“বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিরলস প্রচেষ্টায় সীমান্ত সড়ক প্রকল্পটি গুণগত মান নিশ্চিত করে সম্পন্ন করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী প্রধানের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২৪ সালের মাঝামাঝি প্রকল্পটি শেষ করা হবে। ”

সীমান্ত সড়ক: আমূল পরিবর্তনে বদলে যাচ্ছে পার্বত্য অঞ্চলের দৃশ্যপট

সীমান্ত সড়কের পুরো কাজ বাস্তবায়ন হয়ে গেলে পার্বত্যাঞ্চল আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে উঠবে। দেশের অর্থনীতিতে পার্বত্যাঞ্চল নতুন মাত্রা যোগ করবে।

দুর্গমতার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামকে এক সময় পিছিয়ে পড়া অঞ্চল বলা হলেও বর্তমানে এই অঞ্চলে নবযুগের সূচনা হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে সড়ক যোগাযোগে অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে দৃশ্যপট বদলে দিতে বর্তমান সরকার ২০১৯ সাল থেকে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজের সূচনা করে।

সীমান্ত সড়ককে ঘিরে মানুষ এখন নতুনভাবে স্বপ্ন বুনছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, তথ্য প্রযুক্তির, পর্যটন শিল্পের প্রসার এবং জীবনমানের ব্যাপক পরিবর্তনে সীমান্ত সড়ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেই স্থানীয় বাসিন্দাদের আশা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক ইচ্ছায় তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান জেলায় সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কারণে পাহাড়ি জনপদগুলোতে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। সড়ক নির্মাণের কারণে ভারত- বাংলাদেশের মধ্যে স্থলপথে যোগাযোগের ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যর প্রসার ঘটবে তেমনি যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং পর্যটন শিল্পের ব্যাপক উন্নয়ন হবে। পিছিয়ে পড়া এ অঞ্চলটি সমৃদ্ধশালী অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে বলে মনে করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সেনাবাহিনীর কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স এর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের অধীন ১৬, ২০ এবং এডহক ২৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজ পরিচালনা করছে। সীমান্ত সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ১০৩৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে একনেকে ৩১৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রকল্পটির প্রথম পর্যায়ের কাজের মধ্যে ৯৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এবং এ বছরে প্রকল্পটির আরও ১৩২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। যা চলতি বছরের এপ্রিল মাসে শেষ হবে। অবশিষ্ট ৯০ কিলোমিটার কাজ ২০২৪ সালের জুন মাসে সম্পন্ন করা হবে বলেও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়।

রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার মিতিঙ্গাছড়ি এলাকার বাসিন্দা ও ঘিলাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ১, ২, ৩নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য রসনাত্রী ত্রিপুরা বলেন, ‘সীমান্ত সড়ক হওয়ার আগে কেউ অসুস্থ হলে রোগীকে এখান থেকে হাসপাতালে নিতে খুবই কষ্ট করতে হতো। বর্তমানে আমরা দুই ঘণ্টার মধ্যে রাজস্থলী সদর হাসপাতালে রোগীদের নিয়ে যেতে পারি।

গাইন্দ্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পুচিংমং মারমা বলেন, রাজস্থলী উপজেলার মধ্যে সীমান্ত সড়ক হওয়ায় আমরা অত্যন্ত খুশি। এক সময় রাজস্থলী উপজেলা তেমন পরিচিত লাভ করেনি। এখন সীমান্ত সড়কের ফলে রাজস্থলীর প্রত্যেকটা মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে।

ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের মিতিঙ্গা ছড়ি গ্রাম প্রধান, ( কার্বারি) পূন্য চন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, আমাদের এ মিতিঙ্গাছড়ি থেকে রাজস্থলী সদরের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। সীমান্ত সড়ক হওয়ার ফলে সেই দূরত্বে আমাদের অনেকাংশে কমে গেছে। এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা রাজস্থলী সদর থেকে শুরু করে চন্দ্রঘোনা লিচু বাগান ও চট্টগ্রাম এমন কি রাজধানীতে পৌঁছে যেতে পারি।

রাজস্থলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উবাচ মারমা বলেন, সীমান্ত সড়ক হওয়ার কারণে দুর্গম এলাকার জনগণ বর্তমানে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে কৃষিপণ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন জিনিসপত্র রাজস্থলী সদরে এনে বিক্রি করতে পারছে। শুধু রাজস্থলী উপজেলা নয় জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি উপজেলার মানুষও এ সড়কের ফলে উপকৃত হবে। ভবিষ্যতে এই সড়ক পর্যটনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সীমান্ত সড়ক নির্মাণের ফলে স্থানীয়রা যেমন আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠেছেন, তেমনি বর্তমান সরকারের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন তারা।

পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা জোরদার করতে এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী এ সীমান্ত সড়ক তৈরির উদ্যেগ নিয়েছেন। বর্তমানে সীমান্ত সড়ক নির্মাণে সেনাবাহিনী নিজেদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে কাজ করছে।

২৬ ইঞ্জিনিয়ার্স কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচএম মুহায়মিন বিল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের সীমান্তের নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য প্রধানমন্ত্রী সীমান্ত সড়ক প্রকল্পটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে বাস্তবায়নের দায়িত্ব প্রদান করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিরলস প্রচেষ্টায় সীমান্ত সড়ক প্রকল্পটি গুণগত মান নিশ্চিত করে সম্পন্ন করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী প্রধানের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২৪ সালের মাঝামাঝি প্রকল্পটি শেষ করা হবে। প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ এবং এ প্রকল্পে নিয়োজিত সেনা সদস্যদের মনোবল উন্নত করার জন্য সেনাবাহিনী প্রধান ইতোমধ্যে পরিদর্শনে আসেন।

এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এ প্রকল্প চলাকালীন আমরা অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকি। প্রথমত, প্রকল্পটি অনেক দুর্গম এলাকাতে হওয়ায় এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত হওয়াতে সেনাদের কাজ করতে প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়। এছাড়াও এখানে নির্মাণ সামগ্রী এবং শ্রমিকেরও সঙ্কট রয়েছে। এরপরও এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করে সেনাবাহিনী সঠিক সময়ে প্রকল্প সম্পন্ন করবে। সীমান্ত সড়কের পুরো কাজ বাস্তবায়ন হয়ে গেলে পার্বত্যাঞ্চল আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে উঠবে। দেশের অর্থনীতিতে পার্বত্যাঞ্চল নতুন মাত্রা যোগ করবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পার্বত্য অঞ্চল, সড়ক, সীমান্ত
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন