সেনাপ্রধান ইকবাল করিম অবসরে যাচ্ছেন কাল
নিউজ ডেস্ক :
প্রায় চার দশক ধরে যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতায় দেশ-বিদেশে সেনাবাহিনীর মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিদায়ী সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়া। বর্ণাঢ্য সেনাজীবনে বাহিনীর সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদা বৃদ্ধিতে রেখেছেন সবিশেষ ভূমিকা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার অবসরে যাচ্ছেন এ সেনানায়ক।
নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক এনডিসি, পিএসসি। এর আগে তিনি সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
জানা গেছে, চৌকস সেনাবাহিনী গড়তে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা নিয়েছিলেন ইকবাল করিম ভূইয়া। এরই অংশ হিসেবে তিনি সৈনিক ও অফিসারদের প্রশিক্ষণে বিশেষ গুরুত্ব দেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবস্থান যেন আরো মর্যাদাপূর্ণ হয়, সেজন্য গ্রহণ করেন বিভিন্ন পদক্ষেপ। তার এ পদক্ষেপের ফলও পেয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়া গত তিন বছরে সেনা সদস্যদের স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, রেশন, আবাসনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখেন। কাজ করেন সেনা সদস্যদের মর্যাদা উন্নয়নেও। সৈনিক মেসে খাবারের মান উন্নয়ন থেকে শুরু করে সিএমএইচে আরো বেশি সুবিধা নিশ্চিতেও উদ্যোগ নেন।
এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সৈনিক মেসের কিচেন ও ডাইনিং সুবিধাদির আধুনিকায়ন, সদস্যদের রেশন স্কেল বৃদ্ধি, পাস্তুরিত দুধ সরবরাহ, সুষম খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করেন। সিএমএইচে ভর্তি রোগীদের জন্য খাদ্যের তালিকা ও মান বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও তিনি ভূমিকা রাখেন।
সামরিক হাসপাতালগুলোয় প্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণসহ আউটডোর, ডিপার্টমেন্ট, ওয়ার্ড ও শয্যা সংখ্যা এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও জনবল বৃদ্ধিতে তার উদ্যোগ ছিল উল্লেখযোগ্য। সেনাবাহিনীর সব স্তরের সদস্যদের পারিবারিক পেনশনের হার বাড়ানোর ক্ষেত্রেও তার উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
সেনাবাহিনীর জেসিওদের প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার মর্যাদাদানের দীর্ঘদিনের দাবিটি বাস্তবায়ন হয়েছে তার সময়ে। পাশাপাশি সেনা সদস্যদের কর্মস্পৃহা বাড়াতে বীরত্বপূর্ণ-সাহসিকতাপূর্ণ কাজের জন্য নতুন নতুন পদক, এককালীন অনুদান ও ভাতা প্রচলন করেন তিনি। সেসঙ্গে সেনাবাহিনীর এভিয়েশন ইউনিটের বৈমানিকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, কমান্ডো-প্যারাকমান্ডো সদস্যদের উড্ডয়ন ঝুঁকি বীমার আওতায় আনতে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। সর্বোপরি জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে নতুন বেতন-স্কেল প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি।
জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়া ২০১২ সালের ২৫ জুন সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আব্দুল মুবীনের স্থলাভিষিক্ত হন।
জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়া ১৯৫৭ সালের ২ জুন জন্মগ্রহণ করেন কুমিল্লায়। কুমিল্লা জিলা স্কুল এবং ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের ছাত্র ছিলেন তিনি। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন্ড লাভ করেন জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়া। তিনি নবম পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ সালের মে মাসে তিনি পদোন্নতি পেয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হন।
জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়া কুয়েতে দখলদার ইরাকি বাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসংঘ পরিচালিত অপারেশন ডেজার্ট স্টর্মে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। অসামান্য অবদানের জন্য কুয়েত সরকার তাকে ‘লিবারেশন অব কুয়েত মেডেল’ প্রদান করে। তিনি সিয়েরা লিয়নে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে ৪ নম্বর সেক্টর কমান্ডার হিসেবে নেতৃত্ব দেন।
সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূইয়া মিরপুরের ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কমান্ড অ্যান্ড জেনারেল স্টাফ কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েট করেন।