‘সীমান্ত চোরাকারবারি গডফাদারকেও আইনের আওতায় আনা হবে’

fec-image

পার্বত্য নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত চোরাকারবারী গডফাদারকেও আইনের আওতায় আনা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিজিবি সেক্টর কমান্ডার রামু কর্নেল মো. মেহেদী হোছাইন কবির ।

বুধবার (১৫ মার্চ) সকালে ১১ বিজিবি কর্তৃক আয়োজিত গণসচেতনতামূলক সভায় এ ঘোষণা দেন তিনি।

সেক্টর কমান্ডার আরো বলেন, সীমান্তে অন্যান্য চোরাচালানের পাশাপাশি গবাদি পশু চোরাচালান বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন স্তরের লোকজন এ কাজে জড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে এ কাজে যারা জড়িত তাদের পাশাপাশি গডফাদারকেও আইনের আওতায় আনা হবে। তাদের ছাড় নেই। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সময়ের দুর্যোগ নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত চোরাকারবার, যা রাষ্ট্রের আর্থিক অবকাঠামো ভেঙ্গে ফেলার ষড়যন্ত্র বিশেষ। আজ খামারি বন্ধ হতে চলেছে। এছাড়া এ কারবার দেশের সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট করছে । এসব বন্ধ করতে বিজিবি জীবন উৎসর্গ করেছে। বিশেষ করে গত ১৮ অক্টোবর সীমান্তের ভাল্লুকখাইয়ায় ১১ বিজিবি সীমান্তরক্ষীদের টিম লিডার নায়েক সুবেদার আবদুল মান্নান।

তিনি এক পর্যায়ে বলেন, গত কয়েক মাসে সীমান্তরক্ষীরা সম্প্রতি ১ হাজার ২০০ গবাদি পশু জব্দ করে সীমান্তের এ পয়ন্টে। যা পাচারের ১০ ভাগ মাত্র। বাকিগুলো পাচার হয়ে গেছে। অথচ সরকার চাচ্ছে প্রাণিসম্পদ বাড়াতে। ঝামেলা পাকছে। আর না। এসব থামাতে হবে। এগিয়ে আসুন সবাই। তিনি জনপ্রতিনিধি, সমাজকর্মী,সরকারি-বেসরকারি সকলের সহায়তা কামনা করেন।

সভার সভাপতি ১১ বিজিবি অধিনায়ক লে. কের্নল মো. রেজাউল করিম বলেন, দিন নেই, রাত নেই বিজিবি কাজ করছে চোরাচালান বন্ধে । পাহাড়ে গাজা, আফিম চাষ হচ্ছে। এ সব বন্ধ করতে হবে। সবাই মাদককে না বলুন। তবুও যারা মাদকে জড়িত হবে, তারা দেশের শক্র। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, এ এলাকার মানুষ ভালো, সবাই খারাপ না। তবে যারা মিয়ানমারে টাকা পাচার করে গরু আনছে তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।

১১ বিজিবি অধিনায়ক হেডম্যান- কারবারিদের অনুষ্ঠানে বলেন, জুমিয়ারা জুম চাষ করছেন জীবন ধারণের জন্যে। তবে জুমিয়াদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে অনেক বনদস্যু বনের কাঠ নিধন করছে, তার প্রতি সজাগ থাকতে হবে।

বিশেষ অতিথি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোমেন শর্মা বলেন, ঘরের ভেতর বা অন্যত্র চোরাই পণ্য রাখলে জব্দ করার প্রবিধান রয়েছে। নাইক্ষ্যছড়িতে প্রশাসন কঠোর। কিন্তু অন্য উপজেলাতেও এ ব্যবস্থা করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, ৩৪ বিজিবি অধিনায়ক লে কর্নেল, রামু উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল, বান্দরবান মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক রুহুল আমিন, নাইক্ষ্যংছড়ি হাজী এমএ কালাম সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ওআম রফিকুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও দোছড়ির চেয়ারম্যান মো. ইমরান, নাইক্ষ্যংছড়ি প্রেস ক্লবাের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাঈনুদ্দিন খালেদ, গর্জনিয়ার চেয়ারম্যান মুজিবুল রহমান বাবুল।

সভায় উপস্থিত ছিলেন বাইশারীরর ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম, সদরের চেয়ারম্যান নুরুল আবসার, নাইক্ষ্যংছড়ি প্রেস ক্লাবের আহবায়ক আবদুল হামিদ, রামু প্রেস ক্লাবের সভাপতি নীতিশ বড়ুয়া, সাবেক সভাপতি খালেদ শহীদ, হেড়ম্যান মংনু মার্মা প্রমুখ।

বিকেলে একই মঞ্চে ১১ বিজিবি কর্তৃক আয়োজিত উপজেলার সকল হেডম্যান-কারবারিদের নিয়ে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১১ বিজিবি অধিনায়ক লে কর্নেল মো. রেজাউল করিম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি বলেন, হেডম্যান-কারবারিরা বিজিবির সহায়ক শক্তি। তারা বিজিবিকে অনেক সহায়তা করে আসছে। তিনি তাদের এবং জাতির বিবেক খ্যাত সাংবাদিকদেরকে মাদক ও গরু চোরাচালান বিষয়ে সহায়তা করা করার জন্যে আহবান জানান।

এ সভায় অন্যান্যদের মাঝে আরো উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষার্থী, সচেতন সহল, উপজাতি প্রতিনিধিসহ কয়েকশত মানুষ।

সম্মেলন শেষে হেডম্যান-কারবারিদের জন্যে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আইন, গডফাদার, চোরাকারবারি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন