parbattanews

সিন্ডিকেটের হাতে দেড় কোটি টাকার কুরবানির পশুর হাট

কক্সবাজার সদরের বৃহত্তম কুরবানির পশুর হাট খরুলিয়া বাজার। খাস কালেকশন নামে বাজারে চলছে সরকারি অর্থ লুপাট। নিয়ন্ত্রণ করছে একটি সিন্ডিকেট। ফলে গেল ২ বছরে সরকার হারিয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা রাজস্ব। সর্ষের মাঝে ভূত থাকায় বাজারটি যে কোনভাবে প্রতি বছর চলে যায় একই সিন্ডিকেটের হাতে।

সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বলছে, উপযুক্ত ডাককারি না পেয়ে তারা খাস কালেকশনে ছেড়ে দিয়েছে বাজারটি। যারা খাস কালেকশন করছে তারা আবার পূর্বের ইজারাদার। কৌশলে মোটা টাকার বিনিময়ে তারা ইজারা হোক কিংবা খাস কালেকশান তাদের হাতেই চলে যায় খরুলিয়া বাজারটি। ভেতরে কোন সিন্ডিকেট বাজারটি নিয়ন্ত্রণ করছে তা খতিয়ে দেখছে জেলা প্রশাসন। জড়িত প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছেন তারা।

জানা যায়, সদরের অন্যান্য বাজারের মত খরুলিয়া বাজারটি ১০ ফ্রেব্রুয়ারি তৎকালীন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায় দরপত্র আহবান করে। ২৮ ফেব্রুয়ারি ছিল শেষ দিন। শেষ দিনে বাজারটি সর্বোচ্চ ডাক পায় এনএফ এন্টারপ্রাইজ ২ কোটি ৭ লাখ টাকা। দ্বিতীয় হিসাবে হাবিব ব্রাদার্স ১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কেউ বাজারটি শেষ পর্র্যন্ত নিলামে অংশগ্রহণ করে নি। পরবর্তী তৃতীয় বার পুনঃইজারার নিয়ম থাকলেও মানা হয়নি। বাজারটি চলে যায় খাস কালেকশনে। সম্পূর্ণ কৌশলে বাইরের অদৃশ্য ইশারায় খাস কালেকশনে চলে যাওয়ায় সরকার এর আগেও প্রায় ২ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে। খাস কালেকশানের নামে লুটরাজের একটি ভয়াবহ চিত্র পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাজারটি ১৪২৮ বাংলা সনে সিন্ডিকেটের কারনে খাস কালেকশানে চলে যাওয়ায় মাত্র ১৪ লাখ টাকা সরকার রাজস্ব পায়। অথচ এর আগে ১ কোটি ৪১ হাজার টাকা ইজারার মাধ্যমে সরকার বিরাট অংক রাজস্ব পায়। এতে করে ১৪২৭ এবং ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ২ বছরে খাস কালেকশানের নামে সরকার বঞ্চিত হয়েছে ২ কোটি টাকার বেশি।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রধান সহকারী উত্তম কুমার দাশ বলেন, গত ২ মাসে খরুলিয়া বাজার থেকে খাস কালেকশানের ১১ লাখ টাকা জমা হয়েছে। ইজারা হলে কোটি টাকার বেশি সরকারি কোষাগারে জমা হতো।

এদিকে, খরুলিয়া বাজারটি সড়কের উপরে বসার কারনে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়কের উভয় পাশে বাজার বসার কারণে শিক্ষার্থীরা চরম উৎকন্ঠায় চলাচল করতে হয়। ব্যবসায়ী ও সাধারণ পথচারিরাও ভোগান্তি পোহাচ্ছে।

অপরদিকে যারা বাজারের ইজারাদার পূর্বে যারা ২ থেকে আড়াই কোটি টাকায় বাজার ইজারা নিতো তারা সহজে খাস কালেকশানের দায়িত্ব পাওয়ার কারনে সরকারি কোষাগারে প্রকৃত টাকা রাজস্ব জমা না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে সরকার খাস কালেকশান হিসাবে কোরবানের পশু বিক্রির টাকা উত্তোলনের রশিদে ইজারাদারদের নাম থাকায় পুরো টাকা সিন্ডকেটের পকেটে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ইজারা টাকার উত্তোলনের রশিদে স্থানীয় ম্বোর মো. শরীফ উদ্দিন, যুব লীগ নেতা মো. আলম, জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক ইজারাদার আবদুল মান্নান ভূট্টো এবং নুরুল আজিমের নাম ও মোবাইল নাম্বার রয়েছে। যদিও খাস কালেকশানের রশিদে সরকারি তহশিলদার অথবা নিয়োজিত ব্যক্তির নাম থাকার নিয়ম রয়েছে। সম্পূর্ণ নীয়মনীতি তোয়াক্কা না করে সরকারি টাকা মেরে দিতে এ ফন্দি করেছে বলে মনে করেন সচেতন মহল।

গত বছর খরুলিয়া বাজারটি সরকারি ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ ১ কোটি ৫৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় ইজারা হলেও এবছর খাস কালেকশানে এর ১০ ভাগের ১ ভাগও সরকারি কোষাগারে জমা হবেনা বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। যেহেতু ১৪২৭ বঙ্গাব্দে প্রায় ২ কোটি টাকায় বাজারটি ইজারা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও খাস কালেকশানে জমা পড়েছে মাত্র ১৪ লাখ টাকা যা অবশিষ্ট টাকা সিন্ডিকেটের পকেটে চলে গেছে। দুর্নীতির মহাযজ্ঞ খরুলিয়াবাজার ঘিরে তা পরিষ্কার হয়েছে কয়েক বছরের সরকারি রাজস্ব জমা দেখে সহজে অনুমেয়।

খরুলিয়া বাজারটি সিন্ডিকেট ও খাস কালেকশানের হাত থেকে মুক্ত করতে না পারলে কোটি টাকা রাজস্ব হারাবে সরকার, এমনটি মনে করছে স্থানীয়রা।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আমিন আল পারভেজ কৌশলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ইজারা বাতিল করে খাস কালেকশানের নামে সরকারি রাজস্ব বঞ্চিত বিষয়ে বলেন, খরুলিয়া বাজারটি সরকারের রাজস্ব আদায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার। এর মাধ্যমে সরকার প্রতিবছর উল্লেখ্যযোগ্য অর্থ পেয়ে থাকে।

তিনি বলেন, ইজারা না হওয়ার পেছনে কোন সিন্ডিকেট কাজ করেছে তা আমরা তদন্ত করে করে ব্যবস্থা নেব। ইজারাতে উপযুক্ত দরদাতা থাকা সত্ত্বেও কেন ইজারা হয়নি সেটি মূলত আমরা দেখব। সিন্ডিকেট যদি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।

Exit mobile version