সীমান্তবাসীর ভরসা মিয়ানমারের গবাদি পশু

fec-image

ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে মিয়ানমার থেকে আসছে কোরবানীর পশু। গত তিনদিনে মিয়ানমার থেকে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ ক্যাডল করিডোর দিয়ে ৩৯৩৫টি পশু আমদানী হয়েছে। এছাড়া জুলাই মাস জুড়ে মিয়ানমার থেকে ১০০৯৫টি গরু-মহিষ আমদানী হয়েছে। সাগরপথে ট্রলারে এসব পশু আমদানী হচ্ছে।

পশু আমদানীকারকরা বলছেন আবহাওয়া ভালো থাকলে আর দুই দেশের সীমান্ত পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে ঈদুল আযহা পর্যন্ত আরো পশু আমদানী হতে পারে। আমদানীকৃত এসব পশু স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে আভ্যন্তরীন বাজারেও সরবরাহ করা যাবে বলে জানান তারা। মিয়ানমার ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সচেষ্ট রয়েছেন যাতে পর্যাপ্ত কোরবানীর পশু আমদানী করা যায়। সীমান্ত এলাকার (উখিয়া টেকনাফ ) মানুষের একমাত্র ভরসা হচ্ছেই মিয়ানমারের এসব পশু। অন্যথায় উত্তরাঞ্চল থেকে পশু এনে কোরবানি করা সীমান্তবাসীর জন্য দুরূহ ব্যাপার।

শাহপরীরদ্বীপ ক্যাডল করিডোরে গিয়ে দেখা যায়, নাফ নদী দিয়ে গরু-মহিষ বোঝাই একের পর এক ট্রলার শাহপরীরদ্বীপ জেটিতে ভীড়ছে। একেকটি ছোট বড় ট্রলারে ৫০ থেকে ২০০টি পর্যন্ত পশু আমদানী হচ্ছে। সেখান থেকে পশুগুলো খালাস করে করিডোরে নিয়ে আসা হচ্ছে। করিডোরে হাজারো গরু মহিষ মজুদ রয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা এসে গরু-মহিষ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও কোরবানীর হাটে বিক্রির জন্য গরু-মহিষ কিনছেন।

আমদানীকারক ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, করিডোরে তুলনামুলকভাবে অন্যান্য বছরের চেয়ে পশুর দাম কম রয়েছে। বড়, মাঝারি, ছোট বিভিন্ন সাইজের গরু-মহিষ আমদানী হচ্ছে এইবার।

এখানে কথা হয় চট্টগ্রামের সাগরিকা পশুর হাটের ব্যবসায়ী কাশেমের সাথে। তিনি জানান, একজন আমদানীকারকের কাছ থেকে ১৮৮টি গরু কিনেছেন প্রতিটি ৯৪ হাজার টাকা দামে। প্রতিটি গরুর পেছনে ৮-১০ হাজার টাকা কম পেয়েছেন বলে জানান তিনি।

পশু আমদানীকারক শহিদুল ইসলাম জানান, শাহপরীরদ্বীপ করিডোর দিয়ে সারাবছর মিয়ানমার থেকে গবাদি পশু আমদানী হয়ে থাকে। তবে ঈদ উল আযহার সময় বাড়তি চাহিদা থাকায় অধিক সংখ্যক গবাদি পশু আমদানী করে থাকেন ব্যবসায়ীরা। এখানকার গবাদি পশু স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে চট্টগ্রাম-নোয়াখালী-কুমিল্লাসহ সারাদেশে সরবরাহ হয়ে থাকে।

অপর আমদানীকারক আবু সৈয়দ জানান, এইবার অধিক সংখ্যক গবাদি পশু আমদানীর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আবহাওয়া অনুকুল থাকলে পর্যাপ্ত সংখ্যায় কোরবানীর পশু আমদানী করা সম্ভব হবে।

করিডোরের গবাদি পশু ব্যবসায়ী ইসমাঈল জানান, আমদানীকৃত গবাদি পশুর রাজস্ব পরিশোধের জন্য শাহপরীরদ্বীপে সোনালী ব্যাংকের একটি বুথ স্থাপন করার দাবি দীর্ঘদিনের। এছাড়া করিডোরে পশুগুলো রাখার জন্য নির্দিষ্ট কোন জায়গা নেই। ফলে রোদ বৃষ্টিতে ভিজে পশুগুলোর অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে।

ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ মনির জানান, পথে গরু-মহিষ বোঝাই যানবাহন গুলো যাতে কোন সমস্যায় না পড়ে সেব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের সজাগ দৃষ্টি প্রয়োজন। তবে তিনি জানান, শাহপরীরদ্বীপের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ঠিক থাকলে গবাদি পশু দেশীয় বাজারে সরবরাহ করা আরো সহজ হতো। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যবসায়ীরা সরাসরি শাহপরীরদ্বীপ হতে গাড়ি বোঝাই করে গবাদি পশু নিয়ে যেতে পারতেন।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শওকত আলী জানান, টেকনাফে আড়াই লাখ মানুষের মাঝে সাড়ে ৬হাজারের মতো কোরবানীর পশুর চাহিদা রয়েছে। এরমধ্যে খামারী ও ব্যবসায়ীদের কাছে ৭ হাজারের মতো পশু রয়েছে। এইবারের আমদানীকৃত পশু গুলোর মধ্যে খুড়া রোগ নেই বলে জানান তিনি। তবে স্থানীয়দের বাইরে উখিয়া-টেকনাফের ১১ লাখ রোহিঙ্গার জন্য কি পরিমান কোরবানীর পশুর চাহিদা রয়েছে সে সম্পর্কে ধারনা নেই বলে জানান তিনি।

টেকনাফ শুল্ক স্টেশনের কর্মকর্তা মো. ময়েজ উদ্দিন জানান, গত জুলাই মাসে শাহপরীরদ্বীপ ক্যাডল করিডোর দিয়ে ১০০৯৫টি গরু-মহিষ আমদানী হয়েছে। এর মধ্যে ৬৭৪৪টি গরু ও ৩৩৫১টি মহিষ। যার বিপরীতে ৫০ লাখ ৪৭ হাজার ৫’শ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। এছাড়া গত জুন মাসে ১০১৭৭টি গরু-মহিষ আমদানী হয়েছিল করিডোর দিয়ে। রাজস্ব আয় হয়েছিল ৫০লাখ ৮৮ হাজার ৫শ টাকা।

বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে.কর্ণেল ফয়সল হাসান খান জানান, পাশ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে ব্যবসায়ীরা ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে পশু আমদানী বৃদ্ধি করেছেন। বিজিবির তত্বাবধানে শাহপরীরদ্বীপ ক্যাডল করিডোর দিয়ে পশু গুলো আমদানী হয়ে থাকে। ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করে পশু আমদানী নির্বিঘ্নে করতে বিজিবি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।

টেকনাফ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এবিএমএস দোহা জানান, কোরবানীর পশুর হাটে চাঁদাবাজি, জাল টাকার ব্যবহারসহ ক্রেতা-বিক্রেতাদের যাতে কোন ধরনের সমস্যা না হয় সেব্যাপারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

টেকনাফের হোয়াইক্যং হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ পরিদর্শক মোর্শেদুল আলম চৌধুরী জানান, সড়কে পশুবাহী কোন যানবাহনে যাতে হয়রানী-চাঁদাবাজির শিকার না হয় সেব্যাপারে টহল জোরদার রয়েছে। শুধু পশুবাহী নয়, সড়কে কোনো ধরণের নৈরাজ্য ঠেকাতে পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমারের, সীমান্তবাসীর
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন