parbattanews

সীমান্তের জিরো লাইনে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে মিয়ানমার

ঘুমধুম প্রতিনিধি:

নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের জিরো লাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বিজিপি সদস্যদের নির্যাতন বেড়েই চলেছে। সীমান্ত থেকে রোহিঙ্গাদের তাড়াতে নানা কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে তারা। এবার মসজিদে নামাজের সময় রোহিঙ্গা মুসল্লিদের ওপর কাঁটা তারের বেড়ার কাছ থেকে গুলতি নিক্ষেপ করছে মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। কাঁটা তারের বেড়া সংলগ্ন নতুন নির্মাণ করা বাঙ্কার থেকে এসব গুলতি নিক্ষেপ করা হচ্ছে বলে রোহিঙ্গারা জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার(২২ফেব্রুয়ারি) এশার নামাজের সময় গুলতির আঘাতে আহত হয়েছে কোনাপাড়ার জিরো লাইনে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা মসজিদের ইমাম আবদুল মজিদ।

রোহিঙ্গারা জানায়, গত দুদিন থেকে জিরো লাইনের মসজিদ ও রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি লক্ষ্য করে অনবরত গুলি নিক্ষেপ করছে সেনা সদস্যরা। বুধবার সন্ধ্যার সময়ও মসজিদের ওপর ইট ও গুলতি নিক্ষেপ করা হয়।

রোহিঙ্গাদের মাঝি (সমন্বয়কারী) দিল মোহাম্মদ জানান, প্রতিদিনই রোহিঙ্গাদের জিরো লাইন ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য ওপার থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। এছাড়া রাতে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ির ওপর ইট পাটকেল ও গুলতি নিক্ষেপ করা হয়। এখন মসজিদ লক্ষ্য করে গুলতি ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ করা হচ্ছে।

এর আগে জিরো লাইনের পাশের ক্যাম্পগুলো থেকে ফাঁকা গুলিবর্ষণ ও রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। ভয়ে জিরো লাইন থেকে অনেক রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডে আশ্রয় নিয়েছে। বিজিবি কিছু রোহিঙ্গাকে আটক করে ক্যাম্পে ফেরত পাঠালেও অন্যরা আতঙ্কে পালিয়ে যাচ্ছে।

গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতায় ৭ লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের জিরো লাইনে অবস্থান নেয়। তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে মঙ্গলবার চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে জয়েন্ট ওয়াকিং গ্রুপের একটি প্রতিনিধি দল মিয়ানমারের মংডু জেলার ঢেকুবনিয়া সীমান্ত পরিদর্শন করে।

প্রতিনিধি দলটি রোহিঙ্গাদের গ্রাম পরিদর্শনের পাশাপাশি জিরো লাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের কাছে প্রস্তাব রাখে। খুব শীঘ্রই জিরো লাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত নেয়ার বিষয়ে মিয়ানমার আশ্বাস দিয়েছে বলে বিভাগীয় কমিশনার ঢেকুবনিয়া সীমান্ত পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। ফেরত নেয়ার আগে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের একটি তালিকা তৈরীর কথাও জানায়। তবে কতদিনের মধ্যে এসব রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া হবে তা জানানো হয়নি।

সীমান্তে থাকা রোহিঙ্গা জানিয়েছে তারা ফেরত নেয়ার কথা বললেও বাস্তবে সেখানে এখনো রোহিঙ্গাদের থাকার কোন পরিবেশ তৈরি হয়নি। রোহিঙ্গাদের জন্য যেসব আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে সে ঘরগুলো খুবই ছোট। এছাড়া নির্যাতন নিপীড়ন এখনো চলছে। পূর্ণ নিরাপত্তা দেয়া হলে বা থাকার পরিবেশ তৈরি হলে তারা এমনিতেই তাদের ঘরবাড়িতে ফিরে যাবে।

এ বিষয়ে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক জানান, তুমব্রু সীমান্তের জিরো লাইনে থাকা রোহিঙ্গা ছাড়া বান্দরবানে এখন আর কোন রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির নেই। তাদের কি ভাবে স্বদেশে ফেরত পাঠানো যায়, সে বিষয়ে উভয় দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। বিজিবি সীমান্তে স্থিতিশিল অবস্থা বজায় রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে।

Exit mobile version