুষ্ঠানিকভাবে বাবুছড়াতেই পালন করা হয়। এরপর থেকে জায়গা-জমি নিয়ে বিজিবির সঙ্গে স্থানীয় পাহাড়িদের বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১০ জুন সন্ধ্যায় কয়েকশ সংঘবদ্ধ পাহাড়ি নারী-পুরুষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নির্মাণাধীন বাবুছড়া ৫১বিজিবি সদর দফতরে হামলা চালালে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ৬ বিজিবি ও এক পুলিশের কনস্টেবলসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন। হামলায় বিজিবির দুটি রাইফেলসহ বেশ কিছু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুলিশ ৫ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ও ৫ রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় বিজিবির দায়ের করা মামলায় ৭ জন কারাগারে আটক রয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: অবরোধ, আন্তর্জাতিক সিএইচটি কমিশন, পার্বত্যনিউজ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন