parbattanews

সীমান্তে গোলাগুলির বিকট শব্দ, পানীয় জলের তীব্র সংকট বিদ্রোহীরা

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে ফের গোলাগুলি শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়েছে সীমান্তবাসীর মাঝে। সোমবার ভোর ৩টার থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত সীমান্তের রাইটক্যাম্প, বাইশফাঁড়ি, চেরারমাঠ ও জামছড়ি গ্রামসহ ৪ পয়েন্টে এ গোলাগুলির শব্দ শোনেন স্থানীয়রা।

সূত্রে জানা যায়, গত ৩ সপ্তাহ ধরে সীমান্তের বাইশফাঁড়ি হতে পাইনছড়ি পর্যন্ত দীর্ঘ ৭২ কিলোমিটার এলাকায় গ্রীষ্মের তাপদাহে বিদ্রোহী আরকান আর্মির কয়েক হাজার সদস্য পানীয় জলের তীব্র সংকটে ভুগছে।

তারা সীমান্তের ছোট-বড় ছড়া, কূয়া ও শূন্যরেখা বা নো-ম্যান্স ল্যান্ড অথবা আশপাশের বাঁধ থেকেও খাবার পানি সংগ্রহ করছে বলে সূত্রটি নিশ্চিত করে।

সীমান্তের চেরার মাঠের ছৈয়দ নূর, ওয়ালিদং এর শফিক মাঝি ও জামছড়িও শব্বির আহমদ পার্বত্যনিউজকে বলেন, বিদ্রোহী আরকান আর্মি ২টি সমস্যায় পতিত। প্রথমত জান্তা সরকারের বিমান হামলার ভয়, দ্বিতীয়ত গরমে খাবার পানির সংকট। রাখাইন রাজ্যের জেলা শহরের দূরত্ববেশী ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়া বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি ওপারের চৌকি গুলোতে বিশুদ্ধ পানীয় জলের তেমন ব্যবস্থা ছিলো না পূর্ব থেকে। যা এখনও সে আগের মতোই। জান্তা বাহিনীকে তাড়িয়ে বিদ্রোহীরা এ চৌকি গুলো দখলে নিলেও তাে নতুন করে কিছু করার সুযোগ পায়নি। উভয় সংকটে বিদ্রোহী আরকান আর্মির ৭০০ নারী সদস্যকে এখন সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে বিশেষ তাবুতে রেখে পুরুষরা যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে। এখানেও তারা পানীয় জলের সংকটে দিন যাপন করছে।

তারা আরো জানান, ৪৪ পিলারের ওপারের পুরান মাইজ্জা সাবেক বিজিপি ক্যাস্পে থাকা সীমান্ত চৌকি থেকে সকালে একদফা বিকেলে আরেক দফা গোলাগুলির শব্দ শুনেন চেরারমাঠের লোকজন।

জামছড়ির জাকারিয়া জানান, রাত ১০টায় জামছড়ি পয়েন্টে নিয়মিত গোলাগুলির শব্দ তাদের কানে আসে।

তুমব্রু বাসিন্দা হাফেজ আবদুল হক বলেন, সোমবার সকাল ১০টার পর বেশ কিছুক্ষণ ধরে তুমব্রু রাইট ক্যাম্প ও বাইশফাঁড়ির ওপারে মিয়ানমার অংশ গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসে বাংলাদেশে।

ঢেকুবুনিয়ায় লাল পাতাকা উড়ছে

এদিকে সীমান্তের ৩১ পিলাররের ওপারে ঢেকুবুনিয়া সাবেক বিজিপি ক্যাম্পের অদূরে লাল পতাকা উড়তে দেখেছেন ঘুমধুমের বাসিন্দা ছৈয়দ কাশেম নামে এক বাসিন্দা।

এতোদিন এ পতাকাটি দেখেননি তিনি। রোববার (৩১ মার্চ) সকাল থেকে এ পতাকা উড়তে দেখে অনেকে বলেন, এখানে কিছু একটা হচ্ছে। হয় জান্তা বাহিনীর বিমান হামলা নতুবা জনসাধারণের চলাচলে সংকোচিত করণের জন্যে সতর্কতার জন্যে।

স্থানীয়রা বলেন, বিদ্রোহী আরকান আর্মি ঢেকুবুনিয়ার ব্যাটালিয়নটি দখলে নেয়ার পর এই প্রথম লাল পতাকা উড়তে দেখে এপারের তারা। যা নিয়ে নানা প্রশ্নের দানা বাঁধছে তাদের মনে।

মিনবিয়া টাউনশীপে বিমান হামলা

মিয়ানমার রাখাইন প্রদেশের মিনবিয়া টাউনশীপে (Minbya Towinsip) এর রোহিঙ্গা টাড়াপাড়ায় মিয়ানমার সেনারা ১ এপ্রিল গভীর রাত দেড়টা থেকে MI – 35 যুদ্ধ বিমান হামলা করে। বিমান হামলায় ২৩ জন নারী শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের নিরীহ রোহিঙ্গা নিহত এবং অর্ধ শতাধিক রোহিঙ্গা আহত হয়েছে বলে জানা যায়। এ পাড়ায় গত ১৮ মার্চ মিয়ানমার সেনারা একই কায়দায় বিমান হামলা করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছিল।

উক্ত রোহিঙ্গা পাড়ায় তিন শাতাধিক রোহিঙ্গার বাড়ীঘর রয়েছে বলে জানা যায়। রাখাইন সশস্ত্র বিদ্রোহী গ্রুপ AA উক্ত পাড়ায় অবস্থান নিলে জান্তা সেনারা প্রতিনিয়ত সে গ্রামে আক্রমণ অব্যাহত রেখেছেন বলে সূত্রে জানা যায়।

বিপুল গোলাবারুদ সংগ্রহ জান্তা বাহিনীর

মিয়ানমার রাখাইন প্রদেশের মংডু জেলায় Myin Hlut (মেরুল্লা) নৌবাহিনীর সাবস্টেশন ১ এপ্রিল ভোর সকাল ৫টার দিকে নৌবাহিনীর একটি শীপে করে ইয়াংগুণ সেনা সদর হতে অস্ত্র গোলাবারুদ ও সেনা সদস্য নিয়ে এসেছেন বলে সূত্রে জানা যায়। মংডু কাইন্ডা পাড়া ৫ নং বিজিপির ব্যাটলিয়ান সদরে সেনারা কঠোর নিরাপত্তায় গোলাবারুদগুলো নিয়ে যাচ্ছেন বলেও সূত্রে জানা যায়।

মিয়ানমার রাখাইন প্রদেশসহ অন্যান্য প্রদেশে গত ২৮ মার্চ হতে ১ এপ্রিল পর্যন্ত সেনা ও জাতিগত বিদ্রোহী গ্রুপের মাঝে সংঘর্ষ / যুদ্ধে ৮১ জন সেনা সদস্য নিহত এবং বিদ্রোহী গ্রুপের ২২ জন নিহত হয়েছে বলে জানা যায় । যুদ্ধ চলমান রয়েছেন বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করে।

রোহিঙ্গা নেতা আবদুল কাদের মীর আহমদ, আবু ছিদ্দিক ও মৌলভী অলি আহমদ এমন তথ্য দেন।

Exit mobile version